নাজমুল ইসলাম : কোনো ধরনের হয়রানি ও ঘুষ প্রদান ছাড়াই সমুদয় পাওনা বুঝে পাচ্ছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি পাওনা বুঝে পেতে যেতে হচ্ছে না প্রধান কার্যালয়ে। সঠিক সময়ে তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়ে যাচ্ছে পাওনার টাকা।
এজন্য বিআরটিসি একটি সুন্দর নীতিমালা তৈরী করেছে। আর এই নীতিমালা অনুযায়ি প্রতি ৩ মাস পরপর ন্যায্যতা ও অর্থ সংস্থানের ভিত্তিতে অবসরপ্রাপ্তদের ব্যাংকে প্রদান করা হচ্ছে বকেয়া টাকা। বকেয়া টাকার আনুপাতিক হার বিবেচনায় নির্ধারণ করা হয়, কে পাবেন কত টাকা।
গেল সাড়ে তিন বছরে এভাবে চার শতাধিক জনবলের টাকা পরিশোধ করেছে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ।
বিআরটিসির মুখপাত্র কর্নেল মোবারক জুমবাংলাকে বলেন, বিআরটিসির অবসরপ্রাপ্ত ২৯৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আজ (৩ অক্টোবর) দেওয়া হবে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এভাবে প্রতি তিন মাস পরপর দেওয়া হয় প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত। আর এজন্য ঘুষ গুনতে হয় না এক টাকাও, হতে হয় না কোনও হয়রানির শিকার।
বিআরটিসির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, গেল সাড়ে তিন বছরে তারা তাদের জমাকৃত টাকার সমপরিমানের দ্বিগুণ টাকা অর্থ্যাৎ সিপি ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ঘুষ ছাড়াই পেয়েছেন।
তবে তাদের অভিযোগ, পূর্বে এই টাকা নিতে কর্মকর্তারাই প্রস্তাব দিত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা ঘুষ দিলে টাকা মিলবে সহজে।
অবসরপ্রাপ্ত জনবলের বকেয়া পরিশোধের জন্য টাকা আনা হতো অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে। এসব টাকার তিনভাগের একভাগ চলে যেত তৎকালীন কর্মকর্তা ও দালালদের পকেটে। ঘুষ না দিলে ফাইল অনুমোদনের জন্য ফেলে রাখা হতো ২ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত। বর্তমানে তার উল্টো। ফাইলের অনুমোদন মিলছে সর্বোচ্চ ৭ দিনে।
অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোহাম্মাদ আলীর সঙ্গে কথা হয় জুমবাংলার। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ঘুষ ও হয়রানি ছাড়াই গ্র্যাচুইটিসহ সব পাওনা পাচ্ছি। পাওনা বুঝে পেতে আবেদনও করিনি। টাকা নিতে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়েও যেতে হয়নি। ব্যাংকে টাকা পেয়ে যাই। এজন্য নফল রোজা করে শুকরিয়া আদায় করেছি।’
বাস কন্ডাক্টর হিসেবে অবসরে যাওয়া নোয়াখালীর রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার পাওনার ২৭ লাখের ১৯ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছি। আমার ফাইল মাত্র ৭ দিনে অনুমোদন হয়েছে। আমরা বিআরটিসির স্যারদের জন্য দোয়া করি। প্রতি তিনমাস পর আমাদের পাওনা আমাদের ব্যাংকে ঢুকে যাচ্ছে। আগে আমাদের অবসরে গিয়ে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হতো। এখন পাওনা টাকা সহজে বুঝে পেয়ে ভালো আছি।’
বিআরটিসির জেনারেল ম্যানেজার মো: আমজাদ হোসেন জুমবাংলাকে বলেন, ‘সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করায় এটা সম্ভব হয়েছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতার ফলে আয় বৃদ্ধি এবং ব্যয় সংকোচোনের ফলে নিট মুনাফা বেড়েছে। সকল স্তরে দুর্নীতি বন্ধের ফলে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে বিআরটিসি। এই অর্থ থেকে সকল দায় পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।