বৈশাখের প্রখর রোদ আর প্রচণ্ড তাপদাহের মাঝেই বাংলাদেশের উপকূলের বাসিন্দাদের জন্য এসেছে এক নতুন উদ্বেগের খবর—ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’। ২৩ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ। এই ঘূর্ণিঝড়টি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় শক্তি নামক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান।
ঘূর্ণিঝড় শক্তি: কখন ও কোথায় আঘাত হানতে পারে?
ঘূর্ণিঝড় শক্তি বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, মে মাসের ২৩ তারিখ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এটি মূলত শ্রীলঙ্কার দেওয়া নাম। তার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৪ থেকে ২৬ মে’র মধ্যে ভারতের ওড়িশা উপকূল ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী এলাকাগুলোতে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
Table of Contents
তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি খুলনা বিভাগ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। ফলে এই দুই অঞ্চলকে উচ্চ সতর্কতায় থাকতে বলা হয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি প্রথমে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ধীরে ধীরে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে এবং পরে তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে।
বিস্তারিত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এমন দুর্যোগের সংখ্যা ও মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস অনুযায়ী মে মাসে ১ থেকে ৩টি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে যার মধ্যে ১ বা ২টি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য করণীয় ও প্রস্তুতি
উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত। ঘূর্ণিঝড় শক্তি যদি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসে, তাহলে এই অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টি এবং জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, ১৬ থেকে ১৮ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি সার্কুলেশন তৈরি হতে পারে যা ধাপে ধাপে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এই সময়ে উপকূলের মৎস্যজীবী ও নৌযানগুলোকে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সাধারণ জনগণকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, নিয়মিত সর্বশেষ আবহাওয়ার খবর অনুসরণ করার এবং সরকারি নির্দেশনাবলী মেনে চলার। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে এবং জরুরি অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাদ্য, পানি ও অন্যান্য সরবরাহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যান্য আবহাওয়া গবেষণা সংস্থাগুলিও এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও নজর রাখা যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় শক্তি: ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও জলবায়ুর প্রভাব
বছরের এই সময়টাতে দক্ষিণ এশিয়া বরাবরই ঘূর্ণিঝড়প্রবণ থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি ও গতি পরিবর্তিত হচ্ছে। অতীতের মত এবারও ঘূর্ণিঝড় শক্তি যদি নির্ধারিত গতিপথে এগোয়, তাহলে এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলকেও ভয়াবহভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা সমুদ্রের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিকতা এবং বাতাসের গতিপথে পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়গুলো আরও বেশি শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠছে। এই কারণেই ঘূর্ণিঝড় শক্তিকে নিয়ে সরকার, বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে, প্রয়োজনে জাতীয় পর্যায়ের সহায়তা কার্যক্রম চালু করা হবে এবং সেনাবাহিনীও প্রস্তুত থাকবে। জরুরি পরিস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও পানি পরিশোধন প্লান্টগুলো সচল রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় শক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তথ্যভিত্তিক কনটেন্ট শেয়ার করা হচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষ সহজে তথ্য পেতে পারে এবং বিপদে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
FAQs: ঘূর্ণিঝড় শক্তি সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর
ঘূর্ণিঝড় শক্তি কখন সৃষ্টি হতে পারে?
আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৩ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় শক্তি বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে?
মূলত খুলনা বিভাগ ও চট্টগ্রাম উপকূলের উপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘শক্তি’ কে দিয়েছে?
ঘূর্ণিঝড় শক্তি নামটি শ্রীলঙ্কা প্রস্তাব করেছে এবং এটি দক্ষিণ এশীয় আবহাওয়া সংস্থার তালিকা অনুযায়ী গৃহীত হয়েছে।
সাধারণ মানুষ কীভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে?
নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট অনুসরণ করা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত রাখা, এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এটি যদি বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তাহলে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে?
জলোচ্ছ্বাস, ঘরবাড়ি ধ্বংস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয়, এবং কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকার কি কোনো প্রস্তুতি নিচ্ছে?
হ্যাঁ, সরকার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করছে, জরুরি পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করছে এবং জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা প্রস্তুত রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।