জুমবাংলা ডেস্ক: এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলার ধন্দোগাঁও গ্রামে কৃষক ভূষণ-ভানু দম্পতি। গরুর বিকল্প হিসেবে ঘোড়ার ব্যবহার জনপ্রিয় করতে চান তারা।
সরজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার ধন্দোগাঁও গ্রামের কৃষক ভূষণ চন্দ্র ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী ভানু রাণী।
ভূষণ চন্দ্র বলেন, প্রায় এক বছর ধরে ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে আসছি। বাজারে গরুর দাম অনেক বেশি। এক জোড়া হালের গরু কিনতে গেলে খরচ পড়ে লক্ষাধিক টাকা। এ টাকায় অন্তত পাঁচ জোড়া ঘোড়া কেনা যায়।
তিনি আরও জানান, ‘আগে হালের গরু ছিল, এখন নেই। বাজারে গরুর দাম বেশি হওয়ায় কেনার সামর্থ্যও নেই। তাই নিজের চাষাবাদের প্রয়োজনে বাজার থেকে গরুর বদলে ২২ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ঘোড়া কিনেছি। শুধু নিজের জমিতে চাষাবাদ করছি না, অন্যের জমিতেও টাকার বিনিময়ে চাষ করে দিচ্ছি।’
ভূষণ আরও বলেন, ‘প্রথম প্রথম মানুষ অবাক হলেও এখন ভালো সাড়া মিলছে। নিজেরও কাজ হচ্ছে সাথে অন্যেরও। গরুর তুলনায় খরচ অনেক কম। গরুর পালনের চেয়ে ঘোড়া পালন সহজও স্বল্প ব্যয়েরও বটে। তাই আমরা এই পুরোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে উপকার পেয়ে জনপ্রিয় করতে চাইছি।’
কৃষক ভূষণের স্ত্রী ভানু রাণী বলেন, প্রথম দিকে ঘোড়াগুলোকে হালের কসরত শেখাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। ঘোড়ায় লাঙল জুড়ে দিয়ে অনেকবার চেষ্টার পর আয়ত্তে আসে। এখন পুরোদমে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা যায়।
ধন্দোগাঁও এলাকার কৃষক আকবর আলী ও আবদুল কাদের বলেন, ভূষণের ঘোড়া দিয়েই তাদের জমিগুলোতে লাঙল দিতে হয়। এতে খরচও কম লাগে। পুরোনো পদ্ধতি হলেও ভালো হাল দিচ্ছে গোড়া গুলো। একদিকে সময় বাঁচছে, আর অন্যদিকে টাকা। সাথে শ্রমও কম লাগছে। তাই এ গ্রামে ভূষণের ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন অনেকেই তার ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করাচ্ছেন।
পাশের মাস্টারপাড়া এলাকার কৃষক করিমুল ও আজগর আলী বলেন, ‘ঘোড়া দিয়ে হালচাষে জমি গভীরভাবে খনন হয়। পাওয়ারটিলার বা মাহেন্দ্র গাড়ি দিয়ে হালচাষ করলে জমি সমান হয় না। তাই ঘোড়ার হাল দিয়ে জমি সমান করছি। এতে পানি ধরে রাখা সহজ হয়। তাই আমরাসহ অনেকে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছি।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মনতোষ কুমার দে বলেন, কালের স্রোত ও আধুনিক প্রযুক্তিতে ঘোড়া, মহিষ গরু হারিয়ে যাচ্ছে। আর কমে যাচ্ছে এদের ব্যবহারও। তবে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিকভাবে সহজ, স্বল্প ব্যয়ের হালচাষ হিসেবে ঘোড়া সক্ষম। তার প্রমাণ করেছেন ভূষণ-ভানু দম্পতি। তাদের এই চেষ্টা সফল হোক। আবারো প্রকৃতির কল্যাণে প্রাকৃতিক প্রাণীতে ও প্রাকৃতিক কৃষি ফিরে যাই আমরা এটাই আগামীর প্রত্যয় হোক।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ কৃষ্ণ বর্মন জানান, আধুনিক প্রযুক্তির ফলে গরু, ঘোড়া মহিষ ও এদের দিয়ে হালচাষ এখন আর খুব বেশি চোখে পড়ে না। তবে এই পুরোনো প্রাণীদের হালচাষে প্রাকৃতিক কিছু উপকারিতা রয়েছে। সময়, শ্রম ও খরচও কম এদের। তাই এখনও বিলুপ্ত হয়নি এই চাষ পদ্ধতিগুলো। তবে আমরা এই পদ্ধতিতে চাষকে উৎসাহিত করছি কৃষকদের উপকারের জন্য।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, কৃষকেরা এখন যান্ত্রিক উপায়ে জমি চাষ করেন। ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা অপ্রচলিত একটা বিষয়। কৃষি বিভাগ সব সময় আধুনিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে।
তবে এই পদ্ধতি কৃষি ও কৃষকের জন্য খুবই উপকারী ও ভালো। যার দ্বারা কৃষি ও কৃষক উপকৃত হবে বলেও জানান তিনি।-বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।