চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: প্রাণঘাতী করোনারভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রামে। বুধবার রাত পর্যন্ত এই জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৩৭জন আর মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৬ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে হটস্পট ছিল ঢাকা। এরপর সেটা নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার আশেপাশের জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু হঠাৎ করেই ভাইরাসটির দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলিতে।
বুধবার (০৩ জুন) রাতে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রামের তিনটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় একদিনে জেলার ১৪০ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ১৫৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয় ২৯ জনের। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ২২৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭৫ জনের এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩৬ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৮৬ জন চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার এবং ৫৪ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
প্রকাশিত নমুনা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পশ্চিম খুলশী ৩ নম্বর রোডে একই পরিবারের ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী ও ৫০ বছর বয়সী এক নারী, আমিরবাগে একই পরিবারের ৪৭ বছর বয়সী এক পুরুষ এবং ৩৩ ও ৪২ বছর বয়সী দুই নারী, কোতোয়ালীতে একই পরিবারের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী ও ৩৮ বছর বয়সী এক নারী, বন্দর ইস্ট কলোনিতে ৩৭ ও ৪৪ বছর বয়সী দুই পুরুষ, বন্দর এলাকায় একই পরিবারের ৬৬ বছর বয়সী এক পুরুষ ও ৫৬ বছর বয়সী এক নারী এবং হিলভিউ আবাসিক এলাকায় একই পরিবারের ৫২ বছর বয়সী এক নারী ও ৬০ বছর বয়সী এক পুরুষ একই সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
কোতোয়ালী পাথরঘাটার ৪৬ বছর বয়সী এক নারী, গোসাইলডাঙ্গায় ৬৭ বছর বয়সী এক পুরুষ, চান্দগাঁও ওমর আলী মাতব্বর রোডের ১৮ ও ২১ বছর বয়সী দুই তরুণ, চান্দগাঁওয়ের ৩০ ও ৬২ বছর বয়সী দুই পুরুষ, খুলশীতে ৫৩ বছর বয়সী এক পুরুষ, হিলভিউ ৩ নম্বর রোডের ১৯ বছর বয়সী এক পুরুষ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এক ৪৪ বছর বয়সী পুরুষ চিকিৎসক, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে কর্মরত ৩০ বছর বয়সী এক নারী, জিএইচ স্টাফ কোয়ার্টারের ৪১ বছর বয়সী এক পুরুষ এবং কদমতলীর ৩৫ বছর বয়সী এক নারী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন আগ্রাবাদ পশ্চিম বেপারী পাড়ার ২৮ বছর বয়সী এক তরুণী, চকবাজারের ২৩ ও ৩০ বছর বয়সী দুজন পুরুষ ও ৬৩ বছর বয়সী এক নারী, চকবাজার জয়নগরের ৪৩ বছর বয়সী এক নারী, রহমতগঞ্জ লেইনে ২০ বছর বয়সী এক পুরুষ, টেরিবাজারে ৫২ বছর বয়সী এক পুরুষ, মেহেদিবাগে ৪০ বছর বয়সী এক নারী ও ৪৭ বছর বয়সী এক পুরুষ চিকিৎসক, ব্যাটারি গলিতে ৩৪ বছর বয়সী এক পুরুষ, জামালখান লেইনে ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষ, দেওয়ানবাজারে ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষ, হালিশহরে ২৫ ও ৪৭ বছর বয়সী দুই পুরুষ, হালিশহর আই ব্লকে ৪৭ বছর বয়সী এক পুরুষ, সদরঘাটে ৬২ বছর বয়সী এক নারী এবং লালখানবাজারের ৫২ বছর বয়সী এক নারী।
এছাড়া, বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিক এলাকায় ৭৮ বছর বয়সী এক পুরুষ, রেলওয়ে সিআরবি হাসপাতালে ৫৩ বছর বয়সী এক পুরুষ, পোর্ট কলোনি কে-নাইনে ৩২ বছর বয়সী এক পুরুষ, সিম্যান্স হোস্টেলে ৫৪ বছর বয়সী এক পুরুষ, বড়পোল এলাকার ৫৬ বছর বয়সী এক নারী, পোর্ট কলোনির ৩৪ বছর বয়সী এক পুরুষ, একে খান এলাকার ২৬ বছর বয়সী এক তরুণী, পাঁচলাইশ শুলকবহরের ৩০ বছর বয়সী এক পুরুষ, আসকারদিঘির পাড়ের ২৫ ও ৫৭ বছর বয়সী দুজন নারী এবং ৫৫ বছর বয়সী এক পুরুষ, অক্সিজেন এলাকায় ২২ বছর বয়সী এক তরুণী, কালুরঘাটে ২৮ বছর বয়সী এক নারী ও ৩৬ বছর বয়সী এক পুরুষ, ইপিজেডে ২১ বছর বয়সী এক পুরুষ এবং মন্দির কলোনি আই ব্লকে ২৯ বছর বয়সী এক মহিলা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনাভাইরাসে আরও আক্রান্তরা হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫০ ও ৬৫ বছর বয়সী দুই পুরুষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত এক ৪৬ বছর বয়সী চিকিৎসক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে করোনা পরীক্ষার আরটিপিসিআর ল্যাবে কর্মরত ৫১ বছর বয়সী এক পুরুষ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত দুই চিকিৎসক— যথাক্রমে ৩৭ ও ৩৪ বছর বয়সী, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৫ ও ৩৯ বছর বয়সী দুই পুরুষ এবং সিভিল সার্জন অফিসের অজ্ঞাতবয়সী দুই মহিলা।
চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা কুমিল্লাতেও করোনা রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) ওয়েবসাইটে দেওয়া সর্বশেষ (২ জুন) তথ্যানুযায়ী, কুমিল্লায় করোনা রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৮ জনে। ২৯ মে এই জেলায় করোনা রোগী ছিল ৭৫৩জন। চারদিনেই কুমিল্লায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৮৫জন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।