ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাক লাগানো মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন পাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নোমান আল মাহমুদ নিজেও ভাবেননি তার মনোনয়নই চূড়ান্ত হবে।
আজ (২৭ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুল ও খোরশেদ আলম সুজন।
আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিনের মৃত্যুতে শূন্য চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীতার প্রত্যাশায় ছিলেন সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামসহ ২৭ জন।
দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড তাদের মধ্য থেকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদকে।
গত শনিবার সকালে গণভবনে বোর্ডের বৈঠকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয় বলে জানান ক্ষমতাসীন দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।
নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়া প্রসঙ্গে নগর সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, রাজনীতি করে অনেকে অনেক কিছুই পেয়েছেন। কিন্তু নোমান ভাই সেই অর্থে তেমন কিছু পাননি।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে পাওয়ার পর আরো পাওয়ার জন্য লোভ করে, তদবির করে। কিন্তু নোমান ভাই ব্যাতিক্রম। তিনি চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবং চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। প্রায় পাঁচ দশক ধরে তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দলের নিবেদিত এই কর্মির জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজেই এগিয়ে এসেছেন।’
একই আসনের প্রয়াত দুই সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল এবং মোছলেম উদ্দিন আহমদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন নোমান আল মাহমুদ। আজ সেই আসনেই তিনি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নোমান আল মাহমুদ মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় জুমবাংলাকে বলেন, ‘মনোনয়ন আমি পাইনি, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীরাই পেয়েছেন। আমি জয়লাভ করলে তৃণমূলের কর্মীরাই মূলত জয়ী হবে। তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার মূল্যায়ন করেছেন আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
নোমান আল মাহমুদসহ চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র মিলে ৬ জন প্রার্থী।
অন্য প্রার্থীরা হলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, এনপিপির প্রার্থী মোস্তাফা কামাল পাশা, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন, স্বতন্ত্র প্রার্থী পূর্ব ষোলশহর এলাকার মীর মোহাম্মদ রমজান আলী এবং সাতকানিয়ার খাগরিয়ার খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, মোহরা, ষোলশহর এবং বোয়ালখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-৮। এ আসনের দুই বারের এমপি জাসদ নেতা মইন উদ্দিন খান বাদল ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর মারা যান। বাদল আওয়ামী নেতৃত্বাধিন মহাজোটের শরিক দল হয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন।
বাদলের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হলে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমদ সংসদ সদস্য হন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি মোছলেম উদ্দিনও মৃত্যুবরণ করলে এই আসনটির উপনির্বাচন ঘিরে আলোচনায় আসেন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামসহ আরো বেশ কয়েকজন।
শুরু থেকেই আলোচনায় নাছির-ছালাম এগিয়ে থাকলেও তাদের কাউকেই দল চূড়ান্ত করেনি। তবে ছালাম দলীয় মনোনয়ন ফরম নিলেও নাছির নেননি। এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, মোছলেম উদ্দিন আহমদের স্ত্রী শিরিন আহমেদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগনেতা আবদুল কাদের সুজন, সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালামসহ ২৭ জন দলের মনোনয়ন নিয়েছিলেন। তাদের মধ্য থেকে নোমান নৌকা প্রতীকে ভোট করতে যাচ্ছেন।
তিনি নির্বাচিত হলে এক বছরের কম সময় দায়িত্বে থাকবেন, কেননা তার আগেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হবে।
আগামী ২৭ এপ্রিল এই উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে আজ ২৭ মার্চ পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৯ মার্চ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ৫ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ৬ এপ্রিল।
আসনটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭নং ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল, পশ্চিম ও পূর্ব গোমদণ্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, আমুচিয়া ও আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। শুধু বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।