বেশ কয়েক বছর ধরেই ঢাকাই সিনেমার সাফল্য যেন ঈদকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। ঈদ ছাড়া বছরজুড়ে সিনেমা মুক্তি পেলেও তা কেবল মুক্তির জন্যই যেন মুক্তি পাওয়া। নেই ব্যবসায়িক সাফল্য, হয় না আলোচনা। ঈদের মতো উৎসবে মানহীন সিনেমা মুক্তি দিলেও তা উঠে আসে আলোচনায়, ফিরে পায় অক্সিজেন। অথচ ঈদ উৎসবের বাইরে শীর্ষ নায়কদের ছবি মুক্তি পেলেও তা যেন শ্বাসকষ্টে ভোগে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ৫৩ ছবি। মুক্তি পাওয়া এই ৫৩ ছবির মধ্যে ৪০টির নামও বলতে পারবেন না দর্শক। বাকি ১০টির নাম কর গুনে বলতে পারবেন কেউ কেউ। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচটি ছবি বেশ আলোচিত হলেও ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছে দু-একটি! সেই দু-একটিও শাকিব খানের দখলে। মানে ২০২৪ সালে শাকিব খান ছাড়া কোনো নায়ক ব্যবসায়িক সাফল্য দিতে পারেনি ইন্ডাস্ট্রিতে।
বছরের প্রথম মুক্তি পাওয়া সিনেমা ছিল ‘শেষ বাজি’। এরপর পর্যায়ক্রমে ‘কাগজের বউ’, ‘রুখে দাঁড়াও’ ছবিগুলো মুক্তি পায়। যা ব্যবসা তো দূরের কথা; আলোচনাতেই আসতে পারেনি। এরপর মুক্তি পায় দীঘি অভিনীত ‘শ্রাবণ জোৎস্নায়’, অপু বিশ্বাস অভিনীত ‘ট্র্যাপ’ ও ‘ছায়াবৃক্ষ’ এবং জয়া আহসানের ‘পেয়ারার সুবাস’। এসব ছবির বেলাতেও একই দশা।
বছরের শুরু থেকেই ক্রমাগত লোকসানে থাকা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সাফল্যের স্বপ্ন দেখে ঈদুল ফিতরে। এ উৎসবে মুক্তি পায় শাকিব খান-হিমেল আশরাফ জুটির ‘রাজকুমার, মিশুক মনির পরিচালিত ও শরীফুল রাজ অভিনীত ‘দেয়ালের দেশ’। একই নায়কের আরও দুটি ছবি মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘ওমর’ ও গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘কাজল রেখা’। চার ছবির এ উৎসব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য বড় কোনো ব্যবসা এনে দিতে পারেনি।
পরিচালক হিমেল আশরাফের ও প্রযোজক আরশাদ আদনান জানিয়েছিলেন আগের বছরের ব্লকবাস্টার ছবি ‘প্রিয়তমা’-এর ব্যবসাকে ছড়িয়ে যাবে রাজকুমার। কিন্তু না, তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি। তবে ছবিটি বেশ প্রশংসা পেয়েছে। একই সঙ্গে তুমুল প্রশংসা পেয়েছে নতুন পরিচালক মিশুক মনিরের নির্মাণ ‘দেয়ালের দেশ।’ বোদ্ধামহলে এই ছবিটির গল্প বলার ধরন, নির্মাণশৈলী দারুণভাবে সাড়া জাগায়। ঈদে মুক্তি পাওয়া একই সঙ্গে আলোচনায় ছিল কাজলরেখা ও ওমর ছবি দুটিও। তবে একই উৎসবে মুক্তি পাওয়া ‘গ্রিন কার্ড’, ‘মোনা: জ্বীন ২’, ‘মায়া: দ্য লাভ’, ‘লিপস্টিক’ ভাগ্য সহায় হয়নি। দর্শক একদমই টানতে পারেনি ছবিগুলো। এরপর ‘সোনার চর, ‘মেঘনা কন্যা’, ‘আহারে জীবন’, ‘পটু’ সিনেমা হলে মুক্তি পেলেও তা কেবল মুক্তি পেয়েছে। দর্শক ছিল শূন্যের কোঠায়। দুই ঈদের মাঝামাঝিতে মুক্তি পাওয়া ‘শ্যামাকাব্য’, ‘ডেডবডি’, ‘ফাতিমা’, ‘ময়নার শেষ কথা’, ‘সুস্বাগতম’, ‘আন্তঃনগর’ ছবিগুলোও ফ্লপ ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি।
এ বছরের সিনেমায় ব্যবসায়িক সাফল্য আসে শাকিব খানের হাত ধরেই, দেশের শীর্ষ এই নায়কের হাত ধরেই এ বছর সিনেমার বসন্ত ফিরে। কোরবানির ঈদে মুক্তি পায় শাকিব অভিনীত এবং রায়হান রাফি পরিচালিত ‘তুফান’। শুরু থেকে আলোচনায় থাকা সিনেমাটি মুক্তির পরও সিনেমা হলে তাণ্ডব চালায়। বলতে গেলে এই ছবির মাধ্যমেই ঢালিউড বছরের প্রথম ব্যবসায়িক স্বাদ পায়। ঈদ পরবর্তী সময়টাতেও তাই তুফানময়ই ছিল পুরো বছর। তুফান ছাড়াও এই ঈদে ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘ডার্ক ওয়ার্ল্ড’, ‘রিভেঞ্জ’, ‘আগন্তুক’ নামে ছবিগুলোও মুক্তি পায়। কিন্তু কোনোটিই দর্শক টানতে পারেনি।
এ বছর আমদানি করা হয়েছিল চারটি সিনেমা (প্রযোজক পরিবেশক সমিতির তালিকা অনুযায়ী দুটি)। এগুলো হলো ‘হুব্বা’, ‘মি. অ্যান্ড মিসেস মাহি’, ‘ক্রু’ ও ‘স্ত্রী ২’। চারটি ছবির কোনোটিই ব্যবসা করতে পারেনি।
অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে ১৫টি। তার আগে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত ও অনন্য মামুন পরিচালিত ‘দরদ’। এই ছবিটিও আশা জাগিয়ে করেছে হতাশ। অক্টোবর থেকে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘জিম্মি’, ‘শরতের জবা’, ‘বাদশা দ্য কিং’, ‘হৈমন্তীর ইতিকথা’, ‘চরিত্র’, ‘রংঢং’, ‘৩৬ ২৪ ৩৬’, ‘ভয়াল’, ‘দুনিয়া, ‘নয়া মানুষ’, ‘৮৪০’, ‘হুরমতি’, ‘ডেঞ্জার জোন’, ‘মাকড়সার জাল’, ‘প্রিয় মালতী’ কোনোটিও ব্যবসা দিতে পারেনি।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘‘এ বছর শাকিব খানের ‘তুফান’ ও ‘রাজকুমার’ ছাড়া কোনো ছবিই লাভের মুখ দেখেনি। শেষ আশা ছিল ‘দরদ’ নিয়ে। তবে সেটি চরমভাবে হতাশ করেছে।’’
সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিনের ভাষ্য, সিনেমা শুধু মুক্তিই পায় কিন্তু ব্যবসা তো হয় না। আমার দৃষ্টিতে এ বছর একমাত্র ‘তুফান’ ব্যবসা করেছে। আর কোনো ছবি ওই অবস্থানে যায়নি। ‘রাজকুমার’কে মন্দের ভালো বলা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।