রফিকুল ইসলাম, ইউএনবি: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার কমিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জারি করা জাতীয় লকডাউন দেশের পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ব্যাপক বেকারত্ব ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, লকডাউনের সময় বাড়ানো হলে, পরিবহন শ্রমিকদের সহায়তা দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এটি উদ্বেগ ও ক্ষুধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাদের মতে, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ভ্যান, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক চালক এবং তাদের সহকারীসহ প্রায় ৫০-৬০ লাখ শ্রমিক দেশের পরিবহন খাতের সাথে জড়িত।
কিন্তু এখন উপার্জনের পথ হারিয়ে খুব কঠিন সময় পার করছেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পের জন্য দেয়া প্যাকেজের মতো এবং কয়েক মাসের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফসহ তাদেরও একটি তহবিল সরবরাহ করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ ইউএনবিকে বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে দেশের পরিবহন খাতের মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষই অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের পরিবহন খাতে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। দেশে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ভ্যান, থ্রি-হুইলারসহ প্রায় ৪ লাখ যানবাহন রয়েছে, যেখানে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক এ খাতের সাথে জড়িত। কিন্তু পরিবহন শ্রমিক এবং মালিক উভয়ই এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।
তিনি আরও বলেন, করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সরকার পোশাক শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ‘পরিবহন খাতে সংকট কাটাতে আমরাও তাদের মতো প্রণোদনা প্যাকেজের দাবি জানাই।’
‘অনেক পরিবহন মালিক তাদের প্রতিদিনের উপার্জন থেকে ব্যাংক ঋণের কিস্তি প্রদান করেন। তবে এখন তাদের আয়ের কোনো উৎস নেই। তারা কীভাবে বাঁচবে? সরকারের উচিত ব্যাংক সুদ মওকুফ করা,’ যোগ করেন এনায়েত উল্লাহ।
বাংলাদেশ সড়ক-পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য লীগের সভাপতি এসএম শাহ আলম ইউএনবিকে বলেছেন, গণপরিবহন বন্ধের কারণে বাসের মালিক ও শ্রমিক উভয়ই এখন চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পরিচালিত আমাদের সমিতিতে তালিকাভুক্ত প্রায় ১ হাজার ৬০০টি বাস রয়েছে। এখানে কাজ করতেন প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক। কিন্তু এদের বেশিরভাগই দিনমজুরের মতো কাজ করায় তারা সবাই এখন বেকার।’
শাহ আলম আরও জানান, তারা প্রতিদিন একটি বাস থেকে প্রায় ৪০০০ টাকা আয় করতেন, যেখানে একজন শ্রমিকের আয় ছিল ৫০০-১০০০ টাকা। কিন্তু এখন তা শূন্য।
ঢাকা জেলা সড়ক-পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের (ডিডিআরটিভিডব্লিউইউ) সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাচ্চু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য পরিবহন শ্রমিকদের একটি তালিকা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিলেও, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কেউই পরিবহন খাতের কর্মী বা তাদের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেননি।
তিনি জানান, কেবল ঢাকাতেই বাস, ট্রাকসহ প্রায় ৪০ হাজার গাড়ি রয়েছে এবং এ খাতের সাথে জড়িত প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের (বিআরটিডাব্লিউএফ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাজাহান খান বলেন, সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক পরিবহন খাতের সাথে জড়িত, যাদের বেশিরভাগই দিনমজুর। এখন তারা তীব্র আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন।’
প্রতিটি জেলায় শ্রমিকদের একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলেও জানান সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
‘তালিকাটি সম্পন্ন হয়ে গেলে দ্রুতই জেলা প্রশাসকদের তত্ত্বাবধানে পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হব,’ যোগ করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।