জুমবাংলা ডেস্ক : ১৯৬৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তার নামেই চলত চলচ্চিত্র। কোনো ছবিতে তিনি আছেন, এটা শুনেই ভিড় হতো দর্শকের। তার অভিনয় ঝলকানিতে মুগ্ধ ছিল তামাম দর্শক। তিনি কাঁদলে চোখ ছলছল করত কোটি মানুষের। তিনি হাসলে হাসত সবাই। মানুষের আবেগে তিনি যতটা ভাগ বসিয়েছেন, অন্য কেউ তা পারবে না কোনোদিন! কারণ তিনি শাবানা। কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি জয় করে নিয়েছেন কোটি দর্শকের মন। পেয়েছেন রেকর্ডসংখ্যক ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আজ এই গুণী অভিনেত্রীর জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
চলচ্চিত্রে ৩০ বছর ধরে শাবানা রাজত্ব করেছিলেন। একাধারে এতটা সময় রাজত্ব আর কোনো তারকা করতে পারেননি। তার অভিনীত সিনেমার সংখ্যা ২৯৯টি। ক্যারিয়ারে নাদিম, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসীম, সোহেল রানার সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দেন জনপ্রিয় অনেক ছবি। ১৩০টিতে শাবানার বিপরীতে নায়ক ছিলেন আলমগীর। শাবানার স্বামী ওয়াহিদ সাদিক বলেন, ‘আলমগীরের সঙ্গে আমাদের দারুণ সম্পর্ক। বলা চলে, তিনি আমাদের পরিবারেরই সদস্য। আমাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ সিনেমায় তিনি অভিনয় করতেন। তাদের জুটি সবার কাছে জনপ্রিয় ছিল।’
অভিনেতা সোহেল রানা বলেন, ‘আমার প্রথম প্রযোজিত সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’-এ শাবানা অভিনয় করেছিলেন। আবার আমরা একসঙ্গে অনেক সিনেমা করেছি। অনেক হিট সিনেমা আছে আমাদের। শিল্পী হিসেবে তিনি অসাধারণ। কেউ বলতে পারবেন না, শাবানা কারও সঙ্গে অহংকার দেখিয়েছেন কখনো। এমনই গুণবতী শাবানা। তার মধ্যে বেশি ছিল সরলতা। এ জন্যই বোধহয় অনেককে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছিলেন। যার জন্য মানুষ আজও তাকে মনে রেখেছে।’ শাবানাকে নিয়ে একই কথা বলেছেন অভিনেত্রী রোজিনা। তিনি বলেন, ‘শাবানা আপার সঙ্গে আমার সবই সুখের স্মৃতি। তার মতো শিল্পীর সঙ্গে কাজ করাটা ছিল আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। তার সঙ্গে কোনো মন্দ স্মৃতি নেই। একজন সহশিল্পী হিসেবে খুব সম্মান দেখাতেন। ব্যক্তিমানুষ হিসেবে বলব- শাবানা আপা একজন মিশুক টাইপের মানুষ। আপন করে নেওয়ার বড় একটি গুণ রয়েছে তার। কাউকে ছোট করতে দেখিনি কখনো।’
শাবানার প্রথম ছবি ‘নতুন সুর’-এ নায়ক-নায়িকা ছিলেন রহমান ও রওশন আরা। ওই সময় তিনি ছিলেন একেবারে শিশু। এভাবেই চলচ্চিত্রে তার আবির্ভাব। ‘নতুন সুর’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬২ সালের ১৬ নভেম্বর। ছবির পরিচালক ছিলেন এহতেশাম। এর পর ১৯৬৬ সালে শাবানার যথার্থ উত্থান ঘটে ‘আবার বনবাসে রূপবান’ ছবির মাধ্যমে। এই ছবিতে তিনি রূপবানের কন্যা ‘সোনাভান’ চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে শাবানার নায়ক ছিলেন কাশেম। ‘আবার বনবাসে রূপবান’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৬ সালের ৮ এপ্রিল। পরিচালক ছিলেন ইবনে মিজান। ১৯৬৭ সালের ‘জংলী মেয়ে’ ও ‘চকোরী’ ছবি দুটি শাবানাকে দিয়েছিল আকাশচুম্বী খ্যাতি। ‘জংলী মেয়ে’ ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন আজিম। এটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৭ সালের ১৯ মে। এর পর ১৯৬৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল শাবানার ‘ছোটে সাহেব’ ছবিটি। মুস্তাফিজ পরিচালিত এটি ছিল উর্দু ভাষায় নির্মিত একটি ছবি। নায়ক ছিলেন নাদিম। আর একই বছরে উর্দু ভাষায় তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছিল ‘চকোরী’ ছবিটি, যা শাবানার খ্যাতি পৌঁছে দিয়েছিল সুদূর করাচি, পিন্ডি, পেশোয়ার, কোয়েটা, মারী পর্যন্ত। এই ছবির মাধ্যমে শাবানার পারিবারিক নাম আফরোজা সুলতানা রত্না থেকে হয়ে যায় শাবানা।
১৯৭৩ সালে সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন শাবানা। এর পর দুজন মিলে প্রতিষ্ঠা করেন এসএস প্রোডাকশন। ১৯৯৭ সালে হঠাৎ করেই তিনি চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেন। ২০০০ সালে সপরিবারে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। শাবানা-সাদিক দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তারা হলেন- সুমি, ঊর্মি ও নাহিন। বড় মেয়ে ফারহানা সাদিক সুমি এমবিএ, সিপিএ পাস করে চাকরি করতেন। পরে তার দুই বাচ্চাকে দেখাশোনার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে সাবরিনা সাদিক ঊর্মি বিশ্বখ্যাত ইয়েল ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে শিকাগোর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন। একমাত্র ছেলে শাহীন সাদিক নাহিন নিউজার্সির রাদগার্স ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ সম্পন্ন করে এখন সেখানকার স্বনামধন্য ব্লুমবার্ড কোম্পানিতে কর্মরত।
কী কারণে হঠাৎ অভিনয় ছেড়েছিলেন লাখো দর্শকের প্রিয় এই তারকা? সেই কথা জানান শাবানার স্বামী প্রযোজক ওয়াহিদ সাদিক। তিনি বলেন, ‘শৈশব থেকে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল শাবানা। নিজেকে সে সময় দিতে পারেনি। তাই অভিনয় ছেড়ে এখন নিজের মতো করে সময় কাটাচ্ছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প এখনো শাবানার বিদায়ের ক্ষত সেরে উঠতে পারেনি। শাবানা অভিনয় ছাড়ার পর ঢাকাই চলচ্চিত্রের এমন দুরবস্থা হবে, কেউ কল্পনাও করেনি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।