রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা। কিন্তু লেপকাঁথার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলে তা বোঝার উপায় নেই। বাইরে তখনো ঘোর কুয়াশা। দেখে মনে হচ্ছে, বুঝি বা সকালই হয়নি।
এমন শীত, কুয়াশা উপেক্ষা করে ধান রোপনের জন্য জমি তৈরি করছিলেন সামিউল ও মেহেদুল। মইয়ের ওপর বড় গামলায় মাটির ভার তুলে দিয়ে টানছিলেন তাঁরা।
জমিটির আবাদকারী সামিউল। তিনি বললেন, গরুর হাল কেনার মতো টাকা নেই। তাই জমি সমান করার জন্য এভাবে মই দিচ্ছেন।
সামিউল জমিটির আবাদকারী হলেও এটি তিনি ইজারা নিয়েছেন। মালিক অন্যজন। আর মেহেদুলকে সাহায্যকারী হিসেবে কাজে নিয়েছেন সামিউল।
মেহেদুল বললেন, আজ তিনি সামিউলের কাজ করে দিচ্ছেন। আরেকদিন সামিউল তাঁর কাজ করে দেবেন। এভাবে পরস্পরের ধার শোধ করবেন তাঁরা। এ জন্য এ ধরনের কিষানকে ‘ধারাল কিষান’ বলা হয় এলাকায়।
শুধু সামিউল আর মেহেদুল নন, সারা দেশের মতো গাইবান্ধায় মহাসমারোহে চলছে বোরো ফসল রোপনের মৌসুম। শীত, কুয়াশা উপেক্ষা করে চলছে জমি তৈরি, বীজ তোলা, বীজ রোপণ, সার দেওয়া ও সেচসহ নানা কাজ।
সামিউল ও মেহেদুল জানান, এবার সারের সংকট রয়েছে। রয়েছে শ্রমিকের ঘাটতিও। তবে সব উপেক্ষা করেই চলছে কাজ। দেশে ধান রোপনের সবচেয়ে বড় মৌসুম এটা। এখন তো হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই।
ওই দুই কৃষক কাজ করছিলেন পলাশবাড়ী উপজেলার কুমারগাড়ী গ্রামে। এই গ্রামের দক্ষিণপ্রান্তে ছাতিয়ানতলা বাজার। এখানে সার ও কীটনাশক বিক্রি করেন সোফায়েল আহমেদ। সেখানে গিয়ে সার সংকটের সত্যতা মিলল।
সোফায়েল জানান, এখনো বাজারে সারের সরবরাহ কম। এ সংকট দ্রুত কাটাতে হবে। না হলে বোরো উৎপাদন কমবে।
এই দোকানে সার কিনতে আসা কৃষক মফিজুর রহমান ও কাশেম সরকার বললেন, সরবরাহে ঘাটতির কারণে সারের দামও বেশি। এত টাকা খরচ করে পরে কি পোষাবে?
ছাতিয়ানতলা বাজারের আরেকটু দক্ষিণেই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ডুমুরগাছা গ্রাম। এই গ্রামের কৃষক শামসুল আলম দুলু। তিনি নিজের জমিতে আবাদ করার পাশাপাশি সেচযন্ত্র ও ট্রাক্টরও চালান।
শামসুল বলেন, তাঁর এখন হাঁফ ছাড়ার টাইম নেই। তিনি নিজের জমিতে সেচের পাশাপাশি প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে সেচ দেন। ফজরে উঠে সেচমেশিন চালু করে দিয়ে তিনি হাল নিয়ে বের হন। পাশাপাশি নিজের কাজও করতে হয়।
এই কৃষক আরও বলেন, এখন শুধু তাঁর নয়, কারোই বসে থাকার সুযোগ নেই। মাঘের মাঝামাঝি থেকেই দেশে বোরো ফসল রোপনের উৎসব শুরু হয়। দেশে সবচেয়ে বেশি ধান উৎপন্ন হয় এই মৌসুমেই। ফলে শীত, কুয়াশা দেখার সময় নেই। জমিতে নামতেই হবে, ফসল ফলাতেই হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।