জুমবাংলা ডেস্ক : অনেকের কাছেই চশমা ছাড়া দুনিয়াটা আঁধার! কারণ চোখের জ্যোতি খানিকটা কমে গেলে নিশ্চয়ই স্বচ্ছভাবে কিছুই দেখা সম্ভব নয়। আর এজন্য প্রয়োজন পড়ে চশমার। এছাড়াও রোদ, ধুলা বালি থেকে মুক্তি পেতে রোদচশমা না হলেই তো চলাফেরায় দায়। তবে কখনো কি ভেবে দেখেছেন এই চশমা কীভাবে আবিষ্কৃত হলো। সর্বপ্রথম কে চশমা তৈরী করেছিলেন তার নাম এখনো অজানা-
মানুষ প্রথমে কাঁচ আবিষ্কার করে, তারপর লেন্স। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ সালের মানুষ কাঁচের লেন্স ব্যবহার করত বিবর্ধক হিসেবে, আগুন জ্বালাতে। মধ্য গগনের সূর্য রশ্মিকে পূর্ণ আভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে তারা আগুন জ্বালাতো শুকনো পাতায়, জমিয়ে রাখা খড়ে। আতশ কাঁচ আবিষ্কারের আগে মানুষ আগুন জ্বালাতো চকমকি পাথর ঠুঁকে অথবা শুকনো দু’খণ্ড কাঠ ঘঁষে। সামান্য আগুন জ্বালাতে তাদের হাতে কড়া পড়ে যেত।
১২৮০ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে প্রথম চোখের চশমা আবিষ্কার করেন আলেস্যান্দ্রো ডেল্লা স্পিনা এবং স্যালভিনো ডেলগি আরমাটি। আরমাটি আলোর রিফ্ল্যাকশান নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এতে তার চোখে কিছুটা সমস্যা হয়। তিনি এক পর্যায়ে আবিষ্কার করেন দুই খন্ড কনভেক্স লেন্স বা উত্তল লেন্সের ভিতর দিয়ে তাকালে বেশ ভালো ভাবে দেখা যায়। উত্তল লেন্স বস্তুর আকার বিবর্ধিত করে দেখতে সাহায্য করে। তিনি ক্ষীণদৃষ্টির চিকিৎসায় উত্তল লেন্স ব্যবহার করতে পরামর্শ দিতে শুরু করলেন।
১৪০০ সালের দিকে ক্ষীণ দৃষ্টির চিকিৎসায় উত্তল লেন্স পুরোদমে ব্যবহার হতে লাগলো। পোপ দশম লিও চশমা পরিধান করতেন। ১৫১৭ সালে রাফালেলের আঁকা প্রতিকৃতিকে দেখা যায় পোপ লিও দশমের চোখে চশমা। চার্চ প্রথম দিকে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের বিপক্ষে ছিলো। তারা বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে সহজে মেনে নিতো না। এখন যেমন আধা শিক্ষিত মুসলিম হুজুররা বিজ্ঞান নিয়ে কটাক্ষ করে, তখনকার দিনে চার্চের শিক্ষিত যাজকেরা সেটাই করতো। কোপারনিকাসকে চার্চ পুড়িয়ে মারে। বৃদ্ধ গ্যালিলিও গ্যালিলিকে তারা নতজানু হয়ে চার্চের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য করে।
কেন জানেন? তারাই প্রথম বলেছিলেন সূর্য নয় পৃথিবী ঘোরে। প্রথম দিকে কোয়ার্টজ কাঁচ ঘষে উজ্জ্বল করে চোখের চশমা তৈরী করা হতো। ষোড়শ শতাব্দীতে কাঁচশিল্পে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। ফলে চশমা শিল্পেও তার হাওয়া লাগে। সাধারণ কাঁচ থেকে চশমা তৈরি শুরু হলো। আর কাঁচ তৈরি হয় বালি থেকে। বাংলাদেশের বালিতে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকায় ভালোমানের কাঁচ উৎপাদন সম্ভব নয়। আয়রনের কারণে উৎপাদিত কাঁচ নীলচে রঙ ধারন করে।
চট্টগ্রামের ওসমানি গ্লাস ইন্ডাসট্রিতে চাঁদপুরের বালি ব্যবহার করে কাঁচ উৎপাদন করা হয়। বাকি কোম্পানিগুলো চীন থেকে কাঁচ শিল্পের কাঁচামাল বালি আমদানি করে থাকেন। উত্তল এবং অবতল লেন্স মিলিয়ে যে চশমা প্রস্তুত করা হয় তাকে বলা হয় বাইফোকাল লেন্স। এই চশমা ব্যবহার করে কাছে দেখা ও দূরে দেখা দুই ধরনের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ১৭৬০ সালে আমেরিকার উদ্ভাবক বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন বাইফোকাল চশমা আবিষ্কার করেন।
খুব বেশী দিন আগের কথা নয়। বাঙালী শিক্ষিত সমাজের সাজের পোষাকে থাকত কাঁধে ভাঁজ করা চাদর, চোখে চশমা, হাতে হাত ঘড়ি, পকেটে কলম। চশমা এখন বিলাসিতার সামগ্রী নয়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষ হয়েছে উন্নত আর তাদের রুচিতেও এসেছে পরিবর্তন। তাই ফ্যাশনে চশমার কদরও দিন দিন বাড়ছে। তাই তো পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে ফ্যাশনপ্রেমী মানুষেরা তাদের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই করে দিচ্ছেন চশমাকে।
আচ্ছা, তাহলে সানগ্লাস কী? কালো চশমা-ই বা আবার আলাদা নামকরণ কেন?
সানগ্লাসের বাংলা নাম রোদচশমা। যদিও বাংলাটা আমাদের তেমন ব্যবহার করা হয় না! রোদচশমা নামটা শুনে প্রথমেই রোদে পরার জন্য যে চশমা ব্যবহার করা হয় তাকেই সানগ্লাস বা রোদচশমা বলা হয়। এটা মনে হলেও বিষয়টা তা নয়। রোদকে আটকানোর জন্য রোদচশমার প্রচলন হয়নি। একটি বিশেষ কারণেই চৈনিক নির্মাতারা ধোঁয়াচ্ছন্ন লেন্সের চশমা প্রথম তৈরি করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।