চাঁদের বুক থেকে তথ্য পাঠাতে শুরু করেছে জাপানের মুন স্নাইপার নামের ল্যান্ডার। জাপান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সা জানায়, স্লিম চন্দ্রযানের সোলার প্যানেল চালু হয়েছে। জাপানি এই চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণ করে ১৯ জানুয়ারি। সফলভাবে অবতরণ করলেও স্লিমের সোলার প্যানেল ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা নিয়ে ছিল সংশয়। এই সংশয় এখন কেটেছে অনেকটা।
জাক্সার বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, দ্য স্মার্ট ল্যান্ডার ফর ইনভিস্টিগেশন মুন বা স্লিমের সোলার প্যানেল কাজ না করলে মাত্র কয়েক ঘন্টা পরে অকেজো হয়ে পড়বে ল্যান্ডারটি। কারণ ব্যাটারির সাহায্যে কয়েক ঘন্টার বেশি চলার সক্ষমতা ছিল না এর। তবে এখন এসব জল্পনা-কল্পনার অনেকটা অবসান ঘটেছে।
চাঁদ থেকে ইতিমধ্যেই অনেক তথ্য পাঠিয়েছে ল্যান্ডারটি। তাহলে কি সোলার প্যানেল ঠিক হয়ে গেছে? এখনও অবশ্য নিশ্চিত করে তা বলেনি জাক্সা। তবে ঠিক হওয়ার কথা, অন্তত পরোক্ষ তথ্য-প্রমাণ তাই বলছে। সোলার প্যানেল কাজ না করলে ৪ দিন পরে চাঁদ থেকে এটি তথ্য পাঠাতে পারার কথা নয়। কারণটা আগেই বলেছি, ব্যাটারির সাহায্যে মাত্র কয়েক ঘন্টা চালু থাকতে পারত ল্যান্ডারটি।
এর আগে জাক্সা এমন অনুমানের কথাই জানিয়েছিল। ১৯ জানুয়ারি তারা বলেছিল, ‘ল্যান্ডারটি যেভাবে অবতরণ করার কথা, তাতে এর কোনোরকম ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম। হয়তো সূর্যের আলো ল্যান্ডার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি এখনও। ল্যান্ডারে আলো পড়লেই চালু হবে সোলার প্যানেল।’ তথ্য পাঠানো এ অনুমানের সত্যতার ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
ল্যান্ডারটির চন্দ্রপৃষ্ঠে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ১০০ মিটারের মধ্যে অবতরণ করার কথা ছিল। সে জন্য এই ল্যান্ডারকে জাপান ‘মুন স্নাইপার’ আখ্যা দিয়েছিল। অর্থাৎ জাক্সার ভাষ্যে, স্নাইপারের নিখুঁত গুলির মতো ল্যান্ডারটিও গিয়ে নামবে নিখুঁত লক্ষ্যে, নিখুঁতভাবে। কিন্তু আসলেই এটা লক্ষ্যে নামতে পেরেছে কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জাক্সা জানিয়েছে, নিশ্চিত হতে আরও প্রায় ২ মাস লাগবে।
নির্দিষ্ট লক্ষে অবতরণ করতে পারলে এটা হবে মানবজাতির জন্য এক বিশাল অর্জন। কারণ এর আগে যে চারটি দেশ চাঁদে ‘সফলভাবে’ অবতরণ করেছে, তাদের কেউ নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্দিষ্ট স্থানে ল্যান্ডিং করাতে পারেনি। বরং তাদের ল্যান্ডার নির্দিষ্ট লক্ষ্যের কাছাকাছি কোনো জায়গায় অবতরণ করেছে। ঠিক কাছাকাছি কোন জায়গায় অবতরণ করবে, তা অবতরণের আগে বোঝার উপায় ছিল না। জাপান এই প্রথম নিজেদের ইচ্ছায় নির্দিস্ট স্থানে ল্যান্ডার অবতরণ করাতে পেরেছে বলে আশাবাদী জাপানি বিজ্ঞানীরা।
এখানে ‘সফলভাবে’ অবতরণের বিষয়টিও একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। ল্যান্ডিং কয়েকরকম আছে। ক্র্যাশ ল্যান্ডিং বিষয়টা সবার জানা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যেকোনো উড়োযান বা নভোযান যখন মুখ থুবড়ে পড়ে, সেটাকে বলে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং। বাংলায় বলা যায় অনিয়ন্ত্রিত অবতরণ।
কিন্তু আংশিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোনো উড়োযান বা নভোযান যখন আছড়ে পড়ে, তখন সেটাকে বলে হার্ড ল্যান্ডিং। অর্থাৎ চালকের হাতে এখনো কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আছে, তবে পুরোটা নেই। এটাকে অস্বাভাবিক অবতরণ বলতে পারেন চাইলে। আর একদম ঠিকঠাক অবতরণ করলে সেটাকে বলা হয় সফট ল্যান্ডিং বা স্বাভাবিক অবতরণ। ইতিমধ্যেই বলেছি, জাপানের মুন স্নাইপার সফলভাবে অবতরণ করেছে।
এই মিশনের উদ্দেশ্য চন্দ্রপৃষ্ঠের খনিজ পাথর পরীক্ষা করা। আধুনিক ছবি প্রসেস করার প্রযুক্তি রয়েছে এই ল্যান্ডারে। এ প্রযুক্তির সাহায্যে শিওলি নামে একটি গর্তের মাটির ছবি তুলে পাঠাবে ল্যান্ডারটি পৃথিবীতে। সেই ছবি পরীক্ষা করে চাঁদসহ মহাবিশ্বের জন্মরহস্য বোঝার চেষ্টা করা হবে। এ মিশনে খরচ হয়েছে ১৮ বিলিয়ন ইয়েন। যা প্রায় ১২০ মিলিয়ন ডলারের সমান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।