প্রায় ২০০ বছর আগে এমন এক গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, যা আজকের গুজব ছড়ানোর প্রচেষ্টাকে লজ্জা পাইয়ে দিতে পারে যেকোনো হিসেবেই। মানুষ বিশ্বাস করে বসেছিল অবিশ্বাস্য (এবং আজকের হিসেবে হাস্যকর) সেই গুজব। এর কারণটা বোঝা অবশ্য কঠিন নয়। এ গুজবের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হয় একজন খাঁটি জ্যোতির্বিদকে। নাম তাঁর উইলিয়াম হার্শেল।
হ্যাঁ, নামটি পরিচিত ঠেকার কারণ আছে। এ নাম আপনি শুনেছেন আগেও। নিজেই এক টেলিস্কোপ তৈরি করেন তিনি তারা দেখার জন্য। ১৭৮১ সালের ১৩ মার্চ রাতের আকাশে তাঁর চোখে পড়ে খানিকটা ভিন্ন দেখতে এক মহাজাগতিক বস্তু। কয়েক রাত নিবিঢ় পর্যবেক্ষণের পর তিনি বুঝতে পারেন, এটি আসলে গ্রহ। একটা নতুন গ্রহ। সেই গ্রহটি আজ আমাদের কাছে ‘ইউরেনাস’ নামে পরিচিত। হ্যাঁ, ইউরেনাসের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্শেলের নাম জড়িয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ড করা হয় ১৮৩৫ সালে।
সে বছরের আগস্টে নিউইয়র্কের দ্য সান সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় ছয় পর্বের একটি ধারাবাহিক নিবন্ধ। তাতে সবিস্তার বর্ণনা দেওয়া হয় উইলিয়াম হার্শেলের সাম্প্রতিক আবিষ্কারের। আবিষ্কারটি কী? চাঁদের বুকে পাওয়া গেছে সভ্যতা! খুলে বলছি।লেখাটির লেখকের নাম ছিল ড. অ্যান্ড্রু গ্র্যান্ট। বলা হয়, তিনি হার্শেলের ভ্রমণসঙ্গী। তাঁর কলমে জানা যায়, বিশাল এক টেলিস্কোপ তৈরি করেছেন হার্শেল। প্রায় ৭ মিটার বা ২৩ ফুটের এই টেলিস্কোপে খুঁটিয়ে দেখেছেন চাঁদ।
ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্বে উঠে আসে হার্শেলের অবিশ্বাস্য আবিষ্কার। জানা যায়, চাঁদের বুকে আছে বিশাল সমুদ্র, সুউচ্চ পর্ব। আছে ইউনিকর্ন, বিভার এবং দুই পা ও ডানাবিশিষ্ট মানুষের মতো দেখতে প্রাণী ‘ম্যান-ব্যাট’! (দ্য বিগ ব্যাং থিওরি সিরিজটি দেখে থাকলে আপনি হয়তো জানেন, ম্যান-ব্যাট আর ব্যাটম্যান এক নয়!) দেখতে তারা কেমন, এ নিয়ে সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল ইলাস্ট্রেশনও।
গুজবের উল্টোপিঠের ঘটনাটা মজার। লেখাটির আসল লেখক ছিলেন সাংবাদিক রিচার্ড অ্যাডামস লক। বহুকাল পরে তিনি এ লেখা লিখেছেন বলে স্বীকার করে নেন। টমাস ডিক নামে একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটা বই লিখে দাবি করেছিলেন, শক্তিশালী টেলিস্কোপ আবিষ্কৃত হলে চাঁদের বুকে পাওয়া যাবে সভ্যতা। সেটা যে হাস্যকর ভাবনা, তা নিয়ে বিদ্রূপ প্রকাশ করতেই এ লেখা লেখেন রিচার্ড।
সে জন্য লেখকের নাম হিসেবে বেছে নেন ‘অ্যান্ড্রু গ্র্যান্ট’—বলা বাহুল্য, এ নামে বাস্তবে আসলে কেউ নেই। শুধু নামই দেননি, তাঁকে হার্শেলের ভ্রমণসঙ্গী হিসেবেও উল্লেখ করেন সে লেখায়। মানুষ সেই ‘স্যাটায়ার’ বা বিদ্রূপধর্মী লেখাকে বাস্তব ভেবে নিয়েছিল। রীতিমতো সাড়া পড়ে গিয়েছিল দুনিয়াজুড়ে। লোকে সত্যি ভেবে বসেছিল, চাঁদে আবিষ্কৃত হয়েছে সভ্যতা। আবিষ্কর্তার নাম যেহেতু উইলিয়াম হার্শেল, যিনি কি না কদিন আগেই আবিষ্কার করেছেন আস্ত একটি গ্রহ—তাঁর নাম জড়িয়ে বলায় এ লেখার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও তোলেনি কেউ।
পরে দ্য সানও বিষয়টি স্বীকার করে নেয়। তারাও আসলে এমন কিছু ঘটবে, তা আশা করেনি। শেষের আগে আপনার জানা কথাটিই আবার বলি। কেউ কিছু বললে বা ফেসবুকে ছবি দেখলেই তা চট করে বিশ্বাস করে ফেলবেন না। একটু খুঁজে দেখুন, সত্যতা যাচাই করুন। ইন্টারনেটের বদৌলতে গোটা বিশ্বের সব জ্ঞান উন্মুক্ত আপনার সামনে। প্রায় ২০০ বছর আগের মানুষের মতো বোকামি করার এখন আসলে কোনো মানে নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।