১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। চাঁদের মাটিতে নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন যখন হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন, ঠিক তখন কমান্ড মডিউল কলাম্বিয়াকে চাঁদের কক্ষপথে চালিয়ে যাচ্ছেন পাইলট মাইকেল কলিন্স। তখন মহাকাশে তিনি একেবারেই নিঃসঙ্গ, একা। তাঁর এই আত্মত্যাগ—চাঁদের এত কাছে গিয়েও চাঁদে না নেমে ফিরে আসা, কমান্ড মডিউলের দেখভাল করা—এটাই বাকি দুজনকে চাঁদে নামার সুযোগ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। চাঁদের মাটিতে নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন যখন হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন, ঠিক তখন কমান্ড মডিউল কলাম্বিয়াকে চাঁদের কক্ষপথে চালিয়ে যাচ্ছেন পাইলট মাইকেল কলিন্স। তখন মহাকাশে তিনি একেবারেই নিঃসঙ্গ, একা।
ইগলে চেপে নীল ও বাজ কলাম্বিয়ার ফিরে আসার আগ পর্যন্ত চাঁদের চারপাশে ১২ বার পাক খান তিনি। মৃদু একঘেয়ে যান্ত্রিক শব্দ ছাড়া কোথাও আর কোনো শব্দ নেই। সেই সময়ের অনুভূতি কলিন্স বর্ণনা করেছেন তাঁর ক্যারিয়িং দ্য ফায়ার নামের আত্মজীবনীতে। স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেছেন, প্রতিবার তিনি যখন চাঁদের উল্টো পিঠে যাচ্ছিলেন, তখন পৃথিবীর সঙ্গে সব যোগাযোগ একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। ‘আমি তখন সত্যিকার অর্থেই একা। সত্যিকারের কোনো জীবন্ত সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন।’
চাঁদের এই ঐতিহাসিক অভিযানে যে তাঁকে এভাবে নিঃসঙ্গই থাকতে হবে, তা আগে থেকেই জানতেন তিনি। অ্যাপোলো-১১-এর অভিযাত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর কলিন্সকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাঁর দুই সঙ্গী যখন চাঁদের মাটিতে ঘুরে বেড়াবে, তখন তাঁকে নিঃসঙ্গ ঘুরতে হবে চাঁদের কক্ষপথে।
সে কারণে তিনি হতাশ কি না। কলিন্স জবাবে সোজাসাপ্টা বলেছিলেন, ‘আমি যদি বলি যে তিনটি সিটের মধ্যে আমার সিটটাই সবচেয়ে ভালো, তাহলে সেটা মিথ্যা বলা হবে, নয়তো বোকার মতো কথা হবে। কিন্তু এই অভিযানে তিনটি সিটই গুরুত্বপূর্ণ।
আমিও চাঁদের মাটিতে নামতে চাই, কে না চায়? কিন্তু এই সমন্বিত অভিযানের একটা অংশ আমি। সবকিছু সত্ত্বেও এ অভিযানে যেতে পেরে আমি খুশি। অভিযানের ৯৯.৯ শতাংশ পথ আমি যাব, কিন্তু তাতে আমি মোটেও হতাশ নই।’ এই হলেন অ্যাপোলো-১১-এর আত্মত্যাগী অভিযাত্রী মাইকেল কলিন্স। চাঁদের কক্ষপথে বসে তিনি অসংখ্য ছবি তুলেছেন, করেছেন সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁরা রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে চলে যান। সেখানে ১৯৪৮ সালে স্কুল শেষ করেন কলিন্স। ১৯৫২ সালে মিলিটারি সায়েন্সে ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। উন্নত ফাইটার বিমান চালানোর প্রশিক্ষণের জন্য তাঁকে নেভাদা এয়ারফোর্স ঘাঁটিতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া পারমাণবিক বোমা হামলা চালানোরও প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
এরপর পৃথিবীর বুকে ফিরে আসেন তিন নভোচারী। এভাবে কোনো দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই সফল হয় অ্যাপোলো-১১-এর চন্দ্র অভিযান। কিন্তু চাঁদের একেবারে কাছে গিয়েও চাঁদের মাটি ছুতে না পারার আক্ষেপ ভুলতে পারেননি মাইকেল কলিন্স। সেই কষ্ট নিয়েই হয়ত ২৮ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে গেলেন মাইকেল কলিন্স।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।