Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home চাপে প্রলোভনেও সোচ্চার জাফরুল্লাহ
    মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার

    চাপে প্রলোভনেও সোচ্চার জাফরুল্লাহ

    জুমবাংলা নিউজ ডেস্কJuly 19, 202112 Mins Read
    Advertisement

    এনাম আবেদীন: দেশে ব্যাপক আলোচিত নাম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কেউ মনে করেন তিনি রাজনীতিবিদ, কারো কাছে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের রূপকার, আবার কেউ মনে করেন, তিনি সমাজের সব অসংগতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।

    কিন্তু এই প্রতিবাদ যখনই কোনো ব্যক্তি বা দলের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তখনই তারা একে ‘পাগলামি’ বলে আখ্যায়িত করে। ষাটের দশকে ঢাকা মেডিক্যালের ছাত্র থাকা অবস্থায় সেই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন তথা ‘পাগলামি কর্মকাণ্ড’ করে বসেন ডা. জাফরুল্লাহ। বর্তমান সময়েও তাঁর ‘সত্য বচন’ অনেকের কাছে পাগলামি বলে মনে হয়।

    জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে ভূমিকা পালন করায় এবং করোনার টিকা নিয়ে কথা বলায় জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে ছিল আওয়ামী লীগ। আবার এখন তারেক রহমানকে দুই বছরের জন্য রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়ায় তাঁর কর্মকাণ্ডকে অপছন্দ করছে বিএনপি। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এসব ঘটনা দমাতে পারেনি। যে চেতনা ও সাহস তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার যেমন তাগিদ জুগিয়েছে, তেমনি দূরদর্শী প্রতিভা তাঁকে নিয়ে গেছে নতুন নতুন উদ্ভাবনী ভাবনা ও পরিকল্পনার দিকে। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ, পরিবার পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে লাইগেশন সার্জারির উদ্ভাবন এবং এরশাদ আমলে জাতীয় ঔষধ নীতি প্রণয়নের মতো কাজ তিনি করতে পেরেছিলেন। লন্ডনে নিজের পাসপোর্টে আগুন লাগিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার প্রতিবাদ জানানোর ইতিহাসও তিনি।

    বাংলাদেশে সম্ভবত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীই একমাত্র ব্যক্তি, মুক্তিযুদ্ধের পর যাঁর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ দেশের বেশির ভাগ রাজনীতিকের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু ওই সম্পর্ক ব্যবহার করে ডা. জাফরুল্লাহ ব্যক্তিগত বা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন এমন উদাহরণ কেউ দিতে পারবেন না।

    ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ভাষায়, ‘অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদই হচ্ছে ডা. জাফরুল্লাহর জীবনের চালিকাশক্তি। তাঁকে এই সমাজের বাতিঘরও বলা যায়। কেননা মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু গত পাঁচ দশকের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। প্রতিবাদী ও একজন সংগঠকের ভূমিকায় আমরা তাঁকে দেখি।’

    সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নন। তিনি যখন যা-ই বলেন সেটি তাঁর বিবেচনাবোধ থেকে। নিজের স্বার্থ বা উপার্জনের কথা চিন্তা করে তিনি কথা বলেন না। সত্য বলায় শুভাকাঙ্ক্ষীদের কোনো নিষেধও তিনি শোনেন না।’

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক মনে করেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে অসাধারণত্ব আছে এবং তিনি সঠিক ও সত্য কথাই বলেন। এই সত্যের হিসাব যখন কারো অপছন্দ হয়, তখনই তারা পাগলামির প্রসঙ্গটি ভাবতে থাকে।’ তিনি বলেন, তাঁর মতো সাহসী ও প্রতিবাদী মানুষকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির লোক না বলাই ভালো। কারণ তিনি জন-আকাঙ্ক্ষার দিকে তাকিয়ে সহজ-সরলভাবে মত প্রকাশ করে থাকেন।

    সম্প্রতি কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে জাফরুল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণসহ স্বাধীনতা-পরবর্তী কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করতে গিয়ে কার্যত রাজনীতিকেই ধ্বংস করেছে। এ জন্য দেশে হিংসা-বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে। রাজনীতি থেকে এই হিংসা-বিদ্বেষ দূর করার জন্য আমি এখনো দুই দলের মধ্যে এটা সমঝোতার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছি না। এক দল আমলা তাঁকে ঘিরে রেখেছে।’

    জাফরুল্লাহ জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ দেখা হয়েছিল। এর আগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর এবং ডা. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পরও তিনি শেখ হাসিনার বাসায় গিয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত নেতাকর্মীদের চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা নিজেই তাঁকে ডেকে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন বলেও জানান ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক বিভাজনের এই সময়ে একজন অভিভাবকের বড় অভাব।’

    এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসানোয় নেপথ্যে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রয়াত ফয়েজ আহ্মদ। এর পরের কয়েক দশকে প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে দুই নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। তাঁর মৃত্যুর পর দুই নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকা সর্বশেষ মানুষটি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলে অনেকে মনে করেন। কারণ দুই নেত্রীর সঙ্গে তাঁর একাধিকবার দেখা হয়েছে, বৈঠকও করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে যায় এমন কথা বলে আবার তাঁদের বিপদে পাশেও দাঁড়িয়েছেন। এরশাদ আমলে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন আবার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন। যদিও বর্তমান রাজনৈতিক বৈরিতা দূর করতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তিনি সফল হতে পারেননি। তবু থেমে নেই। অদম্য এই মানুষটি ৮০ বছর বয়সেও রাজনীতিসহ জাতীয় প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে তত্পর রয়েছেন, প্রতিবাদ করছেন।

    গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুই দফা খোলা চিঠি দিয়ে আলোচিত হয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ। যদিও ওই চিঠির বিষয়ে দুই নেত্রীর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

    প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ডা. জাফরুল্লাহর কিছু মতামত ও তত্পরতাকে ‘পাগলামি’ বলে অভিহিত করেছেন। দু-একটি লেখায় তাঁকে ‘বিএনপির অভিভাবক’ বলেও অভিহিত করেন তিনি।

    এর মূল কারণ হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে ভূমিকা পালন করেছিলেন জাফরুল্লাহ। কিন্তু এই জাফরুল্লাহর পরামর্শেই যে ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়া কেক কাটা বন্ধ করেছেন সেটি অনেকেরই জানা নেই। শুধু তা-ই নয়, খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত বিএনপি নেতাদের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু নেতাদের একটিই কথা ছিল, পত্রিকায় হেডিং করার বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে শেখ হাসিনা আসছেন। তাঁর অনুরোধ উপেক্ষিত হলে তিনি গুলশান কার্যালয় ত্যাগ করেন। পরে কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হলে শেখ হাসিনা সেদিন ফিরে যেতে বাধ্য হন।

    ওই দিন খালেদা জিয়া খবর দিয়ে জাফরুল্লাহকে ডেকে নিলেও শেষ পর্যন্ত উপস্থিত গুলশান কার্যালয়ে কর্মকর্তারা তাঁকে দেখা করতে দেননি। বলা হয়েছিল, তিনি ঘুমিয়ে আছেন। এ প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, ‘ওই ঘটনার বেশ কিছুদিন পর খালেদা জিয়া আবারও আমাকে ডেকে পাঠান। সেদিন গিয়ে আমি ফিরে এসেছি বলে জানালে খালেদা জিয়া বলেন, আপনি এসেছিলেন এ কথা আমাকে কেউ জানায়নি।’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াও আমাকে বলেন, পত্রিকায় হেডিং করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁকে বলেছি যে সেটা হয়তো সত্য। কিন্তু আপনি তখন বলতে পারতেন যে আমার ছেলে তারেককে আমার কাছে এনে দেন। তাহলে আপনিই হেডিং হয়ে যেতেন।’

    তারেক রহমানের বদলে তাঁর স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান অথবা তাঁর মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে বিএনপির নেতৃত্বে আসার পরামর্শ দেওয়ায় ইদানীং জাফরুল্লাহর কর্মকাণ্ডকে আড়ালে পাগলামি বলছেন বিএনপির অনেকেও। অথচ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে ভূমিকা পালনের জন্য সরকারের কাছে এই জাফরুল্লাহই আবার ব্যাপকভাবে সমালোচিত (কারো কারো মতে শত্রুও)। ঐক্যফ্রন্ট করার কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলা এবং মামলা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু এসবের থোড়াই কেয়ার করেন ডা. জাফরুল্লাহ। এখনো তিনি সরকারের বিরুদ্ধেও বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধেও বলেন। সর্বশেষ গত ২৬ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে ছাত্রদলের কয়েক নেতার বাধার মুখে পড়েন জাফরুল্লাহ। অথচ এ নিয়ে তাঁর বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘ওরা ছেলে মানুষ, কী বলেছে এটা বড় বিষয় নয়।’

    জাফরুল্লাহ জানান, যত দিন তিনি বেঁচে থাকবেন, তাঁর চোখে ধরা পড়া অসংগতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে যাবেনই। কারণ তাঁর হারানো বা চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তাঁর ভাষায়, ‘অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী দলকানা হয়ে গেছেন। আবার যাঁরা আছেন, তাঁরা উদ্যোগী নন। সাহস হারিয়ে গেছে। হতাশ। বলছেন, এ দেশে আর কিছু হবে না। কিন্তু শূন্যতা পৃথিবীর ধর্ম নয়। পরিবর্তন হঠাৎ করেই হবে।’

    ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রজীবন থেকেই প্রতিবাদী। তাঁর বাবার শিক্ষক ছিলেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেন। ষাটের দশকে ঢাকা মেডিক্যালে ছাত্র থাকার সময়ই সেই মেডিক্যালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে জাফরুল্লাহ আলোচিত হন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এফআরসিএস চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করেই লন্ডন থেকে তিনি ভারতে চলে আসেন। সেখানে আগরতলা মেলাঘরে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ডা. এম এ মবিনের সঙ্গে মিলে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য সেখানেই ৪৮০ শয্যার ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করেন।

    দেশের মানুষকে কম পয়সায় চিকিৎসা দিতে সাভারে আজকের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালটি স্বাধীনতার পর তিল তিল করে তিনি গড়ে তোলেন। হাসপাতালটির নাম ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ দিয়েছেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কেন্দ্রটির জন্য ৩১ একর জমি বরাদ্দ তাঁরই দেওয়া। বাংলাদেশ আজকে যে ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ এটি ডা. জাফরুল্লাহর অবদান। এরশাদ সরকারের সময়ে ১৯৮২ সালে তাঁরই প্রণীত ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ ওই নীতির ফলে চাহিদার ৯০ শতাংশ ওষুধই এখন দেশে তৈরি হচ্ছে এবং বাংলাদেশ আজ একটি ওষুধ রপ্তানিকারণ দেশ।

    কিন্তু বিড়ম্বনার বিষয় হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাফরুল্লাহর আজ সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। অথচ এরশাদ আমলের ঔষুধ নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় বিএনপি সরকারের সময় ১৯৯২ সালে তত্কালীন বিএমএ তাঁর সদস্য পদ বাতিল করে। এমনকি ওই সময় তাঁর ফাঁসি চেয়ে পোস্টারও লাগানো হয়।

    জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারকে এ বিষয়ে তিনি উৎসাহিত করেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে তিনি প্রস্তাব করেন যে প্রথমে পুরুষদের বন্ধ্যাকরণ করতে হবে। কিন্তু তার এ প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু হাসতে হাসতে উড়িয়ে দেন। পরে তিনি লাইগেশন সার্জারির উদ্ভাবন করেন। তাঁর এসংক্রান্ত পেপারটি বিশ্ববিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে মূল আর্টিকল হিসেবে ছাপা হয়। ১৫০ বছরের মধ্যে এটিই প্রথম কোনো বাঙালির ল্যানসেটে ছাপা আর্টিকল। স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৮৫ সালে তিনি বিকল্প নোবেল খ্যাত র্যামন ম্যাগসেসাই পুরস্কার লাভ করেন।

    ডা. জাফরুল্লাহর প্রণীত স্বাস্থ্যনীতি দেশে-বিদেশে এতটাই প্রশংসিত হয় যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী তাঁকে আমন্ত্রণ করে ভারতে নিয়ে যান এবং ভারত কিভাবে ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে তার পলিসি নির্ধারণ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন।

    এ প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সম্ভবত ১৯৮৮ সালের দিকে তিনি কয়েকবার আমাকে খবর পাঠান। পরে ভারতের তত্কালীন হাইকমিশনার সাভারে গিয়ে আমাকে অনুরোধ করেন। তিনি আমার জন্য টিকিট ও ভিসা সঙ্গে নিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পর বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে বোম্বাই গেলে সেখান থেকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে আমাকে দেশটির সংসদ ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।’ তিনি বলেন, অনেক আলোচনার পর ভারতের স্বাস্থ্য সেক্টরে উন্নয়নের একটি পলিসি আমি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের আগেই রাজীব গান্ধী মারা যান। পরে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ঢাকায় আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।

    ডা. জাফরুল্লাহর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের গল্পটিও রোমাঞ্চকর। ওই সময় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার প্রতিবাদে লন্ডনের হাইডপার্কে যে কয়েকজন বাঙালি তাঁদের পাসপোর্ট ছিঁড়ে আগুন লাগিয়ে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিলেন তাঁদের একজন তিনি। ফলে ভারতীয় ভিসার জন্য তখন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে তাঁকে ‘রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে’র প্রত্যয়নপত্র জোগাড় করে নিতে হয়।

    মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণের বিষয়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ থেকে জানা যায়, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ডা. এম এ মবিনের লন্ডনে এফআরসিএস পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহ আগে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। তাঁরা পরীক্ষা বাদ দিয়ে ভারতীয় ট্রাভেল পারমিট জোগাড় করে দিল্লিগামী প্লেনে চড়ে বসলেন। “প্লেনটি ছিল সিরিয়ান এয়ারলাইনসের। দামাস্কাসে পাঁচ ঘণ্টা প্লেন লেট, সব যাত্রী নেমেছে। ওরা দুজন আর প্লেন থেকে নামে না। ভাগ্যিস নামেনি। এয়ারপোর্টে পাকিস্তানি এক কর্নেল উপস্থিত ছিল ওই দুজন ‘পলাতক পাকিস্তানি নাগরিককে’ গ্রেপ্তার করার জন্য। প্লেনের মধ্য থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না, কারণ প্লেন হলো ইন্টারন্যাশনাল জোন।” পরে সিরিয়ান এয়ারপোর্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন ওঁদের জন্যই প্লেন পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল।

    জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আগরতলায় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। তাঁর ব্যাপারে খুব আগ্রহ ছিল।’ স্বাধীনতার পর বেশ কয়েকবার জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দাওয়াত করে নিয়ে যান রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। জাফরুল্লাহকে সরাসরি মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেন; কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, আপনি দেশ স্বাধীন করতে শাহ আজিজুর রহমান ও শফিউল আযমদের (সচিব) বুদ্ধি লাগেনি। তাহলে দেশ চালাতে এই স্বাধীনতাবিরোধীদের লাগবে কেন? জিয়াউর রহমান তখন দেশের প্রয়োজনে ‘অ্যাকোমোডেটিভ’ (সবাইকে নিয়ে) রাজনীতির কথা বলে যুক্তি দেন। পাশাপাশি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে এ-ও বলেন যে আপনারা সমালোচনা করবেন অথচ দায়িত্ব দিলে সেটি নিতে চাইবেন না।

    জিয়ার স্মৃতিচারণা করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমার মা হাসিনা বেগমকে একবার বেশ ধরেছিলেন জিয়াউর রহমান। তো সব মা-ই চায় ছেলে মন্ত্রী হোক। আমি বিপদে পড়ে গেলাম। পরে আমাকে মন্ত্রী করা হলে কী কী অসুবিধা হবে তার ফিরিস্তি তুলে ধরে উনাকে (জিয়াকে) চার পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখেছি। পরে আরো বহুবার দেখা হয়েছে, সব সময় একই কথা বলতেন, আই গিভ ইউ দ্য ব্লাংক চেক। যেকোনো মন্ত্রণালয় দিতে রাজি আছেন। মন্ত্রী না হতে চাওয়ায় একসময় কিছুটা দূরত্ব হলে পরে তিনি আবার ডেকে পাঠাতেন।’

    অবিস্মরণীয় ঘটনা হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির দুই দিন আগে ১৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এবং ১৯৮১ সালের ৩০ মে নিহত হওয়ার দুই দিন আগে ২৮ মে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল জাফরুল্লাহ চৌধুরীর।

    ১৩ আগস্ট সাভারে লোক পাঠিয়ে বঙ্গবন্ু্ল ডেকে নেন ডা. জাফরুল্লাহকে। বলেন, ‘ডাক্তার, তুমিই ঠিক। সমাজতন্ত্রই আমাদের পথ। আমি তোদের সবাইকে নিয়ে করতে চাই।’ কিন্তু জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু, আপনি তো পুঁজিবাদে বিশ্বাস করেন।’

    সেদিন কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুকে জাফরুল্লাহ জানালেন, তাঁর বিদেশি স্ত্রী বিলাতে অসুস্থ। অথচ তাঁকে বিলাতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কে যেতে দিচ্ছে না বঙ্গবন্ধু জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তখনকার দিনে বিদেশে যেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র প্রয়োজন হতো। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে ওখানে বসেই তাঁর সচিব টি হোসেনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তিপত্র আনার ব্যবস্থা করেন। তখন জাফরুল্লাহ আরেক সমস্যার কথা জানিয়ে বললেন, লন্ডনে গেলে টাকার সমস্যা হবে না। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য ১০ পাউন্ড দরকার হবে, যা তাঁর কাছে নেই। এটা কারা দেয় বঙ্গবন্ধু জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ বলেন বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকে ফোন করে ১০ পাউন্ড জোগাড় করে জাফরুল্লাহর হাতে দেন। বলেন, ‘যাও, বউকে দেখাশোনা করে ফিরে এসো।’

    ১৪ আগস্ট জাফরুল্লাহ চৌধুরী লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। ১৫ আগস্ট তিনি হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগেই সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। সেদিনের পরিস্থিতি বর্ণনা করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বিমানবন্দরে নামতেই দেখি ‘মি. চৌধুরী মি. চৌধুরী’ বলে মাইকে কে যেন চিত্কার করছে। হাত তুলতেই লন্ডনের গণমাধ্যমের অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলেন। জানতে চাইলেন, ‘মিস্টার চৌধুরী, ইউর প্রাইম মিনিস্টার হ্যাভ বিন কিলড। হোয়াট ইজ ইউর রি-অ্যাকশন!’ তিনি জানান, চোখ দিয়ে কখন পানি বের হলো, টের পাইনি। মাত্র এক দিন আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে চার ঘণ্টা গল্প করেছি। বললাম, ‘হি পেইড দ্য ন্যাশন উইথ হিজ ওউন ব্লাড (তিনি নিজের রক্ত দিয়ে জাতির ঋণ পরিশোধ করে গেলেন)’ এটাই পরদিন লন্ডনের সব পত্রিকায় হেডিং হয়েছিল—জানালেন ডা. জাফরুল্লাহ।

    জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডেরও ঠিক এক দিন আগে ১৯৮১ সালের ২৮ মে বঙ্গভবনে তাঁর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল ডা. জাফরুল্লাহর। ওই দিন প্ল্যানিং কমিশনের একটি বৈঠকে আন-অফিশিয়াল সদস্য হিসেবে ডা. জাফরুল্লাহকেও ডাকা হয়। জাফরুল্লাহ পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা তুলে সেদিন বলেছিলেন, মানুষ বাড়ছে কি কমছে এ জন্য জন্ম-মৃত্যুর হিসাব থাকা দরকার। জিয়াকে তিনি এ-ও বলেন, তাঁর সরকারের কোনো জবাবদিহি নেই। মাদক, মদ ও সিগারেট নিরুৎসাহ করতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করলে জিয়া খেপে গিয়ে বলেন, ‘আমি তো সিগারেট খাই না। মদ, সিগারেট খায় আপনার বন্ধু এনায়েতউল্লাহ (প্রয়াত সাংবাদিক এনায়েতউল্লাহ খান)।’

    সেদিন বঙ্গবভবন থেকে চলে আসার সময় তত্কালীন এনএসআই প্রধান মেজর জেনারেল মহব্বতজান চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হয় জাফরুল্লাহর। অভিযোগ করে মহব্বতজান বলেছিলেন, চট্টগ্রাম যাওয়ার বিষয়ে তাঁদের নিষেধাজ্ঞা প্রেসিডেন্ট শুনছেন না। ‘প্রেসিডেন্টকে বোঝানোর দায়িত্ব আপনাদের’ এমন কথা বলে সেদিন বঙ্গভবন ত্যাগ করেছিলেন জাফরুল্লাহ। পরদিন ২৯ মে বিমানের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রামে যান জিয়াউর রহমান। ৩০ মে এক দল সেনা সদস্যের হাতে তিনি নিহত হন।

    বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান দুটি হত্যাকাণ্ডেরই এক দিন আগে তাঁর সঙ্গে এই দেখা হওয়ার ঘটনাকে নিজের জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘একইভাবে আমার সঙ্গে সাক্ষাতের কিছুদিন পর রাজীব গান্ধীও বোমা বিস্ফেরণে নিহত হলেন!’

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    Related Posts
    Rana Sharkar

    সংবিধান যখন বইয়ের পৃষ্ঠা, রাজপথ তখন নিরাপত্তার চিহ্ন!

    July 14, 2025
    জিএম কাদের

    মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে: জিএম কাদের

    July 14, 2025
    সোহাগ হত্যা

    ‘আবু সাঈদ হত্যা আ. লীগকে ধ্বংস করেছিল, আর সোহাগ হত্যায় বিএনপির মসনদও ধ্বংস হচ্ছে’

    July 13, 2025
    সর্বশেষ খবর
    Saheb Bhattacharya video viral link

    Saheb Bhattacharya Viral Link: Why You Should Avoid Clicking on Suspicious Videos Circulating Online

    writwik mukherjee viral video

    Writwik Mukherjee Viral Video Sparks Online Ethics Debate: What You Need to Know

    Soudi

    মুদি দোকানে তামাক পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করলো সৌদি

    Archita Phukan Real VIRAL Video

    Archita Phukan Viral Video Original: What You Must Know to Stay Safe Online

    Jamaat

    জামায়াতের সমাবেশে অংশ নেবে ১০ লাখের বেশি নেতাকর্মী, ১০ হাজার বাস রিজার্ভ

    bd-bank

    অতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভন: লেনদেনে সতর্ক করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

    AI Chef

    দুবাইয়ে এআই শেফ ‘আইমান’ নিয়ে আসছে ‘উহু’ রেস্তোরাঁ

    Football

    এক ম্যাচে দুই মাঠ, শান্তির হ্যাটট্রিকে জয় বাংলাদেশের

    Malaysia

    মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বড় সুখবর

    salahuddin

    জুলাই অভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.