জুমবাংলা ডেস্ক: আজ ১৫ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-হানাদার মুক্ত হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও পূবাইল। টানা চার দিন যুদ্ধ শেষে পাক-হানাদাররা মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
এ যুদ্ধে নিহত হয় প্রায় শতাধিক পাক সেনা। বিজয়ের একদিন আগে এ এলাকা হানাদার মুক্ত হলেও তারা আগুন জ্বালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয় বহু গ্রাম, নির্বিচারে হত্যা করে শত শত মানুষকে আর ইজ্জত কেড়ে নেয় অনেক মা-বোনের। ওইদিন অনেকেই মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ও পুত্র-কন্যা হারা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুজ্জামান লিয়াকত, আতাউর রহমান মাস্টার ও কালীগঞ্জ থানার তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদরুজ্জামান খসরু জানান- সে সময়ে টঙ্গী থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত একমাত্র রেলপথ ছাড়া যোগাযোগের আর কোন মাধ্যম ছিলো না। তাই পাক বাহিনী সর্বশেষ তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে পূবাইল রেল স্টেশন ও তার আশপাশসহ পূর্ব দিকে কালীগঞ্জের সীমানা বালু নদীর ব্রিজ পর্যন্ত এলাকা জুড়ে। ফলে ওই এলাকার বহু গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পাক সেনারা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কালীগঞ্জের বাড়িয়া গ্রামটি। পাক হানাদার বাহিনী এদেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় ওই গ্রামে ঢুকে শতাধিক নারী পুরুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এর প্রধান কারণ ছিল- গ্রামটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল উল্লেখযোগ্য হারে।
এছাড়াও ভাদুন, ছোট কয়ের, সোড়ল, নয়ানীপাড়া, সাপমাড়া, পূবাইল বাজারসহ কালীগঞ্জের কয়েকটি গ্রাম পুড়িয়ে দেয়।
এভাবে বিজয়ের ২ মাস আগে থেকে শুরু হয় কালীগঞ্জ, পূবাইল এলাকায় পাক-হানাদারদের বর্বর অত্যাচার, হত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও। এই সকল নির্যাতনের শেষ হিসেবে ১১ ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় মিত্র বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় নরসিংদী থেকে রেলযোগে কালীগঞ্জে ঢুকতে শুরু করে। ১২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় এই স্থানের সরাসরি যুদ্ধ। ১৪ ডিসেম্বর কালীগঞ্জের বান্দাখোলা এলাকা থেকে গ্রুপ কমান্ডার বদরুজ্জামান খসরু এবং উপজেলার বিভিন্নস্থানে দায়িত্বে থাকা আলী হোসেন, খন্দকার মুঞ্জু, আজিজ, বাতেন মোল্লার গ্রুপ ও রূপগঞ্জের একটি দল ভারতীয় বাহিনীর সাথে একত্রিত হয়ে পূবাইলে অবস্থিত পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয়। পরে মুক্তি ও মিত্র বাহিনী স্থায়ী ভাবে পাক হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্যে তারা অবস্থান নেয় কালীগঞ্জের নলছাটায়। এদিকে গ্রুপ কমান্ডার বাতেনের দল অবস্থান নেয় নলছাটা থেকে বাড়িয়া হয়ে তিতারকুল পর্যন্ত এলাকা জুড়ে। তারা জয়দেবপুর অর্ডিন্যান্সে অবস্থানরত পাক সেনাদের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ওঁৎ পেতে থাকেন।
ওই অবস্থায় একটানা ৪ দিন মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর মর্টার শেল ও তোপ কামানের আক্রমনে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় পাক সেনাদের পূবাইল ঘাঁটি। এতে নিহত হয় প্রায় শতাধিক পাক সেনা। পরে ১৫ ডিসেম্বর পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.