জুমবাংলা ডেস্ক : সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ’র চালকের স্ত্রী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মা’রা গেছেন। তার মৃ’ত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ।
পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- মাসুম দুই বাচ্চার মা হারানোর কান্না কোনভাবেই সহ্য করা যাচ্ছে না। মা হারানোর কান্না আশপাশে বড় বেশী আঘাত করেছে। কবিরের দুই শিশু সন্তানের এই কান্না সবাইকে শোকার্ত করেছে। আমার গাড়ির ড্রাইভার কবির। তার স্ত্রী আসমার হঠাৎ জ্বর এবং বমি হয়। তাকে ঢাকার ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু সনাক্ত করেন।
চিকিৎসা হচ্ছিল কয়েকদিন থেকে। আজ বিকাল সাড়ে ৫টায় তার মৃ’ত্যু হয়। সে বাঁচতে পারেনি। সুস্থ হয়নি।ভর্তির পর থেকে ডাক্তাররা বলছিলেন কয়েককদিন পর ভালো হয়ে বাসায় চলে যেতে পারবে। গতকাল থেকে তার অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়। শরীরে পানি আসে। ব্লাড প্রেশার কমে যায়। গতরাতে কিছুটা উন্নতি হয়।আজ সকাল থেকে খারাপ। বিকালে মৃ’ত্যু। আসমার বয়স বেশি ছিল না। পরিবার বলছে ৩০/৩১ হবে। বড় মেয়ে আমার রোদশীর চেয়ে কিছু ছোট। ছেলে বিস্ময়ের কাছাকাছি। পড়াশুনায় বাচ্চারা ভালো। মা তাদের স্কুল-পড়াশুনার দায়িত্ব পালন করতো।
কবির সারাদিন আমার সঙ্গেই থাকত। হয় সুনামগঞ্জ না হয় ঢাকায়। হাসপাতালে মায়ের নিরব দেহের সামনে তাদের আর কবিরের কান্না আশপাশে থাকা কোন মানুষ সহ্য করতে পারেনি। হঠাৎ এই ডেঙ্গুতে তাদের মা চলে গেছে। এটা তারা মানবেই কিভাবে। কবির কিভাবে মেনে নেবে তার স্ত্রীর অকাল মৃ’ত্যু। তার স্বজনরা চিৎকার করে কাঁদছে।
সন্তানরা কাঁদছে। স্বামী কাঁদছে। ভাই-বোন মেনে নিতে পারছে না এই মৃ’ত্যু। ডেঙ্গুতে হাসপাতাল রোগীতে পূর্ণ। তাদের স্বজনদের এই মৃ’ত্যু গভীর চিন্তায় ফেলেছে। তারা জানতে চাচ্ছেন। প্লাটিলেট আর প্রেশারের হিসেব। ডেঙ্গুতে অনেকের মৃ’ত্যুর খবর পাচ্ছি। আজকেই শুনলাম এক স্কুল ছাত্রের মৃ’ত্যুর খবর। যারা মা’রা যাচ্ছেন তাদের স্বজনরা-সন্তানরা আসমার সন্তানদের মত স্বজনদের মত নিশ্চয় বিলাপ করছেন। এই মা হারানো সন্তানরা একদিন নিশ্চয় জানতে চাইবে আমার মায়ের ডেঙ্গু হয়েছিল কেন?
সিটি কর্পোরেশনের মশা মা’রার ৫০ কোটি টাকার ওষুধ কি হয়েছিল? মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হয়। সবাই জানে। সিটি কর্পোরেশন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সময়মত দায়িত্ব পালন করলেন না কেন?
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘কেউ বা মরে কথা বলে আবার কেউ বা মরে কথা না বলে।’ মৃ’তের সংখ্য বাড়ছে।আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মৃ’তদের স্বজনরা কথা বলছেন। বিবেকবান মানুষরা কথা বলছেন। যাদের দায়িত্ব ছিল মশা নির্মূলের, মানুষের জীবন নিরাপদের, তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
কয়েকদিন আগেও ডেঙ্গু নিয়ে দায়িত্বশীলরা তামাশা করেছেন। মৃ’ত্যুর দায় তাদের নিতে হবে। আসমার সন্তানদের মত, স্বজনদের মতই শুভ মানুষের দাবি সোচ্চার হচ্ছে। এর দায় তারা এড়াতে পারেন না।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। মানুষ আতঙ্কিত। আতঙ্কের কারণ আছে। ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েও আসমা’রা মু’ত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। আর যারা ঢাকার ভাসমান মানুষ তারা যখন আক্রান্ত হবেন। মফস্বলের জেলা -উপজেলায় যখন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে তখন? অনেকে ডেঙ্গেু সনাক্তের আগেই মৃ’ত্যুবরণ করবে আবার অনেকে চিকিৎসার অভাবে। যারা দায়িত্বে ছিলেন এটি কেমন কাজ করলেন আপনারা। অদ্ভুত আপনারা। এত মানুষের জীবন আপনাদের গুরুত্বে আসল না।
আসমার সন্তানদের মত মাসুম বাচ্চাদের বুকফাটা আর্তনাদ আপনাদের স্পর্শ করবে কি না জানি না।সংবেদনশীল হলে দায়িত্বশীল হতেন। কাজেই আপনাদের স্পর্শ করবে না। তবে আমার বিশ্বাস মা হারা শিশুদের বুকফাটা আহাজারি, বিলাপ আপনাদের অমঙ্গলই নিয়ে আসবে। নিশ্চয় এর প্রতিশোধ হবে। প্রকৃতির বিচার খুব কঠোরতরই হয়।
লেখক : সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও একাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় হুইপ।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।