জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলায় প্রবাদ আছে, মাছে ভাতে বাঙালি। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য পণ্যের মধ্যে অন্যতম চাল। দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য চাল নিয়ে নানা কারসাজি চলছে দেশের বাজারে।
সম্প্রতি মোটা-সরু সব ধরেন চালের দাম বেড়েছে অসহনীয় পর্যায়ে। চালের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে মিল মালিক ও করপোরেট সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমালে দেশের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফা লাভের প্রবণতা এ খাতকে অস্থির করে তুলছে বলে মনে করেন অনেক ব্যবসায়ী। দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে বলে জানা গেছে।
আধুনিক বিপণন পদ্ধতিতে এসব প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় মোড়কে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা করপোরেটরদের ব্র্যান্ড ভ্যালুকে কাজে লাগিয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করছে। এর ফলে লাভবান হচ্ছে করপোরেট কোম্পানি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। বিপাকে পড়ছে সাধারণ ভোক্তা।
এদিকে রাজধানীর পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ধানের মৌসুমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুত করছে। আবার বাজারে ধানের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চালের দামও বাড়াচ্ছে তারাই। সরকারের নিয়মিত মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবেই মূলত বেপরোয়া হয়ে উঠছেন করপোরেট ব্যবসায়ী ও মিলমালিকরা। চালের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত রাজধানীর বাবুবাজার। বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মেসার্স জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মোহম্মদ শাহীন মিয়া বলেন, ঋণ না পাওয়ায় ছোট আকারের প্রায় পাঁচ হাজার চাল উৎপাদনকারী মিল বন্ধ হয়ে আছে।
বাজারে পুরাতন চালের দাম সবসময়ই একটু বেশি থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ধান আসলে চালের দাম কমবে।চালের বাজার ধান গুদামজাত করা ব্যাবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে। বিশেষ করে বসুন্ধরা, প্রাণ, সিটি গ্রুপ, স্কয়ার, এসি আই গ্রুপের মতো বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি গুলোর মধ্যে।
তিনি আরও বলেন, এসব গ্রুপ সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সারা বছরের চাল জোগান দেওয়ার জন্য ধান গুদামজাত করে। তাদের সরকার ঋণ দেয় বিনাদ্বিধায়। আর তারা সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ধান কিনে মজুদ করে এবং মজুত করে রাখা ধানের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইচ্ছে মতো চালের দাম বাড়াচ্ছে।
চালের বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ বা সমাধান করতে হলে সরকারকে শক্ত হাতে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী বলেন, কীটনাশক,সেচ ও শ্রমিক মজুরি বেশি হওয়ায় মিল মালিকদের বেশি দামে ধান ক্রয় করতে হয়। তাছাড়া আমাদের দেশের থেকেও ভাতে চালের দাম বেশি বলে জানান এ পাইকারী চাল ব্যবসায়ী।
রাজধানীর বাবুবাজার এলাকার আরেক চালের আড়ত মালিক মো.নিজাম মোল্যার বলেন, দেশের পাইকারি বাজারে চাল বিপণন পদ্ধতি হচ্ছে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন মিল ও চাতালের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিনের নির্ধারিত বাজারমূল্যে চাল কিনে নেয়া। বাকি বা নগদ দামে কিনে নেওয়া এসব চাল আড়তে এনে বাজারমূল্য অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে বিক্রি করা হয় ক্ষুদ্র পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। এ পদ্ধতিতে চালের দাম চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল থাকে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আর সরবরাহ কমতে শুরু করলে দামও বেড়ে যায়।
বর্তমানে চালের আমন মৌসুমেও বাজারে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তারা করপোরেটরদের দায়ী করে তিনি বলেন, এ সময়টাতে চালের দাম কমার কথা। অথচ মিল গেটে দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলো চাল বিপণনে আসার পর তাদের বাকিতে চাল কেনার সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। ফলে সংকটকালে দেশের সরবরাহ চেইনকে স্থিতিশীল রাখা যাবে কি না সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া ধানের উত্তোলন মৌসুমে দেশের বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যবসার জন্য আলাদা করে চাল সংগ্রহ শুরু করলে চালের সংকট তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। গত ১০ থেকে ১২ বছরে দেশের বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো চালের দাম নিয়ে কারসাজি করছে বলেও অভিযোগ করেছেন এই পাইকারী ব্যবসায়ী।
রাজধানীর বাবুবাজার ও কারওয়ান বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, কোম্পানিগুলোর এ খাতে বিনিয়োগ নিয়ে সরকারের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ দাবি করেন। এসময় তারা বলেন, করপোরেট কোম্পানিগুলোর চাল বিপণন কার্যক্রমের কারণে চালের বাজার অস্থির হয়ে আছে। তাদের অতি মজুতদারি নীতির কারণে বাজারে ধানের কৃত্তিম সংকট লেগেই রয়েছে। এ জন্য ছোট মিলাররা বাকিতে ধান কিনতে না পারায় চালের সরবরাহ এসব কোম্পানির হাতেই চলে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করপোরেটরদের মতো সামনের সারির কয়েকজন মিল মালিকও আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে যে পরিমাণ চালের মজুত করেছে তা দিয়ে দুই মাস সারা দেশের মানুষের চালের চাহিদা পূরণ হতে পারে।
এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির কালবেলাকে বলেন, বহুদিন ধরে করপোরেট কোম্পানিগুলো চালের বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বলে এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে।
ক্ষুদ্র অটোমিল ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, বসুন্ধরা ও মেঘনা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান গুলো মৌসুমে ধান কিনে মজুত করছে কিন্তু তাদের ধান মজুত করা আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা মৌসুমে ধানের ন্যায্যমূল্য না দিয়ে সেগুলো মজুত করে পরে সারা বছর চালের দাম তারা তাদের ইচ্ছে মতো বাড়ায়-কমায়।
ব্যবসায়ীদের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বাজার মনিটরিং করার পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে চালের বাজারে সিন্ডিকেটের অভিযোগ আসছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।