আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতসহ উপমহাদেশে চাল-ডাল-নুন-তেল কিনতে এখনো মূল ভরসা পাড়ার মুদি দোকান। আজকাল অনলাইনে, বিশেষ করে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার দিয়েও কেনাকাটা চলছে। তা দিনে দিনে বাড়ছেও। আর ভারতে এ বিষয়ে মধ্যবিত্তের অভ্যাস বদলে দেওয়ার পেছনের ব্যক্তিটি অলবিন্দ্র ঢিঢসা।
সাধারণ মানুষের কাছে এখনো তত পরিচিত নন অলবিন্দ্র। তবে তাঁর প্রতিষ্ঠানটি ভারতে যথেষ্টই পরিচিত এখন। এককালে গ্রোফার্স নামে পরিচিত ছিল। এখন ব্লিঙ্কিট হিসেবে নতুন চেহারায় বাজারে এসেছে। আগের মতোই ঝটপট মুদিখানার জিনিসপত্র ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয় এটি। ২০২০ সালের অর্থবছরে তাদের মুনাফার অঙ্ক ছিল দুই হাজার ২৮৯ কোটি রুপি। স্রেফ মুদি কায়দায় চাল, তেল, নুন বেচে এই আয়, ভাবা যায়! ২০২০ অর্থবছরে অলবিন্দ্রের নিজের নিট আয় ছিল এক হাজার ১৮১ কোটি। অথচ গ্রোফার্স শুরু করেন মাত্র ৯ বছর আগে।
তা কিভাবে শুরু হলো অলবিন্দ্রের যাত্রা? ভারতে গ্রোফার্সের মতো স্টার্ট-আপ শুরু করার আগে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করেছেন অলবিন্দ্র। তারপর দেশে ফিরে জোম্যাটোতেও উঁচু পদে ছিলেন। দিল্লি আইআইটির স্নাতক হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছিলেন অলবিন্দ্র। একসময় পরিবহন এবং লজিস্টিকস নিয়ে দক্ষতা অর্জন করেন।
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউআরএস করপোরেশনে পরিবহন বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন অলবিন্দ্র। দুই বছর পর চাকরি বদলে কেমব্রিজ সিস্টেমেটিকসের জ্যেষ্ঠ সহযোগী হন। মোটা বেতনের চাকরি করলেও তখন থেকেই নিজে কিছু করার ইচ্ছে পুষছিলেন মনে। হঠাৎ তাঁর সুযোগও এসে যায় একসময়। চাকরি ছেড়ে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ডিগ্রি পাওয়ার পর ফিরে আসেন ভারতে। তখনো অবশ্য নিজেই স্টার্ট-আপ খোলার জন্য মানসিকভাবে তৈরি ছিলেন না।
ভারতে ফিরে ইন্টারন্যাশনাল অপারেশনসের প্রধান হিসেবে জোম্যাটোতে চাকরি শুরু করেন অলবিন্দ্র। উদ্দেশ্য ছিল, রোজগারের পাশাপাশি হাতে-কলমে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেওয়া। অ্যাপনির্ভর খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জোম্যাটোয় প্রায় তিন বছর কাজ করেছিলেন অলবিন্দ্র।
একসময় নিজেই ওয়াননাম্বার নামে একটি ডেলিভারি সংস্থা খোলেন। সঙ্গে নেন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচয় হওয়া সাবেক সহকর্মী সৌরভকে। সেটা ছিল ২০১৩ সাল। গোড়ার দিকে দোকানিদের কাছ থেকেই জিনিসপত্র নিয়ে তা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিত ওয়াননাম্বার।
মাঠে নেমে কাজের কী কী অসুবিধা, তা জানতে অলবিন্দ্র এবং সৌরভ নিজেরাও মাল ডেলিভারি দিয়েছেন কমপক্ষে ৫০-৬০টি। খুঁটিয়ে জেনেছেন দোকানি এবং গ্রাহকের অসুবিধার কথা। অলবিন্দ্র খেয়াল করেছিলেন, ভারতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অর্ডার দেওয়া হয় মুদি পণ্য আর ওষুধ। তবে গ্রাহকসেবা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সেই ফাঁকই ভরাট করবেন বলে ঠিক করেন অলবিন্দ্র। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম গ্রোফার্সের। শুরুর মাত্র তিন বছরের মধ্যেই সাফল্য-ব্যর্থতা দুইয়ের মুখ দেখা হয়ে যায় তাদের।
২০১৫ সালে জাপানের সফ্টব্যাংক গোষ্ঠীর সঙ্গে ৮০০ কোটি রুপির চুক্তি সেরে দেশের হাইপার-লোকাল প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রথম সারিতে উঠে যায় গ্রোফার্স। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সব মিলিয়ে বড় লোকসান হয়। বাধ্য হয়ে ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি দেশের ৯টি শহরে ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন অলবিন্দ্ররা। তবে ব্যর্থতা থেকেই সাফল্যের পথ খুঁজে বের করেন অলবিন্দ্র। এবার গ্রোফার্সের মোবাইল অ্যাপ চালু করলেন। গুরুগ্রাম, বেঙ্গালুরুসহ বেশ কয়েকটি বড় শহরে অর্ডার দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে জিনিসপত্র পেয়ে যেতেন গ্রাহকরা। দিল্লি, গুরুগ্রাম এবং বেঙ্গালুরুতে ৬০ হাজার বর্গফুটের গুদামের ব্যবস্থা করেন। অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ডেলিভারি দেওয়ার প্রতিষ্ঠান ভারতে কম নয়। তবে ঝটিতি ডেলিভারির জেরে লাভের মুখ দেখতে শুরু করে গ্রোফার্স।
সফল হলেও ফের গ্রোফার্সকে নয়া রূপ দিয়েছেন অলবিন্দ্র। গত বছর নতুন লোগো এবং নাম নিয়ে বাজারে আসে গ্রোফার্স। এবার ব্লিঙ্কিট। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি দেশের ৩০টিরও বেশি শহরে শাক-সবজি, মোবাইল, বইপত্র, প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে অলবিন্দ্রের কম্পানি। ২০২১ সালে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা ৬৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন ব্লিঙ্কিটে। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় চার হাজার ৭৪৪ কোটি রুপি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।