জুমবাংলা ডেস্ক : নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রথম স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এ অবস্থায় কারাগার থেকে তার মামলাটি পরিচালনার জন্য এক আবেগঘন চিঠি লিখলেন দেশ বরেণ্য ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের কাছে। কারাবন্দির চিঠি পেয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেনও সিদ্ধান্ত নিলেন বিনা পয়সায় ওই আসামির মামলা পরিচালনা করবেন। এ মামলায় শুনানি শেষে সোমবার ওই আসামির ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার এক রায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত স্বপন কুমার বিশ্বাসের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন। একইসঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের পর স্বপন কুমারকে অবিলম্বে কনডেম সেল থেকে বের করে সাধারণ সেলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাকে সাজার ক্ষেত্রে রেয়াদ সংক্রান্ত আইনের সকল সুবিধা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আদালতে স্বপনের পক্ষে বিনা ফিতে মামলা পরিচালনা করায় সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিনা ফিতে তিনি মামলা পরিচালনা করেছেন একথাটিও উল্লেখ থাকবে বলে জানান বিচারপতিরা।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর থানার নয়াটোল গ্রামে প্রথম স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে (৩৫) হত্যা করেন তার স্বামী স্বপন কুমার বিশ্বাস। তাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার ঘটনায় ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রীকে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়। পরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
একই বছরের ২৮ অক্টোবর স্বপন কুমার বিশ্বাসের নামে মামলা করেন সৈয়দপুর থানার এসআই শফিউল হক। ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরপর মামলাটি হাইকোর্টে এলে ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল বিচারপতি সাহিদুল ইসলাম ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এরপর মামলাটি যায় আপিল বিভাগে। দীর্ঘদিন ধরে আপিল শুনানির অপেক্ষায় ছিল মামলাটি।
এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের কাছে চিঠি লেখেন আসামি। এতে তিনি বলেন, ‘আমি খুব গরিব মানুষ। অনেক লড়াই সংগ্রাম করে জীবনটা গড়ে তুলতে ছিলাম, যা আজ মূল্যহীন। আজ ১৩ বছর (২০১৯ সাল পর্যন্ত) হলো আমি কারা অন্তরীণ আছি। ছয় বছর হলো হাইকোর্টের রায় বহাল হয়েছে। কীভাবে বেঁচে আছি তা লিখে বোঝাতে পারব না। এটাকে ঠিক বেঁচে থাকা বা জীবন বলে না।
এই জীবন আর সত্যিই আমার সহ্য হচ্ছে না। আপনি মহানুভব। দয়া করে আমাকে আপনার নিজ সন্তান মনে করে আমার জীবনটা বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি। ভালো থাকবেন। ইতি স্বপন কুমার বিশ্বাস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।