নিজস্ব প্রতিবেদক : চীনের এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ঠাকুরগাঁওয়ে স্থাপন করা হলে ভারতের একটি অংশের মানুষও এই হাসপাতালের সেবা গ্রহণে আগ্রহী হবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও উন্নত হওয়ায় রংপুর বিভাগের ৮টি জেলাসহ ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের মানুষও চিকিত্সা সেবা নিতে পারবেন। ফলে এই জেলা হতে পারে মেডিক্যাল টু্যরিজম হাব। ‘আমরা ঠাকুরগাঁওবাসী’ আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন ঠাকুরগাঁও উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন।
চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল ঠাকুরগাঁওয়ে স্থাপনের দাবিতে আজ শনিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে ঠাকুরগাঁও উন্নয়ন ফোরামসহ ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁওবাসীর বিভিন্ন সংগঠন অংশগ্রহণ করে।
মানববন্ধনে মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন বলেন, চীনের এক হাজার শয্যাবিশষ্টি বিশেষায়িত হাসপাতাল যদি ঠাকুরগাঁওয়ে হয়, তাহলে শুধু রংপুর বিভাগের আট জেলা নয় বরং ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের মানুষও চিকিত্সা সেবা নিতে পারবেন। চীনের চিকিত্সা ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এবং বাংলাদেশে অভিজ্ঞ চিকিত্সক থাকায় ভারতের একটি অংশের মানুষও এই হাসপাতালের সেবা গ্রহণে আগ্রহী হবেন। বাংলাদেশের চিকিত্সা সিলেবাস অনেক উন্নত হওয়ায় এই মেডিকেল কলেজে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আগ্রহী হবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের সঙ্গে দেশের সব জেলার সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ আছে। অচিরেই বিমান পথও হয়তো যুক্ত হবে। ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় হাইওয়ের পাশে সালান্দরে সুগার মিলের অব্যবহূত জমি আছে ১৫০-২০০ একর। আগে আখ চাষ হলেও এগুলো এখন পরিত্যক্ত পড়ে থাকে। ফলে চীনের আর্থিক সহযোগিতায় ১০০০ শয্যা বিশষ্টি বিশেষায়িত হাসপাতালটি ঠাকুরগাঁওই সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। তাই ঠাকুরগাঁওবাসীর পক্ষ থেকে এই হাসপাতাল আমাদের প্রাণের ঠাকুরগাঁওয়ে স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সভাপতি ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, যে জেলায় একটি আইসিইউ পর্যন্ত নেই, সেখানে আন্তর্জাতিক হাসপাতাল স্থাপন না করা শুধু অবিচার নয়, এটি জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার প্রশ্ন। ঠাকুরগাঁওয়ে হাসপাতাল স্থাপন হলে অন্তত তিনটি জেলার লাখো মানুষের জীবন বাঁচবে।
গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, বিগত সময়ে এই অঞ্চলের যারা নেতৃত্বে দায়িত্বে ও জনপ্রতিনিধিত্বে ছিলেন, তারাই উত্তরাঞ্চলকে অবহেলিত করে রেখেছেন। তাদের কারণেই উত্তরাঞ্চল অবহেলিত বঞ্চিত। এ অঞ্চলে অনেক বড় বড় নেতার জন্ম হলেও তারা ঠাকুরগাঁওকে আপন মনে করে নিতে পারেন নাই। রংপুর বিভাগের মধ্যে রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারিতে মেডিকেল কলেজ থাকলেও ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেই। অথচ, ঠাকুরগাঁও একটি সেন্টার পয়েন্ট।
তিনি আরো বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের ১৬ লাখ, পঞ্চগড়ের ১২ লাখ এবং পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের ৪টি উপজেলার ১২ লাখ মানুষসহ ৪৫ থেকে ৫০ লাখ মানুষের সেন্টার পয়েন্ট হল ঠাকুরগাঁও। সবাই এখান থেকে সহজে সেবা নিতে পারবে। ঠাকুরগাঁওয়ে এই হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ৫০ জনেরও বেশি মানুষ জায়গা দিতে প্রস্তুত আছে। এটি অঞ্চলের গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁও জেলা সোসাইটির সভাপতি ও সাবেক কর কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় ১২-১৪ ঘণ্টার দূরত্ব। অনেকে ঢাকায় উন্নত চিকিত্সার জন্য আসতে না পেরে সুচিকিত্সার অভাবে মারা যান। ঠাকুরগাঁওয়ে চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল নির্মিত হলে বাংলাদেশের মানুষ তথা উত্তরাঞ্চলের ১৫-১৬ টি জেলার মানুষ যেমন লাভবান হবে, একইসঙ্গে নেপাল, ভূটান এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখানে এসে চিকিত্সা নিতে পারবে। আমরা সরকারের কাছে নিবেদন জানাই, ঠাকুরগাঁওয়ে এই হাসপাতালটি স্থাপনে যা যা স্টেপ নেওয়া দরকার আপনারা নেবেন।
ইবনে সিনা ট্রাস্টের সিনিয়র এজিএম মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, চিকিত্সা শুধু বড় শহরের মানুষের একচেটিয়া সুবিধা হতে পারে না। ঠাকুরগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক হাসপাতাল স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা আরো বিকেন্দ্রীকৃত হবে এবং স্বাস্থ্য পর্যটনের দিকেও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।
ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক এ পারভেজ লাবু বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত ২টি জেলার একটি ঠাকুরগাঁও অপরটি পঞ্চগড়। আমরা চাই এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য চীন-বাংলাদেশ ফেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতালটি ঠাকুরগাঁওয়ে স্থাপন করা হোক। তিনি ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কে এই হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানান।
চীন-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল ঠাকুরগাঁওয়ে স্থাপন করতে হবে : দেলাওয়ার হোসেন
এছাড়া মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কল্যাণ সমিতির সদস্য সচিব মো. মকছেদুল ইসলাম সোহাগ, বিশষ্টি ব্যাংকার আবুল কালাম আজাদ, ঢাকাস্থ ঠাকুরগাঁও ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আসাদুল্লাহ& আল গালিব প্রমুখ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজ সেবক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন, সাবেক ছাত্র নেতা আব্দুর রহমান, বিশষ্টি ব্যবসায়ী হেলাল হোসেন, অ্যাডভোকেট আদিব, ইঞ্জিনিয়ার জামিল প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।