আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের উহান প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত চীন। এতে আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমন অবস্থায় নতুন শঙ্কার কথা জানিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে ছোঁয়াচে এইচ ফাইভ এন ওয়ান ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। যে ভাইরাসটি বার্ড ফ্লু নামে বেশি পরিচিত। তবে এখনো বার্ড ফ্লু আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি।
চীনের কৃষি মন্ত্রণালয় রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হুনান প্রদেশে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে এখনো কোনো মানুষ এটিতে আক্রান্ত হয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। খবর সিনহুয়ার।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হুনান প্রদেশের শাওয়াং শহরের শুয়াংকিং জেলায় একটি খামারে ব্যাপকহারে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ওই খামারে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭ হাজার ৮৫০টি পোল্ট্রি মুরগি এবং সাড়ে চার হাজার পাখির মৃত্যু হয়েছে।
হুনান প্রদেশ উহান প্রদেশের সঙ্গেই অবস্থিত। এই উহান থেকেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০৪ জনে। শুধুমাত্র চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এছাড়া বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
করোনাভাইরাসের মোকাবেলা করতে চীন যখন হিমশিম খাচ্ছে তখনই বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানায় দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে বার্ড ফ্লু ঠেকাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চীন।
বার্ড ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েক দশকে বিশ্বজুড়ে বহু লোক নিহত হয়েছে। ২০০৯-১০ এবং ২০১৩-১৪ সালে এটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ এটি প্রতিরোধে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে।
বার্ড ফ্লু কী?
বার্ড ফ্লু সাধারনভাবে ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় একটি রোগ। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ভাইরাসের সংক্রমনে এই রোগ হয়। বার্ড ফ্লুকে, বার্ড ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং এভিয়ান ফ্লু নামেও ডাকা হয়। ভাইরাস বাহিত এই রোগটি পাখিদের সংক্রমিত করে। পাখিরা খুব দ্রুত একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে বলে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার প্রকৃতিতে স্বাধীন ভাবে বিচরন করা পাখির মাধ্যমে এই রোগ সহজেই গৃহপালিত পাখিতে সংক্রমিত হয়।
বার্ড ফ্লু এর লক্ষণ
সাধারণত সংক্রমণের ১-৩ দিন পর সাধারন ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই রোগীর ঠাণ্ডার লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমন- জ্বর, গা ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করা, ঠান্ডা লাগা, হাঁচি, কাশি, মাথাব্যথা, মাংসপেশি ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি। বার্ড ফ্লুর লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে খুব সামান্য হতে পারে আবার অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত তীব্র হতে পারে যেখানে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। পরবর্তীতে অবস্থা জটিল হলে অনেক ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সংক্রমণ বা এনসেফালাইটিস, হৃৎপিণ্ডের সংক্রমণ বা মায়োকার্ডাটাই, মাংসপেশিতে সংক্রমণ বা মায়োসাইটিস ইত্যাদি হতে পারে। বার্ডফ্লু হলো ইনফ্লুয়েঞ্জার তীব্র একটি রূপ।
কিভাবে ছড়াতে পারে
আক্রান্ত পশুপাখির প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে অথবা বর্জ্য থেকে বার্ড ফ্লু হতে পারে। আবার আক্রান্ত ব্যক্তির প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে অন্য ব্যক্তির মাঝে বার্ড ফ্লু ছড়াতে পারে। আক্রান্ত পাখির ডিম বা মাংস সঠিকভাবে সিদ্ধ করে না খেলে বার্ড ফ্লু হতে পারে।
রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা
বার্ডফ্লু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, রক্তে এই ভাইরাসের এন্টিবডি পিসিআর পদ্ধতিতে দেখে ভাইরাসটি সনাক্ত করা যায়। সাধারণত ভাইরাস কালচার বা ভাইরাস এনটিজেন, আর এন এ আর টি পি সি আর দিয়ে নাক ও মুখগহ্বর থেকে লালার নমুনা নিয়ে এই রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে করনীয়
এটি ভাইরাসজনিত একটি ছোঁয়াচে রোগ। নিম্নলিখিত বিষয় সমুহ মেনে চললে এবং একটু সতর্ক হলে বার্ডফ্লু প্রতিরোধ করা সম্ভব। যথা-
খালি হাতে অসুস্থ্য বা অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এমন হাঁস বা মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরা বা নাড়াচাড়া করা যাবে না।
অসুস্থ্য হাঁস, মুরগি জবাই করা বা পালক ছাড়ানো অথবা নাড়াচাড়া করা যাবে না।
অসুস্থ্য হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরা এবং সেগুলো নিয়ে খেলাধুলা করা থেকে শিশুদের বিরত রাখতে হবে।
আক্রান্ত পাখিদের বিষ্ঠায় অতিরিক্ত পরিমানে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। তাই যারা ঘরে পাখি পালন করেন তাদের ঘরে পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে শিশু ও বড়দের মধ্যে জীবাণু সংক্রমনের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
হাঁস, মুরগি বা পশুপাখি ধরার পর ভালো করে সাবান বা ছাই এবং পানি দিয়ে দুই হাত ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
হাঁস, মুরগি বা পশুপাখির ঘরে কাজ করার ক্ষেত্রে, কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ ভালভাবে ঢেকে নিতে হবে। পশুপাখি নাড়াচাড়ার পর হাত না ধুয়ে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা যাবে না।
হাঁস, মুরগির মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করতে হবে। আধা সেদ্ধ মাংস, ডিম বা মাংসের তৈরি খাবার খেলে সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকে।
বার্ড ফ্লু আক্রান্ত এলাকা অর্থাৎ যেখানে এ রোগ ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এমন স্থানে বা তার আশপাশে যারা বাস করেন, তাদের হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখি ক্রয় বিক্রয় বা জবাই করার স্থান থেকে দূরে থাকতে হবে।
অসুস্থ্য হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখির মল সার অথবা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। মৃত হাঁস, মুরগি এবং পাখি মাটিতে পুঁতে ফেলার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরার পর যদি কেউ জ্বর, সর্দি কিংবা কাশি জাতীয় কোনো রোগে ভোগেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং অবশ্যই রোগে আক্রান্ত বা মৃত হাঁস, মুরগির সংস্পর্শে আসার বিষয়টি চিকিৎসককে জানাতে হবে।
এ রোগটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর একমাত্র মাধ্যম হলো হাঁচি বা কাশি থেকে নির্গত ড্রপলেট। তাই আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখলে এর সংক্রমন থেকে নিরাপদে থাকা যেতে পারে।
আবার আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কিংবা কাশি থেকে নির্গত ড্রপলেট, নিত্য ব্যবহার্য্য কোন স্থানে বা পাত্রে লেগে থেকেও সংক্রমন ঘটাতে পারে। যেমন- মোবাইল, রিমোট, টেলিফোন, টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল ইত্যাদি একজন সুস্থ্য ব্যক্তি হাত দিয়ে স্পর্শ করলে এবং ওই হাত দিয়ে তার নাক, মুখ বা চোখ স্পর্শ করলে, তা থেকে সুস্থ্য ব্যক্তির বার্ডফ্লু হতে পারে।
জনসমাগম বেশী এরুপ স্থানে, কারও না কারও এই রোগ থাকতেই পারে তাই ওই সকল স্থানের কোনো কিছু স্পর্শ করে সাথে সাথে নাক, মুখ বা চোখ স্পর্শ করা যাবে না।
সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে নিলেও হাতে বার্ড ফ্লুর ভাইরাস থাকে না। এজন্য যাদের অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে হয় তারা দিনে বেশ কয়েকবার ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিরাপদে থাকতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।