
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে প্রার্থীরা সক্রিয়, সম্পন্ন হয়েছে পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ ও কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন। দলীয় সূত্র বলছে, এবার জোট নয়— সমমনা ইসলামি দলগুলোর ভোট যাবে এক বাক্সে, ইসলামের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানই হবে তাঁদের মূল কৌশল।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে জামায়াতে ইসলামী। চলতি বছরের শুরুতেই দলটি ২৯৯ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল। এরপর থেকেই সেই প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন— আয়োজন করছেন সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও কর্মী সম্মেলন।
দলের কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের এসব প্রস্তুতির পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে গঠন করা হয়েছে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিও।
জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, এবারের নির্বাচনে তাদের লক্ষ্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনায় ন্যায় ও সমতাভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন। এ লক্ষ্য সামনে রেখে তারা পূর্ণমাত্রায় নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছে।
যদিও জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি এবং নির্বাচনের পদ্ধতি—সংখ্যানুপাতিক বা পিআর—নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে, তবু বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয় জামায়াত। বরং দলটি ইতোমধ্যে ইসলামী আন্দোলনসহ আটটি ইসলামি দলকে নিয়ে একটি জোট গঠন করেছে এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে একসঙ্গে কাজ করছে।
তবে দলটির শীর্ষ নেতাদের মতে, এবার জামায়াত কারও সঙ্গে নির্বাচনি জোটে যাচ্ছে না। বরং সমমনা ইসলামি দলগুলোর ভোট ‘এক বাক্সে’ রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। তাঁদের বিশ্বাস— দলগুলোর মধ্যে কিছু মতভেদ থাকলেও ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও মানুষের কল্যাণে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে।
ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম এ বিষয়ে বলেন,
“দেশের মানুষ এখন ইসলামের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। সর্বত্র ইসলামকে রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখতে চাওয়া মানুষের উপস্থিতি স্পষ্ট। এ বাস্তবতায় সব ইসলামপন্থি শক্তি একত্রে এক বাক্স ভোট নীতি গ্রহণ করেছে, যাতে ইসলামমনস্ক মানুষ দ্বিধায় না পড়ে। এবার জোট নয়, ইসলামি দলের ভোটের বাক্স হবে একটাই।”
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমরা জোটে যাচ্ছি না। তবে দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হচ্ছে। আমরা ওয়ান বক্স পলিসিতে যাচ্ছি। যেসব আসনে যে দলের সমর্থন বেশি রয়েছে বা যাঁকে দিলে জয়ী হয়ে আসতে পারবেন আমরা তাঁকে প্রার্থী দেব। সবাই মিলে তাঁকে জয়ী করার জন্য কাজ করব।’ জামায়াত সূত্র জানিয়েছেন, জেলা-উপজেলা নেতাদের ভোট এবং কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সবশেষ গাজীপুর-৬ আসনে ড. হাফিজুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। এখন শুধু বাকি নরসিংদী-৫ আসনের মনোনয়ন। এখন পর্যন্ত যাঁদের সম্ভাব্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাঁরা এলাকায় কাজ করছেন। তবে এ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত নয়। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। পবিত্র ওমরাহ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তুরস্ক সফর শেষে গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় এক বছর আগেই এ তালিকা আঞ্চলিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি। চূড়ান্ত তালিকাটা সময়মতো কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে। যেহেতু আমরা একা নির্বাচন করব না, আরও অনেককে ধারণ করব, দেশ ও জাতির স্বার্থে সব দিক বিবেচনা করেই চূড়ান্তভাবে যথাসময়ে আমরা চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



