আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি কলকাতার লাউডন স্ট্রিটে দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশির মৃ’ত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরসালন পারভেজ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এখন প্রমাণ মিলেছে যে, ভাই আরসালন পারভেজ নয়,যে গাড়ি দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশির মৃ’ত্যু হয়েছে, সেই গাড়ির স্টিয়ারিং ছিল আরসালনের বড় ভাই রাঘিবের হাতে।
পুলিশের ব্যাখ্যা, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির এয়ারব্যাগ বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা থেকে অনেকটা স্প্লিন্টারের মতো ছিটকে বের হয় সিলিকনের কণা। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এমন গাড়িচালকের মুখে আটকে যায় ওই সিলিকনের টুকরো। সারা মুখ লাল হয়ে যায়। দিন চারেক ধরে তার চিহ্ন থেকে যায় মুখে। সেই অনুযায়ী লাউডন স্ট্রিটের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরসালন পারভেজের মুখে এই চিহ্ন থাকার কথা। কিন্তু মুখ বা শরীরের ওপরের অংশে সেই চিহ্ন না দেখতে পেয়ে একটু অবাকই হয়ে যান এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তাঁর মনে সন্দেহ জাগে। তিনি টানা প্রশ্ন করতে শুরু করেন আরসালনকে।
এই সন্দেহ জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ির ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম পরীক্ষা করতে শুরু করেন গোয়েন্দারা। জাগুয়ার স্পোর্টসের মতো আধুনিক গাড়িতে এই স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমটি থাকার ফলে গাড়ি চোরেরা বিশেষ সুবিধা করতে পারে না। এ ছাড়াও হাতে মোবাইল না নিয়েই ফোন কল করা থেকে শুরু করে গান শোনা, দিক নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও সাহায্য করে এই সিস্টেম।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, চোর আটকানোর জন্য যে সফটওয়্যারটির ওপর নির্ভর করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা, সেটিই ধরিয়ে দিল পরিবারের বড় ছেলে রাঘিব পারভেজকে।
এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিতে পারভেজ পরিবারের কয়েকজনের মোবাইল নম্বর রেজিস্টার্ড ছিল। কেউ গাড়ির দরজার লক খোলার পর গাড়ি স্টার্ট দিতে গেলে এই মোবাইলগুলির মধ্যে অন্তত একটি চালকের হাতে থাকতেই হবে। গাড়ির ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমের স্ক্রিন পরীক্ষা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা থেকে গাড়ির লাগাম ছিল রাঘিব পারভেজের হাতে। সেই মোবাইল নম্বরের হোয়াটস অ্যাপের ডিপি ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাঘিবের ছবি বের করা হয়।
লাউডন স্ট্রিটের সিসিটিভি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, একজন বেরিয়ে গিয়ে হাঁটতে শুরু করেছে। শেক্সপিয়র সরণি থানা হেঁটে পেরিয়ে যাওয়ার পর সে কলামন্দিরের দিকে দৌঁড়াতে শুরু করে। পেরিয়ে যায় একটি বেসরকারি হাসপাতাল, কয়েকটি নামী শাড়ির দোকান। প্রায় ৪৫টি ট্রাফিক ও বেসরকারি সিসিটিভিতে তার পালানোর ফুটেজ মেলে। হাসপাতালের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তার মুখের অবয়ব পাওয়া যায়। সেই অবয়বের সঙ্গে গোয়েন্দারা হোয়াটস অ্যাপের ডিপি-র ছবি মেলান। রাঘিবের উপস্থিত থাকার প্রমাণ মেলে। এরপর গোয়েন্দারা যান পারভেজদের বেকবাগানের বাড়িতে। বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাঘিব রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বেরিয়ে যাচ্ছে জাগুয়ার স্পোর্টস গাড়িটি নিয়ে। একইসঙ্গে বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ ও মোবাইল ফোনের টাওয়ার এই প্রমাণও দেয় যে, আরসালন পারভেজ সারারাত বাড়ির ভিতরেই রয়েছেন। এরপরই ঘটনার মোড় ঘোরে। গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, বাড়ির লোকেরা আসল অভিযুক্ত রাঘিবের বদলে আরসালনকেই তুলে দিয়েছেন তাঁদের হাতে।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, একটি কাপড়ের দোকানের কাছে দাঁড়িয়ে রাঘিব তার মামা হানজাকে ফোন করে। মামা গাড়ি নিয়ে এসে তাকে প্রথমে ব্রাইট স্ট্রিট ও তারপর সল্টলেকে নিয়ে যান। কলকাতায় ফিরে আসার পর বেনিয়াপুকুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়ে যায় রাঘিব। শনিবারের নাইট রাইডে গাড়িতে তার সঙ্গে কেউ ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।