খাদ্য বা বাসস্থানের জন্য জীবজন্তুদের মধ্যে চলে শত্রু-শত্রু খেলা। বাঁচার প্রয়োজনে বড়রা ছোট বা দুর্বলদের শিকার করে। যেমন ছোট্ট প্রজাপতিকে খায় তার শত্রু ব্যাঙ। আর ব্যাঙকে সাপ, সাপকে খায় বাজ পাখি বা অন্য কেউ। এভাবে খাদ্যশৃঙ্খল অনুযায়ী এক প্রজাতি আরেক প্রজাতির শিকারে পরিণত হয়। ভারসাম্য আসে খাদ্যশৃঙ্খলে।
টিকে থাকে জীবজগৎ। এ ক্ষেত্রে দুর্বল প্রাণী পরাজিত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবক্ষেত্রে কথাটা সত্যি নয়। দুর্বল প্রাণীরা গায়ের জোরে শক্তিশালী শিকারি প্রাণীর সঙ্গে পারে না বটে। কিন্তু তারা অন্যভাবে, বলা যায় ‘বুদ্ধির জোরে’, শক্তিশালী প্রাণীকে ফাঁকি দিতে বা পরাজিত করতে চেষ্টা করে। এমন এক পদ্ধতিই হলো ক্যামোফ্লেজ বা ছদ্মবেশ।
ক্যামোফ্লেজ পদ্ধতিতে প্রাণীরা কয়েকভাবে উপকৃত হয়। শত্রু বা শিকারি প্রাণীকে ধোঁকা দিয়ে প্রতিকুল পরিবেশে টিকে থাকে তারা। আবার অন্য প্রাণী শিকারেও এ পদ্ধতি বেশ কাজে দেয়।
একেক প্রজাতি একেক ছদ্মবেশ নেয়। কেউ গায়ের রং পরিবর্তন করে, কেউ অন্য প্রাণী বা গাছের মতো করে সাজায় নিজেকে। অনেকের গায়ের রং শত্রুর কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে। তাদেরকে কষ্ট করে রং পরিবর্তন করতে হয় না। যেমন হরিণ, খরগোশ, শজারুর ছদ্মবেশ এ ধরনের। এদের গায়ের রং সাধারণত ধূসর। এ কারণে তারা মাটি বা গাছপালার কাছাকাছি থাকলে শিকারি বাঘ বা সিংহ এদের সহজে আলাদা করে চিনতে পারে না।
এদিকে গায়ের সাদা-কালো দাগ জেব্রাকে রক্ষা করে শত্রু থেকে। এ দাগগুলোই তার ছদ্মবেশ। পশুরাজ সিংহের খাদ্য তালিকায় জেব্রাও আছে। অনেকে হয়তো জানেন না, সিংহ কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধ। জেব্রা সহজাত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিংহকে ফাঁকি দেয়। সেটা কীভাবে? জেব্রা সাধারণত দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে। গায়ে গা লাগিয়ে থাকায় দূর থেকে দেখলে সিংহের চোখে মনে হয় সাদাকালো বিশাল কোনো প্রাণী নড়াচড়া করছে। তাই সে ওই প্রাণীকে, মানে জেব্রাকে আক্রমণ করতে সাহস পায় না।
অনেকে বিপদ পড়লে নিজের গায়ের রং পরিবর্তন করতে পারে। এরা গায়ের রং বদলে পরিবেশের মতো করে নিয়ে লুকোতে পারে নিজেদের। যেমন গিরগিটি, ক্যামেলিয়ন, কাটলফিশ। গিরগিটি বিপদ টের পেলে গায়ের রং বদলে ফেলে। ফলে তাকে সেই পরিবেশ থেকে আলাদা করা যায় না। গবেষকরা বলেন, এদের দেহে বায়োক্রম নামের রাসায়নিক রঞ্জক থাকে। এ জন্য তারা ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাতে পারে।
কিছু প্রাণী আবার ঋতুভেদে দেহের রং পরিবর্তন করে। যেমন মেরু শিয়াল। শীতকালে চারিদিকে ধু ধু সাদা বরফ থাকলে এদের গায়ের লোম থাকে ধবধবে সাদা। ফলে এরা বরফে ঘাপটি মেরে শিকার ধরতে পারে। আবার শত্রুর চোখও ফাঁকি দেয়। বসন্তের শুরুতে এদের লোমে কালো কালো ছোপ পড়ে। কারণ এ সময় তাদের ছদ্মবেশটা এমনই দরকার। অনেক পাখি এবং স্তন্যপায়ীও ঋতুভেদে গায়ের রং পরিবর্তন করে প্রাকৃতিক ছদ্মবেশ নেয়।
শত্রুর চোখে ধুলো দিতে ওস্তাদ সাগরতলের ক্যাটলফিশের কথা বলা যাক। এদের প্রধান শত্রু হাঙর, বড় মাছ আর বড় ক্যাটলফিশ। ক্যাটলফিশ পরিবেশের মতো নিজের দেহের রং তৈরি করতে পারে। ফলে শিকারি শত্রু ক্যাটলফিশের উপস্থিতি বুঝতে পারে না। এ ছাড়া শত্রুর উপস্থিতি টের পেলে এরা কালো রঙের একধরনের তরল ছুড়ে মারে। তাতে কিছু সময় শত্রু চোখে কিছু দেখতে পায় না। এর মধ্যেই ক্যাটলফিশ নিরাপদ দূরুত্বে সরে যায়। ঠিক একই পদ্ধতিতে শত্রুকে ফাঁকি দেয় অক্টোপাস।
সাগরতলের আরেক অদ্ভুত প্রাণী সি ড্রাগন। এদের দেখে মনে হয়, শিকড় উপড়ানো কোনো জলজ উদ্ভিদ বোধ হয় ভেসে বেড়াচ্ছে। আসলে এদের নিয়ে একই ভুল করে শত্রুরাও। গাছের রূপ নেওয়ায় সি ড্রাগন শত্রুর হামলা থেকে বেঁচে যায়।প্রাণীজগতে এমন ছদ্মবেশের হাজারো উদাহরণ আছে। তবে প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে, বনের পশু হিংস্র হলেও তারা অকারণে কাউকে হত্যা করে না। বিপদ থেকে বাঁচতে অথবা ক্ষুধা মেটাতে ছদ্মবেশ নেয়। এসব পদ্ধতি মানুষ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। এ নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণাও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।