ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ হলে ৫৯৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে শাখা ছাত্রদল। কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, ১৫ জুলাইয়ের হামলায় অভিযুক্ত একাধিক ব্যক্তি পদ পেয়েছেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সংগঠনটি। সমকালের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
এ দিকে এ কমিটি দেওয়ার প্রতিবাদে রোকেয়া হলে ছাত্রীরা মিছিল করেছেন। গত বছরের ১৭ জুলাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হল থেকে বের করে প্রশাসনের কাছ থেকে রাজনীতিমুক্ত হলের মুচলেকা নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনের সই করা পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি প্রকাশ করা হয়।
কমিটিতে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন রাকিবুল হাসান সৌরভ। তিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাবির জীববিজ্ঞান অনুষদের সহসভাপতি ছিলেন। রোকেয়া হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নিতু রানী সাহা হল ছাত্রলীগের উপ গণযোগাযোগ সম্পাদক ছিলেন। তিনি চব্বিশের ১৭ জুলাই ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করেন।
বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের গেস্টরুমে অনুজদের নির্যাতনে অভিযুক্ত অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং দর্শন বিভাগের নিবিড় খান লোহানী যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হাসানকে প্রলয় গ্যাংয়ে যুক্ত এবং ছাত্রলীগের হয়ে নির্যাতনকারী হিসেবে গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থীরা বয়কট করেছিলেন। গত বছরের ১৫ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলায় অভিযুক্ত আহমেদ জাবির মাহাম হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে কার্যনির্বাহী সদস্যের পদ পেয়েছেন। ছাত্রলীগের সেক্রেটারি তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হিসেবে কর্মসূচিতে দেখা যাওয়া জান্নাতুল ফেরদৌস পুতুলকে কুয়েত-মৈত্রী হলের সদস্য সচিব করা হয়েছে।
এ ছাড়া নানা সময়ে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে দেখা গেছে এমন ব্যক্তিরাও পদ পেয়েছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে নাটোর আওয়ামী লীগের সমন্বয় কমিটিতে থাকা আজিজুল হাকিম জিয়া হলে যুগ্ম আহ্বায়ক, ঝিনাইদহ আসনের সমন্বয় কমিটির সদস্য শিবলী রহমান পাভেল মুহসীন হলের যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন। এ ছাড়া মুহসীন হলের যুগ্ম আহ্বায়ক মহিবুল ইসলাম আকন্দ, মোয়াজ শাহরিয়ার অপু, জহুরুল হক হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসনাত জীম, ফজলুল হক মুসলিম হলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব হাসান, সুফিয়া কামাল হল ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাকিয়া সুলতানা আলো, শহীদুল্লাহ্ হলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোছাদ্দেক আলী শান্ত, এফ রহমান হল ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মুনতাহা মিথকে নানা সময়ে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে দেখা গেছে।
কমিটি প্রকাশের পর এসব বিষয় সামনে আসায় শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভূঁইয়া ইমনকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, আমরা আবেদনপত্র নিয়েছিলাম। যারা যুক্ত হতে চেয়েছেন, তাদের পদায়ন করা হয়েছে। আবেদনের সময় অনেকে তথ্য লুকিয়ে থাকতে পারে, এ সব বিষয় আমরা আগে জানতাম না। তাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা পরে পদক্ষেপ নেব।
এ দিকে দীর্ঘদিন থেকে হল ও একাডেমিক এলাকায় রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে তারা মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে দলটির শাখা আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সব ছাত্র সংগঠন হল ও একাডেমিক এলাকায় রাজনীতি না করার পক্ষে শিক্ষার্থীদের মতামতকে সম্মান জানিয়েছিল। কিন্তু প্রকাশ্যে না এসে শিবির হলগুলোতে গুপ্ত কমিটি কার্যকর করেছে। এরপর ছাত্র ইউনিয়ন এবং সর্বশেষ ছাত্রদল হলে কমিটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই।
জিয়া হলে পদ পাওয়া নেতার পদত্যাগ
এদিকে, পদ পাওয়ার পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ফেসবুক পোস্টে পদত্যাগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রদলের সদস্য মো. রাশিদুল ইসলাম ইব্রাহিম। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে নিজেকে রাজনীতির বাইরে নিয়ে যেতে চাই। আমার ছাত্র রাজনীতি এখানেই সমাপ্তি ঘোষণা করলাম। যে কোনো ব্যক্তিগত ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।