আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কিছু সিদ্ধান্ত একজন মানুষকে মধ্যগগনে নিয়ে যেতে পারে, আবার কিছু ভুল সিদ্ধান্ত জীবনকে কার্যত তছনছ করে রেখে দেয়। একজন মানুষকে রাস্তার ভিখারি অবধি করে রেখে দিতে পারে একটা ভুল পদক্ষেপ। ঠিক যেমনটা এই মানুষটার সঙ্গে হয়েছে। আজ এই প্রতিবেদনে এমন একজন মানুষকে নিয়ে আলোচনা হবে যিনি একসময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা নাড়াচাড়া করেছেন, কিন্তু এখন তার এমন করুণ দশা হয়ে গিয়েছে যে তাঁকে দেখলে আপনারও খারাপ লাগতে পারে। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন কাকে নিয়ে আলোচনা হতে চলেছে এই প্রতিবেদনে? তাহলে বিস্তারিত জানতে ঝটপট পড়ে ফেলুন।
আপনি কি বিজয়পত সিংহানিয়াকে (Vijaypat Singhania) চেনেন? যিনি রেমন্ডের (Raymond) মতো সংস্থাকে একটা সময়ে সবকিছুর শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন। ১০০ বছরের পুরনো সংস্থা রেমন্ডের প্রতিষ্ঠাতা বিজয়পত সিংহানিয়া আজ একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। একসময় মুকেশ আম্বানির (Mukesh Ambani) চেয়ে বেশি সম্পদ তাঁর ছিল। তাঁর বাড়ি মুকেশ আম্বানির বাড়ি অ্যান্টিলিয়ার চেয়েও বড় ছিল, কিন্তু আজ তিনি একদম সাদামাটা জীবন যাপন করছেন। তাঁর কোনো বাড়ি বা গাড়ি নেই।
বিজয়পত সিংহানিয়া স্বীকার করেছেন যে তাঁর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তাঁর সংস্থা আজ উচ্চতায় রয়েছে, তবে বিজয়পতের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছে। আপনি জানলে অবাক হবেন, একসময় ১২,০০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বিজয়পত সিংহানিয়া তাঁর ছেলের হাতে সমস্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করে সবচেয়ে বড় ভুল করেছিলেন।
রেমন্ডের পথচলা আজ থেকে একশো বছর আগে মুম্বাই থেকে শুরু হয়েছিল। ১৯০০ সালে, মহারাষ্ট্রের থানেতে একটি উলের মিল ছিল, যেখানে কম্বল তৈরি করা হত। পরে সেখানে সেনা সদস্যদের জন্য ইউনিফর্ম প্রস্তুত করা হয়। ১৯২৫ সালে মুম্বাইয়ের এক ব্যবসায়ী এই মিলটি কিনেছিলেন, কিন্তু কয়েক বছর পরে ১৯৪০ সালে কৈলাশপত সিংহানিয়া তাঁর কাছ থেকে মিলটি কিনে নেন। তিনি মিলের নাম ওয়াদিয়া মিল থেকে রেমন্ড মিলে পরিবর্তন করেন। রাজস্থান থেকে কানপুরে পাড়ি জমানো সিংহানিয়া পরিবার সেখানে থেকে কটন স্পিনিং অ্যান্ড ওয়েভিং মিলস কোম্পানি চালান।
কৈলাশ সিংহানিয়া ফ্যাব্রিকের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন এবং সস্তা পোশাক তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। তিনি ১৯৫৮ সালে মুম্বাইয়ে প্রথম রেমন্ড শোরুম খোলেন। ১৯৬০ সালে তিনি বিদেশী মেশিন আমদানি করেন এবং সেগুলো থেকে কাপড় তৈরি শুরু করেন। ১৯৮০ সালে বিজয়পত সিংহানিয়ার হাতে রেমন্ডের কম্যান্ড দেওয়া হয়। তিনি কোম্পানির দায়িত্ব ভালভাবে পরিচালনা করেন এবং রেমন্ডের নাম ও ব্যবসা আরও ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে। এরপর ১৯৮৬ সালে, সিংহানিয়া ফ্যাব্রিক ব্যবসার পাশাপাশি পারফিউম ব্র্যান্ড পার্ক অ্যাভিনিউ চালু করেছিলেন। তিনি দেশের পাশাপাশি বিদেশেও নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। এরপর ১৯৯০ সালে বিজয়পত সিংহানিয়া ভারতের বাইরে প্রথম শোরুম খোলেন।
২০১৫ সালে বিজয়পত সিংহানিয়া তাঁর পুত্র গৌতম সিংহানিয়ার (Gautam Singhania) কাছে রেমন্ডের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। তিনি তার সমস্ত শেয়ার তার ছেলের নামে স্থানান্তর করেছিলেন। সে সময় ওই শেয়ারগুলোর মূল্য ছিল ১,০০০ কোটি টাকা। গৌতম কোম্পানির দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথেই তিনি রঙ দেখাতে শুরু করেন বলে শোনা যায়। বাবা-ছেলের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। একটি ফ্ল্যাট নিয়ে দুজনের মধ্যে এত বিরোধ ছিল যে বিষয়টি আদালত অবধি পৌঁছে যায়। বিজয়পত সিংহানিয়া মুম্বাইয়ের একটি অভিজাত এলাকায় জেকে হাউস নামে একটি বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছিলেন, কিন্তু ছেলে তাকে সেই বাড়ি থেকে বের করে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতে বাধ্য করেছিল।
রেমন্ডের প্রতিষ্ঠাতা বিজয়পত সিংহানিয়া নিজেই স্বীকার করেছেন যে সমস্ত সম্পত্তি, সমস্ত ব্যবসা তাঁর ছেলের হাতে তুলে দেওয়া সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। ১২,০০০ কোটি টাকার এই সংস্থার মালিক এখন দক্ষিণ মুম্বইয়ের গ্র্যান্ড পারাদি সোসাইটির একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।