আবদার মেটাতে ১৬ বছর বয়সেই দিহানকে তিন লাখ টাকা দিয়ে সুজুকি বাইক কিনে দিয়েছিলেন বাবা। এরপর আবদারের পরিধি বাড়ে। কিনে দিতে হবে গাড়ি। তবে যেনতেন গাড়ি দিলে চলবে না। দিতে হবে টয়োটা এক্সিও। যে কথা সেই কাজ, ছেলেকে খুশি করতে ২০১৯ সালে ১৪ লাখ টাকায় সেটাও কিনে দিলেন। মোট কথা, দিহানের কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখেননি সরকারি চাকরিজীবী বাবা।
কলাবাগান এলাকার দিহানদের প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।
এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আনুশকা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি দিহানের একাধিক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিল। মূলত এইসব বান্ধবীর পেছনেই সাবেক সাব রেজিস্ট্রার বাবার অর্থকড়ি দুই হাতে উড়াতেন দিহান। বাবাও কখনো কোনো কিছুতে বাধা করতেন না।
কলাবাগান এলাকার রাস্তার পাশের দোকানিরা জানান, দিহান যখন গাড়ি নিয়ে বের হতেন। তখন গলি কেঁপে উঠত। নিজের ইচ্ছেমতো বাজাতেন একেরপর এক গাড়ির হর্ন।
এদিকে সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ইংরেজি মাধ্যমের আরও অনেক তরুণীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল দিহানের। লং ড্রাইভে বেরিয়ে দিহান তার বন্ধুদের সঙ্গে মদ ও অন্যান্য মাদক সেবন করতেন। রাতভর বিভিন্ন বন্ধুর ছাদে মদ ও মাদকের আড্ডাও চলত। থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাতভর হোটেলে সময় কাটিয়েছেন দিহান।
আনুশকাকে ধর্ষণ ও হত্যার দিনটিতেও লেক সার্কাসের বাসায় ডেকে নেয় দিহান। দিহানের বাবা এসময় ছিলেন রাজশাহীতে। মেজো ভাই ছিলেন নারায়ণগঞ্জে। অসুস্থ নানাকে দেখতে বগুড়ায় ছিলেন মা। বাসা খালির এই সুযোগটিকেই কাজে লাগায় দিহান।
এদিকে হেফাজতে নেওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল ঘটনার দিনের যে বর্ণনা দিয়েছেন, এর সঙ্গে দিহানের দেওয়া বর্ণনার অনেকটাই মিল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দারোয়ান দুলাল জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা অথবা সাড়ে ১১টার দিকে একজন মেয়ে আসে পান্থনিবাস-২ অ্যাপার্টমেন্টে। দিহান দোতালার ডি-২ ফ্ল্যাট থেকে নিজেই নেমে এসে ওই মেয়েকে বাসায় নিয়ে যান। তবে ওই মেয়ে প্রবেশের বিষয়ে তিনি রেজিস্টার্ড বইয়ে কোনো তথ্য লেখেননি বলে জানান দুলাল।
দুলাল আরও জানান, প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুপুর ১টা অথবা সোয়া ১টার দিকে দিহান ওই মেয়েটিকে পাঁজাকোলা করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনেন। গ্রাউন্ড ফ্লোরে পার্কিংয়ে থাকা গাড়ির পেছনের সিটে তোলেন। এরপর দিহান নিজেই গাড়ি চালিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে যান। এরপর ওই মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ভয় পেয়ে যান। এ কারণে তিনি ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পালিয়ে যান।
ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের এসি আবুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই নজরদারিতে ছিলেন ওই বাসার দারোয়ান দুলাল। ঘটনার যথার্থতা যাচাইয়ে তার প্রয়োজন বোধ করায় তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তার দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে দিহানের দেওয়া বর্ণনা মিলিয়ে দেখা হবে। যেহেতু দারোয়ান এজাহারভুক্ত আসামি নন, তাই তাকে আটক রাখা হবে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে যদি মনে হয় ছেড়ে দেওয়া উচিত, তাহলে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে বন্ধু দিহানের মোবাইল কল পেয়ে বাসা থেকে বের হন রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিন। এরপর কিশোরীকে কলাবাগানের ডলফিন গলির নিজের বাসায় নিয়ে যান দিহান। ফাঁকা বাসায় তাকে ধর্ষণ করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।