জুমবাংলা ডেস্ক : প্রায় বছর তিনেক আগে দিনমজুর বাবার সঙ্গে ঢাকা যাওয়ার পথে রাস্তায় হারিয়ে যায় ছেলেটি। মাস তিনেক আগে ভারতে ছেলেটির খোঁজ মেলে। এরপর থেকে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তার মা। এদিকে ছেলেকে হারিয়ে বাবা সোরাব আলী প্রায় পাগল হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া মাধবরাম কাচিচর গ্রামে বাসিন্দা ছেলে হারা দিনমজুর সোরাব আলী ও মরিয়ম বেগম দম্পতি সরকারের কাছে ছেলেকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
নিজের ভিটে মাটি না থাকায় স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আত্নীয়-স্বজনদের দেয়া ৩/৪ শতক জমিতে কোনরকমেই ছাপড়া ঘর তুলে দিন কাটাচ্ছিলেন সোরাব আলী। এর মধ্যেই ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যার পর কর্মহীন হয়ে পড়েন তিনি। তাই কাজের সন্ধানে একমাত্র ছেলে মোফাচ্ছেল হককে (১৬) নিয়ে ঢাকা রওনা দেয়। পথে বাসের যাত্রাবিরতির সময় সন্তানকে হারিয়ে ফেলেন সোরাব আলী। এরপর অনেক খোঁজ করেও সন্তানের সন্ধান পায়নি পরিবারটি।
দীর্ঘ তিন বছর পরে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তাদের সন্তান বর্তমানে ভারতের আলীপুরদুয়ার বল্লোক কালচিনি জেলার জায়গাও থানার ব্লেস ফাউন্ডেশন রিহ্যাভিলিটিটেশন সেন্টার ফর (ড্রাগ এ্যালকাহোল) ডিপেন্ডেন্ট পারসন, রামগাঁও ফায়ার স্টেশন নিউ রোড জায়গাও- ৭৩৬১৮২ স্থানে রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মরিয়ম বেগম।
মরিয়ম বেগম বলেন, কাজের সন্ধানে গিয়ে ছেলেকে হারিয়ে ফেলায় তার বাবা প্রায় পাগল হয়ে গেছে। তখন থেকেই পাগল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কোন কাজ কর্ম করতে পারে না সে। অভাবের তাড়নায় মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই। এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে স্বামী-স্ত্রী খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। অনেক খুঁজেও ছেলেকে কোথাও পাওয়া যায়নি। স্থানীয় এক বাসিন্দার আত্মীয় ভারতে থাকে। প্রায় তিন মাস আগে তার মাধ্যমেই আমার মোফাচ্ছেলের সন্ধান আসে। সেই লোক আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলে নাম ঠিকানা পায়। পরে তিনি ফেসবুকে ছবি দিলে আমরা তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হই। আমি আমার বুকের ধনকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে জোড় দাবি জানাচ্ছি।
ব্লেস ফাউন্ডেশন রিহ্যাভিলিটিটেশন সেন্টার ফর (ড্রাগ এ্যালকাহোল) ডিপেন্ডেন্ট পারসন সংস্থার জমির মালিক দাদিরাম বসুনিয়া বলেন, আমরা প্রায় তিন বছর আগে পথ থেকে ছেলেটিকে নিয়ে এসে লালন-পালন করছি। সে এখনও আমাদের কাছেই রয়েছে। ছেলেটির কাছ থেকেই ওর বাবা-মায়ের পরিচয় পাই। বাংলাদেশে আমার পরিচিত অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওর বাবা-মায়ের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে এই বিষয়ে অনেকের সঙ্গে কথা হলেও কেউ ছেলেটিকে তার পরিবারের নিকট ফেরত দেবার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি। দুই রাষ্ট্রের অ্যাম্বাসির মাধ্যমে ছেলেটিকে ফেরত পাঠানো সম্ভব বলে তিনি জানান।
এই বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারটি আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। ছেলেটি হারিয়ে যাবার প্রায় তিন বছর হলো। পরে জানতে পারি মোফাচ্ছেল হক ভারতে আটকা আছে। আমি ওই দরিদ্র বাবা-মায়ের হয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, তাদের সন্তানকে যেন ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এই বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন পেয়েছি। আমি তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।