জুমবাংলা ডেস্ক : রংপুরের তারাগঞ্জে বৃদ্ধ বাবা ও মায়ের শেষ সম্বল বসতভিটার দুই শতক জমি ছেলেদের নামে লিখে না দেয়ায় ঘরের মধ্যে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুধু তাই নয়, পানি যেন খেতে না পারে এজন্য টিউবওয়েলটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ঘর থেকে যেন বাহিরে বের হতে না পারে সেজন্য রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তাদের দুই ছেলে আখতারুজ্জামান (৩২) ও আমিনুর ইসলাম (৩৪)।
অমানবিক এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের কুটিপাড়া গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃদ্ধ আবু সাইদের বয়স প্রায় শত বছর ছুঁই ছুঁই। এক সময় জমি-জমা ও প্রভাব ছিল অত্র এলাকায়। ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন; তারা সুখের সংসার করছেন। তবে তাদের সুখের সংসারে দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বড় দুই ছেলে আখতারুজ্জামান ও আমিনুর ইসলাম। দুই ভাই মিলে বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাতে বৃদ্ধ বাবার কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে জমি লিখে নিয়ে সেই জমি-জমা বিক্রি করে দিয়েছেন।
অবশেষে বৃদ্ধ মা-বাবার শেষ সম্বল দুই শতক জমির ওপর চোখ পড়ে দুই পুত্রের। দুই শতক জমি তাদের নামে লিখে দেয়ার জন্য দীঘদিন থেকে মা-বাবাকে মানসিক নির্যাতন ও হুমকি প্রদান করে আসছিল দুই ভাই। ছেলেদের এমন আচরণে বাবা আবু সাইদ হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বর্তমানে তিনি কোনো কথা বলতে পারেন না। শুধু অপলক চেয়ে চেয়ে দেখেন আর কাঁদেন। গত মঙ্গলবার বৃদ্ধ তার শেষ অবলম্বন দুই শতক জমি লিখে দিতে না চাইলে দুই ছেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তায় বাঁশের বেড়া লাগিয়ে দেয়। যাতে বৃদ্ধ মা-বাবা বাড়ি থেকে বের হতে না পারেন।
ছেলেদের নির্মম নিষ্ঠুর আচরণ এখানেই শেষ নয়; যাতে পানি পান করে জীবন বাঁচাতে না পারেন এজন্য পানি খাওয়ার টিউবওয়েলটি ভেঙে ফেলে বাড়িতে ৩ দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে। বৃদ্ধ মা-বাবার সঙ্গে ছেলেদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রামের লোকজন বৃদ্ধের মেয়েদের খবর দেন।
পরে মেয়েরা এসে এমন অবস্থা জানতে পেরে পুলিশকে অবগত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় বৃদ্ধা মা জামিলা খাতুন দুই ছেলেকে অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ করেছেন।
বৃদ্ধা মা জামিলা খাতুন জানান, তার স্বামীর এক সময় প্রচুর ধন-সম্পদ ছিল। তার দুই ছেলে বিভিন্ন সময়ে তাদের হুমকি ধামকি দিয়ে ও তাদের ওপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করে সব জমি পর্যায়ক্রমে তাদের নামে জোরপূবর্ক লিখে নেয়।
কিন্তু তারা মা-বাবা ও ছোটভাইকে ঠকিয়ে নিয়ে জমিগুলো রাখতে পারেনি। কম দামে বেশিরভাগ জমি বিক্রি করে দিয়ে এখন তারাও নিঃস্ব। এখন দুই শতক জমি লিখে নেয়ার জন্য তাদের ওপর অত্যাচার শুরু করেছে।
তিনি চোখ-মুখ মুছতে মুছতে বলেন, এই শেষ সম্বলটুকু তাদের নামে লিখে দিলে অসুস্থ স্বামী ও নাবালক ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাব। আমি দুই ছেলের বিচার দাবি করছি। সেই সঙ্গে দুই ছেলের হাত থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা কামনা করছি।
এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানার ওসি শুকুর আলী বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তাদের ছেলেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।