ছেলের নামের শেষে কিশোর যোগ করে দিয়েছিলেন মা নিজেই

বিনোদন ডেস্ক : ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান/সে দিন থেকে গানই জীবন, গানই আমার প্রাণ’- গানটি যেন নিজের গায়কী জীবনের প্রতিচ্ছবি। ‘নয়নের আলো’ সিনেমায় গাওয়া গানটি তার জীবনেরই যেন প্রতিচ্ছবি। সব সময় গান নিয়েই থেকেছেন প্রয়াত কিংবদন্তী শিল্পীএন্ড্রু কিশোর। জীবনের শেষ সময়টুকুও তার কেটেছে সেই গানকে ভালোবেসে। তবে গানে বাবার কথা থাকলেও বাস্তবে তার মন্ত্রণাদাতা ছিলেন মা।

কিংবদন্তী শিল্পী এন্ড্রু কিশোর নিজেই জানিয়ে ছিলেন, মা শিক্ষিকা মিনু বাড়ৈ জানতেন একদিন তিনি অনেক বড় শিল্পী হবে। কিশোর কুমারের গান খুব পছন্দ করতেন মা। তাই তো ছেলের নামের শেষে কিশোর যোগ করেছিলেন।

বাংলাদেশের গানের জগতের এক নক্ষত্র ছিলেন। প্লেব্যাক জীবনে হাজারো গানের দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। শিল্পী দীর্ঘ গায়কী জীবনে সূবর্ণ সময় যেমন দেখেছেন তেমনি দেখেছেন খরাও।

তবুও নিজেকে পরিচয় দিতেন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। গানই ছিলো তার জীবন, গানেই তাকে দেখা যেত প্রাণবন্ত। নিজের বিষয়ে বলেছিলেন, জীবনটাকে খুব কাছে থেকে দেখি। খুব ক্ষুদ্র আকারে চিন্তা করি। বউ, বাচ্চা আর ঘরেই সীমাবদ্ধ আমার চিন্তা। আমাকে এ ব্যাপারে স্বার্থপর বলা যায়। আমি আমাতেই সুখী।

বাংলার কোটি মানুষের সুখ-দুঃখ ও আবেগের সঙ্গী হয়ে ওঠা এন্ড্রু কিশোরের জন্ম ৪ নভেম্বর ১৯৫৫ সালে। সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সঙ্গীত জীবনের যাত্রা প্রাথমিকভাবে আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর তিনি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক, দেশাত্মবোধকসহ প্রায় সব ধারার গানে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন। চলচ্চিত্রে এন্ড্রু কিশোর গান গাওয়া শুরু করেন ১৯৭৭ সালে। ছবির নাম ‘মেইল ট্রেন’। এই ছবিতে তিনি গেয়েছিলেন ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানটি। চলচ্চিত্রে এটাই ছিলো তার প্রথম গান। সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন আলম খান। কিন্তু এন্ড্রু কিশোর সবার কাছে পৌঁছে যান দুই বছর পর। তার এই গান ছিলো ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’। মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা গানটির সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন আলম খান।

১৯৭৭ সালে ঢাকায় একটি ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। সেখানে ‘সহেলি ও সহেলি’ গানটি গান। তবে সে গান কোথাও প্রকাশিত হয়নি। এরপর আলম খানের হাত ধরে উঠতে থাকেন বাংলার এই প্লেব্যাক সম্রাট।

বাংলাদেশকে তিনি হাজারো প্লেব্যাক গান উপহার দিয়েছেন। দেশের বহু চলচ্চিত্রের গানে তার কণ্ঠ হৃদয় ছুঁয়েছে হাজারো সঙ্গীত প্রিয় বাঙালীর। যেজন্য তিনি ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত।