জুমবাংলা ডেস্ক : মা ঝর্ণা বেগমের কান্না থামছে না। ছেলে অমি’র কথা বলে অঝরে কাঁদছেন আর বিলাপ করছেন। বার বার ছেলের কথা বলে বাড়িতে আসা লোকজনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছেন। একই সঙ্গে ছেলে হত্যার বিচার চাচ্ছেন সন্তান হারা এই মা। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারো নেই। বাড়িতে ছুটে আসা মানুষও চোখের জল সংবরণ করতে পারছেন না। গোটা গ্রাম যেন শোকে মুহ্যমান। এলাকাবাসীর একটাই দাবি, অমি’র খুনিদের বিচার করা হোক।
বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার পূর্ব কালিনগর এলাকায় নিহত অমি’র বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে এমন শোকাবহ পরিবেশ চোখে পড়েছে। নিখোঁজের পাঁচদিন পর বুধবার (৬ নভেম্বর) আকিব ইসলাম খান অমি’র (১২) মরদহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বেলা ১২টা দিকে পৌরশহরের গূর্বকালিনগর মহল্লায় পুলিশ এলাকা তল্লাশির সময় ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত অমি শহরের পূর্ব কালিনগর এলাকায় আব্দুর রউফের ছেলে। অমি স্থানীয় শাহিন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে অমি বাড়ি থেকে বেড় হয়ে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে যায়। সন্ধ্যা পার হয়ে গেলেও সে বাড়িতে ফিরে না এলে সারারাত বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান না পেলে পরদিন রোববার (৩ নভেম্বর) অমি’র বাবা আবদুর রউফ নালিতাবাড়ীর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
গত পাঁচ দিনে অমি’র সন্ধান চেয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিংও করা হয়। এছাড়া অমি’র সন্ধানে সারা দেশে পুলিশ অডিও বার্তা পাঠায়।
খোঁজাখুঁজির পর অমি’র বাবা আবদুর রউফ বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেন।
এরা হলেন- পূর্ব কালিনগর এলাকার রাকিবুল ইসলাম (২২), মো. জসিম উদ্দিন (২৪) ও মো.সিয়াম (২২)।
বুধবার সকালে ১১টার সময় পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আশরাফুল আজিম অমি’র বাড়িতে আসেন। তিনি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জাহাঙ্গীর আলম ও ওসি বছির আহমেদ বাদলসহ পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পূর্ব কালিনগর এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালান। পরে তল্লাশি চালানোর সময় অমি’র বাড়ির ২০০ মিটার দূরে ধানক্ষেতে বস্তাবন্দি অবস্থায় তার লাশের সন্ধান পান পুলিশ।
পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন, অমি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এলাকায় তল্লাশির অনুরোধ জানালে তিনি মামলা ছাড়া তল্লাশি করতে পারবেন না বলে জানান।
পরে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) মামলা দায়ের করলে বুধবার (৬ নভেম্বর) পুলিশের তল্লাশিতে নিজ বাড়ির সামনের ধানক্ষেত থেকে অমি’র বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এলাকাবাসী অমি’র হত্যাকারীদের চিহ্নিত হয়ে দ্রুত শাস্তি দেওয়ার জন্য দাবি জানান। এসময় পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম আকিবের বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করেন। আকিবের মা-বাবা ও পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী থানার ওসি বছির আহমেদ জানান, অমিকে উদ্ধার চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। গত মঙ্গলবার রাতে মামলা করা হয়েছে। রাতেই এজাহারভুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গতকাল বুধবার (৬ নভেম্বর) খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় অমি’র লাশ বাড়ির পাশের ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এ পর্যন্ত সাতজনকে আটক করা হয়েছে। সূত্র : সময়টিভি অনলাইন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।