
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণ এখন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন নিয়েই ভাবছে, কথিত গণভোট নিয়ে নয়। তাঁর মতে, গণভোট আয়োজন রাষ্ট্রের জন্য অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়, বরং এই অর্থ কৃষক ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত।
বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, “দু-একটি রাজনৈতিক দলের আবদার মেটাতে অকারণ গণভোট করতে গেলে রাষ্ট্রকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে। দেশের আলু চাষিরা এখন লোকসানে—তাদের কাছে আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া ‘গণভোটে’র চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “গণভোটের আড়ালে পতিত-পরাজিত পলাতক অপশক্তিকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে কি না, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ ও এলডিপি চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম।
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানউল্লাহ, এ বি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসান মাহবুব জুবায়ের, গণ ফোরাম সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাত্তার পাটোয়ারী।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করার দিন। বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে গেলে একটি উক্তি মনে আসে- ‘অতীত নিয়ে সবসময় পড়ে থাকলে এক চোখ অন্ধ, অতীতকে ভুলে গেলে দু’চোখই অন্ধ’। সুতরাং আমাদের যেমন- সর্বক্ষণ ইতিহাস চর্চায় থাকার দরকার নেই, অপরদিকে ভবিষ্যতের পথ চলায় ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করাও কিন্তু আরেকটি ঐতিহাসিক ভুল।
তারেক রহমান বলেন, দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের পথ ধরে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত সেই অপশক্তি পরবর্তীতে পুনরায় মহাজোটের নামে একজোট হয়ে দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বিডিআর পিলখানায় পরিকল্পিত সেনা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রাখতে চেয়েছিল। জনগণের ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে।
তিনি আরও বলেন, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বীর জনতার গণ অভ্যুত্থানে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় পর দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে।
বিএনপি মনে করে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। ২০২৪ ছিল দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার। তিনি বলেন, দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী চক্রের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে গিয়েও অগণিত মানুষ জীবন দিয়েছেন। শুধু জুলাই-আগস্টেই শহীদ হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ। ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনে ছাত্র-জনতা-নারী-পুরুষ-কৃষক-শ্রমিক সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কেন রাজপথে নেমে এসেছিলেন? জনগণ কিন্তু রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই রাজপথে নেমে এসেছিলেন। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, অবশ্যই কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা রাজনৈতিক দরকষাকষি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য হাজারো লাখো মানুষ রাজপথে জীবন বিলিয়ে দেয়নি।
তারেক রহমান বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র যখন প্রস্তুত হচ্ছে- তখন কয়েকটি রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কার্যত গণতন্ত্রকামী জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
আবারো ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনের সহযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বর্তমান দুর্বল অন্তর্বর্তী সরকারকে হুমকি-ধমকি না দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জনগণের মুখোমুখি হোন। আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মনে রাখা দরকার- নিজ নিজ দলীয় সমর্থক নেতা-কর্মীদের বাইরেও অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় এক বিশাল-সংখ্যক জনগোষ্ঠী রয়েছেন। এই লাখো কোটি অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা বাস্তবায়নের দিকে নজর দেওয়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, মাসের পর মাস ধরে দেশের জনগণ দেখে আসছিল অনেক রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় পার করে দিয়েছেন। এসব আলোচনায় অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় সেই বিশাল-সংখ্যক জনগোষ্ঠীর নিত্যদিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কি আলোচিত হয়েছিল? আমন্ত্রিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা করেছিলেন? নারীর নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান, তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছিল? দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর স্বল্প আয়ের মানুষ কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিটি দিনের জীবন-যুদ্ধের কথা কি রাজনীতিবিদদের আলোচনায় তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছিল?
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশে শুধু কোটা সংস্কার নয়- নিরাপদ সড়কের জন্যও তুমুল আন্দোলন হয়েছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে দেশে সড়ক পথে কমপক্ষে ৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী-শিশু ও পথচারী। আহত হয়েছেন ১৩ হাজার মানুষ। বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহতদের তালিকায় বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে শত শত দফা নিয়ে আলোচনা হলেও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি কি আলোচনায় জায়গা করে নিতে পেরেছিল? এসব প্রশ্ন কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয়। বরং একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? আমাদের রাজনীতি তাহলে কাদের জন্য?
দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তিনি কিছু প্রশ্ন ও কিছু উপলব্ধির কথা শেয়ার করে বলেন, প্রচলিত রাজনীতির গুণগত সংস্কার চাইলে পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে জননিরাপত্তা ও জনগণের জীবন-ঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো রাজনীতিবিদদের কর্ম পরিকল্পনায় আরও গুরুত্ব পাওয়া দরকার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় আরও অধিক মনোযোগী হওয়া দরকার।
আরও কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, দেশে এবার ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলুর ফলন হয়েছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। কারণ আলুর উৎপাদন খরচ এবং হিমঘরে রাখতে প্রতি কেজির পেছনে খরচ পড়ছে প্রায় ২৫ থেকে ২৭ টাকা। অথচ আলু চাষিরা এখন অর্ধেক দামেও তা বিক্রি করতে পারছেন না। আলু চাষ করে চাষিরা এবার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
অপর দিকে আমরা যদি দেখি দু-একটি রাজনৈতিক দলের আবদার মেটাতে কথিত অকারণ গণভোট করতে হলেও/রাষ্ট্রকে প্রায় সমপরিমাণ টাকা গচ্চা দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানের মুখোমুখি এসব আলু চাষির কাছে এ সময়ে ‘গণভোটে’র চেয়ে আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।
পিঁয়াজ উৎপাদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে চাহিদার চেয়েও বেশি পিঁয়াজ উৎপাদনের সক্ষমতা কৃষকদের রয়েছে। তারা যথেষ্ট পরিমাণ পিঁয়াজ উৎপাদনও করছেন। তবে দেশে পিঁয়াজ সংরক্ষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর পিঁয়াজ আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কথিত ‘গণভোট উৎপাদনের’ চেয়ে সেই টাকায় পিঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপন কৃষকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ভুক্তভোগী কৃষকদের বলার জায়গা কোথায়?
তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে দেশে গার্মেন্টশিল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। এত সংখ্যক নারী যদি আট ঘণ্টার পরিবর্তে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য হয় তাহলে তাদের বাকি কর্ম-ঘণ্টার টাকা কে দেবে? নারীর কর্ম-ঘণ্টা কমানোর কথা বলে চাকরিদাতাদের কৌশলে নারীদের চাকরি না দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে কি না? দেশের নারী সমাজের মধ্যে এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে পড়ছে- এমন পরিস্থিতিতে কর্মজীবী নারীদের মনে ছড়িয়ে পড়া চাকরি সংকোচনের আতঙ্ক কাটানো এ মুহূর্তে কথিত ‘গণভোটে’র চেয়ে বেশি দরকার।
বিএনপির এই কাণ্ডারি বলেন, দেশে বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে বলা হয়েছে- দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৮ শতাংশ। আরও ১৮ শতাংশ মানুষ যে কোনো সময় গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। দেশে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছে। দেশে উচ্চমাধ্যমিক এবং গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী প্রতি পাঁচজনের একজন বেকার। তবে আমি মনে করি বর্তমান গ্লোবাল ভিলেজে শিক্ষা-দীক্ষায় টিকে থাকতে হলে আমাদের ‘তথাকথিত গণভোট’ নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে শিক্ষা সংস্কার নিয়ে গবেষণা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, পলাতক লুটেরা বাহিনীর বেপরোয়া লুটপাটের পর দেশের ব্যাংকিং সেক্টর এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দেশের কমপক্ষে ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। জনগণকে ভয় দেখাতে চাই না। তবে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে নাজুক হয়ে উঠছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ নয়।
গত কয়েক মাসে রপ্তানি খাতেও নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ব্যবসায়ী সমাজ এবং বিদেশে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরাও বলছেন, দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে প্রয়োজন জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি স্থিতিশীল সরকার। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নানা শর্ত দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করতে চাইছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির অর্থ একদিকে নির্বাচন না করেই রাষ্ট্রযন্ত্রে খবরদারির সুযোগ গ্রহণ, অপর দিকে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের পথ সুগম করা। পলাতক স্বৈরাচারীর সহযোগীরা গত কয়েকদিন খোদ রাজধানীতে যেভাবে আগুন-সন্ত্রাস চালিয়েছে- ফ্যাসিবাদ-বিরোধী শক্তির করণীয় সম্পর্কে এটি একটি সতর্ক বার্তা হতে পারে। এটি এখন সবার কাছেই স্পষ্ট যে, ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনের একটি দল ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে ফ্যাসিবাদীদের ছাতার নিচে আশ্রয় নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছিল। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার একইভাবে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনে থাকা দলটির ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছে কি না- এ ব্যাপারে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
গণভোটের আড়ালে পতিত পরাজিত পলাতক অপশক্তিকে রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে কি না তিনি এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, স্বল্প মেয়াদের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণ সব ক্ষেত্রে সার্বিক সফলতা আশা করে না। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্বও নয়। অন্তর্বর্তী সরকার দেশে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ করেছে। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তারা কি একটি রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে? নাকি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকেই অগ্রাধিকার দেবে?
রাজপথের আন্দোলনের সব সঙ্গীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারেক রহমান বলেন, উত্তর কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে ‘ডেমোক্রেটিক পিপল’স রিপাবলিক অব কোরিয়া’। এতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, সংবিধানে লেখা থাকলেই সব কিছু নিশ্চিত হয়ে যায় না। আসলে সবার আগে প্রয়োজন রাষ্ট্র রাজনীতি সম্পর্কে মোনাফেকি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন ও রাজনৈতিক সমঝোতার। প্রয়োজন গণতান্ত্রিক মানসিকতা। সর্বোপরি প্রয়োজন দেশপ্রেম এবং জাতীয় ঐক্য।
তারেক রহমান আরও বলেন, দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জন-সমর্থিত দল হওয়া সত্ত্বেও ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার ব্যাপারে বিএনপি সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। জুলাই সনদে যা অঙ্গীকার করা হয়েছে- বিএনপি এসব অঙ্গীকার রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তবে কোনো রাজনৈতিক দল যদি অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল পেয়ে যা ইচ্ছে তাই আদায় করে নিতে চায় কিংবা বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে- সেটি শেষ পর্যন্ত তাদের নিজেদের জন্যই রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কি না সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সঙ্গীদের প্রতি আহ্বান, অযথা পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব-বিরোধী চক্রান্ত নস্যাৎ এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে সংঘটিত সিপাহি জনতার বিপ্লব উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এ আলোচনা সভায় তারেক রহমান স্বাধীনতার ঘোষকের একটি কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য আমাদের শক্তি- বিভাজন আমাদের দুর্বলতা’। সবশেষে ‘দিল্লি নয় পিন্ডি নয়- নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার বক্তব্য শেষ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



