আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গণতন্ত্রের জন্য ক্ষুধিত জনতার কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন বেলারুশের বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- যদি আমরা সৎ সাংবাদিকতা করতে না পারি, তাহলে কাজ বন্ধ করে দেবো। এ কথা বলেই রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন স্টেশনের কয়েক শত সাংবাদিক ধর্মঘট পালন করছেন। ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর ভোট চুরির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে পুরো দেশ। তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে সারা বিশ্ব থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখছেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
৯ই আগস্টে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট চুরি করে ফল পাল্টে ফেলা এবং সেন্সরশিপের প্রতিবাদে নজিরবিহীন বিক্ষোভ হচ্ছে বেলারুশে। সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ব্যতিক্রমী খবর প্রচার করা হয়েছে। তাতে দেখানো হয়েছে, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন-বেলারুশ ওয়ান এর স্টেশন ফাঁকা। আন্দোলনের আঁচ এখানে লেগেছে। এর কর্মীরা বিক্ষোভকারী জনতার সঙ্গে সামিল হয়েছেন। এই টেলিভিশন স্টেশনে কাজ করেন ২০০০ কর্মী। সোমবার তার মধ্যে প্রায় ৩০০ সাংবাদিক ৫ দফা দাবি দিয়েছেন। যদি এসব দাবি পূরণ করা না হয়, তাহলে তারা কাজে ফিরবেন না। এই ৫ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম হলো নতুন নির্বাচন দেয়া এবং টেলিভিশন থেকে সেন্সরশিপ প্রত্যাহার করা।
ডকুমেন্টারি বা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা কেনিয়া লুতস্কিনা এমন দাবিতে স্বাক্ষরকারীর অন্যতম। সোমবার বিকেলে তাকে ওই টেলিভিশন স্টেশনের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে বাকি সহকর্মীদের আহ্বান জানাতে দেখা যায়। তাদেরকে তিনি একই দাবিতে স্বাক্ষর করতে আহ্বান জানান। লুতস্কিনা আরো বলেন, যারা ধর্মঘট পালন করছেন, তারা অফিসে যাচ্ছেন। কিন্তু কাজ করছেন না। অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগ দিতে চেয়েছেন। আবার অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি আরো বলেন, বেশির ভাগ কর্মী বলছেন, তাদের একটাই সমস্যা। তা হলো, দেশে আর কোনো টেলিভিশন স্টেশন নেই, যেখানে কাজ করা যায়। যেসব টেলিভিশন স্টেশন আছে, তার সবটাই সরকার নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে যারা ধর্মঘট করছেন তাদেরকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
সদ্য অনুষ্ঠিত জালিয়াতির নির্বাচনের আগেই কিছু কর্মচারী ওয়াকআউট করেছেন। লুকাশেঙ্কো তার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের যেভাবে জেলে ঢুকিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন, ব্যাপক জালিয়াতির এক নির্বাচন করেছেন, তাতে সাংবাদিকরা এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণের অধীনে বর্তমান সম্পর্ক বিষয়ক কর্মসূচি নিয়ে সপ্তাহে দুটি প্রোগ্রাম করতেন বিশেষ প্রতিনিধি আলেকজান্দার লুচোনোক। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে এ দায়িত্বে দেড় বছর। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেছেন, ওই টেলিভিশন স্টেশনে যারা কাজ করেন তাদের বেশির ভাগই একটি ভাল ক্যারিয়ার গড়তে চান। কিন্তু সেখানে যে আদর্শ ধারণ করা হয়, তার বেশির ভাগই লুকাশেঙ্কোর সমর্থকদের। তারা কিছুই বিশ্বাস করতে চায় না। তারা চায় লুকাশেঙ্কোকে ক্ষমতায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্টের প্রশাসন থেকে সরাসরি স্পর্শকাতর রাজনৈতিক টপিকস চাপিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হতো। অবশ্যই এর ফলে সেলফ-সেন্সরশিপ করতে হতো।
এই টেলিভিশন স্টেশন থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে যেভাবে রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয় তাতে গভীরভাবে হতাশ লুচোনক। করোনা ভাইরাসকে একটি মানসিক ইস্যু বলে মনে করেন প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো। তিনি মনে করেন, এই মানসিক সমস্যা মানুষকে কাজ থেকে বিরত রেখেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।