জুমবাংলা ডেস্ক : রেলে সীমাবদ্ধতা অনেক, তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেছেন, জনবল সংকটের কারণে রেল সেবায় আশানরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
শনিবার (৯ মার্চ) রেল ভবনে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা-২০২৪’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রেল মন্ত্রণালয় ও রিপোর্টার্স ফর রেল অ্যান্ড রোড (আরআরআর) যৌথভাবে এই আয়োজন করে।
কর্মশালায় রেলের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প, সংকট, ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এমনকি নিজেদের নানা সীমাবদ্ধতাসহ সমন্বহীনতার কথাও ওঠে আসে কর্মকর্তাদের আলোচনায়। জনপ্রিয় গণপরিবহন হিসেবে রেলকে এগিয়ে নিতে মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাই গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন। সেইসঙ্গে তথ্য প্রাপ্তিতে গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে ৫৯ জেলা। পার্বত্য অঞ্চল ও ভোলা পর্যায়ক্রমে এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে। গেল ১৫ বছরে প্রকল্পের চেয়ে রক্ষণাবেক্ষণে বেশি জোড় দেওয়া সম্ভব হয়নি স্বীকার করে রেল কর্মকর্তারা জানান, মূলত বাজেট ঠিক করে দেওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণে বেশি মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিন হাজার ৫৫৩ কিলোমিটার রেলপথের দৈর্ঘ্য উল্লেখ করে কর্মশালায় জানানো হয়, সারা দেশে তিন হাজার ১১১টি লেবেল ক্রসিংয়ের মধ্যে অনুমোদনহীন এক হাজার ২২৫টি। লেকোমোটিভ ৩০৯টি। যাত্রীবাহী কোচের সংখ্যা এক হাজার ৯৯৫টি। মালবাহী ওয়াগন তিন হাজার ৩৪টি। ৩৩৭টি স্টেশনে রয়েছে চার ধরনের সিনালিং ব্যবস্থা। বর্তমানে রেল স্টেশনের সংখ্যা ৫০৭। প্রতিদিন যাত্রীবাহী ট্রেন চলে ৩৬৭টি। মাসে মোট যাত্রী বহন ৭৩.৫ মিলিয়ন। দিনে মালবাহী ট্রেন চলে ৪২টি। বার্ষিক পরিচালন আয় এক হাজার ৭৮৩ কোটি ও ব্যয় তিন হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
বর্তমানে রেলওয়েতে ২৩ হাজার ২৩৪টি শূন্যপদ থাকার কথা তুলে ধরে কর্মশালা জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানের ভূ সম্পত্তির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮২০ একর। অবৈধ দখলকৃত রেলভূমি দুই হাজার ৪০১ একরের বেশি। বর্তমানে ১১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ১০০ স্টেশনে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে বছরে রেলওয়ের আয় হচ্ছে এক কোটি ২৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সারা দেশে বর্তমানে ৩৭টি ট্রেন বেসরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলে কর্মশালায় জানানো হয়। গুরুত্বপূর্ণ করিডোরে সিঙ্গেল লাইন, সেতু ক্যাপাসিটির সীমাবদ্ধতা, রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিবন্ধকতাসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৫টি প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রেলের চলমান প্রকল্পের সংখ্যা ২৮। চলতি বছরের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে যশোর ও খুলনার সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই রুটের দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। সময় বাঁচবে চার ঘণ্টা। জুনের মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আরও তিন জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে কমিউটার ট্রেন চালু হবে। আগামী ১২ মার্চ ঢাকা থেকে বুড়িমারি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করার কথাও জানান রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম।
তিনি বলেন, ঢাকা-সরসিংদী এবং ভাংগা-ঢাকা/টংগী পর্যন্ত কমিউটার ট্রেন দ্রুত চালু করা হবে। ১৫ মার্চ খুলনা-মংলা রেলপথ আনুষ্ঠানিক রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গণপরিবহনকে লক্ষ্য করে রাজনৈতিক সহিংসতা করে লাভ কী এমন প্রশ্ন রেখে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, যারা এসব কাজ করছে সেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষ বিক্ষুব্ধ হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষের ক্ষতি করার লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করলে জনগণ ঐ রাজনৈতিক দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। রেলে যাত্রী নিরাপত্তার সার্বিক বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, রেলে আমার ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। মানুষের কাছে রেলসেবা পৌঁছানো আমার বড় চাওয়া।
টিকিট কালাবাজারিদের ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টার কথা জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, আসন্ন ঈদে যাত্রীদের কালোবাজারিমুক্ত টিকিট সেবা দেওয়ার চেষ্টা করব। দায়িত্ব পালনে কোনোরকম অবহেলা সহ্য করা হবে না। যখন বুঝব আর কাজ করতে পারব না, তখন নিজে থেকেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াব।
তিনি বলেন, রেল পরিচালনায় আমাদের বড় সংকট জনবল। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, রেলের জমি কে দেখল করেছে- তা দেখার দরকার নেই, দখল হওয়া জমি ফিরিয়ে আনতে হবে।
নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা তুলে ধরে রেল সচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, আমাদের চালকরা যে লোকোমোটিভ দিয়ে ট্রেন চালান পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে তা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনার অভাব রয়েছে, এ কথা সত্য। তবে সকল দুর্বলতা কাটিয়ে আস্থা অর্জনের চেষ্টা চলছে। ব্যর্থতার দায় নিয়ে মন্ত্রী-সচিব ও মহাপরিচালকের চলে যাওয়া তো সমাধান নয়। রেলে গোপনীয়তা বলতে কিছু নেই। গণমাধ্যমে প্রতিবেদনের কারণে রেলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমার কাছে তা মনে হয় না। সত্য তো তিতে হয়। সত্য কথাই গণমাধ্যমে আসছে। সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক ভুলত্রুটির মধ্যে ভালো কিছু করার চেষ্টা করছি। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত গতির ট্রেন সার্ভিস চালু এই মুহূর্তে সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রেনের গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো লেবেল ক্রসিং। ১০০-১২০ গতিতে ট্রেন চললে দুর্ঘটনা বাড়বে। মূলত গ্রেড অপারেশন ছাড়া দ্রুতগতির ট্রেন সার্ভিস পরিচালনা সম্ভব হবে না। কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন আরআরআর সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।