জুমবাংলা ডেস্ক : রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে রীতিমতো অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা। ডাকাতি, গণছিনতাই, লুট, খুনসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা মোহাম্মদপুরে সংঘটিত হচ্ছে না। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা থেকে লুট করা অস্ত্র চলে যায় অপরাধীদের হাতে।
এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত করছে সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। এমন পরিস্থিতি তটস্থ হয়ে উঠেছে মোহাম্মদপুরের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এই অবস্থায় জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে মোহাম্মদপুরে সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে র্যাব ও যৌথ বাহিনী। অভিযানে অর্ধশত অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে র্যাব-২ এর সিনিয়র এএসসপি শিহাব করিম গণমাধ্যমকে জানান, রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৪৫ অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন সরাসরি ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত, ২ জন দোকানে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ৪০ জন সন্দেহভাজন ছিনতাইকারি এবং অন্যজন হলেন-নবীনগর হাউজিং ইউনিট আওয়ামী লীগ এর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গ্রেফতার করা হয় বছিলায় ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি সুপার শপে ডাকাতির ঘটনার প্রধান আসামি মো. আসলাম ওরফে রুবেল ওরফে আলমকে (৩২)। এছাড়া র্যাব-২ মোহাম্মদপুরে অপহৃত এক ব্যাক্তিকে সাভার ব্যাংক কলোনী এলাকা থেকে উদ্ধার ও ৪ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে।
গত ২৪ অক্টোবর বসিলা ৪০ ফিট এলাকায় একটি মিনি সুপারশপে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দোকানি ক্যাশে বসে ফোনে কথা বলছিলেন। এমন সময় মুখে মাস্ক পরা কয়েকজন যুবক ধারালো অস্ত্র হাতে দোকানে ঢুকে পড়ে। তাকে মারধর করে ক্যাশ বাক্সের সব টাকা নিয়ে যায়। এছাড়া একটি মোবাইল ব্যাংকিং এর দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দোকানের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, ডাকাত দলের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল।
গত ২১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মোহাম্মদপুর থানার নবোদয় হাউজিং এলাকার ডি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের রোজ গার্ডেন নামের একটি ভবনের সামনে একটি ভয়ানক ছিনতাইর ঘটনা ঘটে। নিজের বাসার পাশেই সেদিন ভয়ঙ্কর ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন এক নারী। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন ওই নারী। এক কিশোর দৌড়াতে-দৌড়াতে তার মাজা থেকে ধারালো ছুরি বের করে ওই নারীর পথরোধ করে। পেছন থেকে আরও ৪ কিশোর নারীকে ঘিরে ধরে। তাদের মধ্যে এক কিশোর হাতে বিশাল দা নিয়ে ওই নারীর ব্যাগ ধরে টানাটানি শুরু করে। চার-পাঁচ জন মিলে অস্ত্র নিয়ে ঘিরে ধরার পরও নারীটি তার ব্যাগ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে একজন নারীর ওড়না ও ব্যাগ ধরে সজোরে টান দেয়। আরেকজন কোপ দেওয়ার ভয় দেখায়। ওড়না ও ব্যাগ নিয়ে নেওয়ার পর নিজের জীবন বাঁচাতে একপর্যায়ে দৌড়ে স্থান ত্যাগ করেন ওই নারী।
এর আগে ২০শে অক্টোবর সকাল পৌনে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেড এলাকায় ফিল্মি কায়দায় নেসলে কোম্পানির গাড়ি আটকিয়ে অস্ত্রের মুখে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে ৬ দুর্বৃত্ত। এছাড়া ঢাকা উদ্যানে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ এ স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনা ঘটে।
৫ আগস্টের পর থেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় অন্তত ৭ জন খুন হয়েছেন। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায়ও জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় দুই গ্রুপে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে এক কিশোরসহ তিনজন আহত হয়েছেন। মোহাম্মদপুরের বছিলা, ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, বসিলা গার্ডেন সিটি, ৪০ ফিট, নবোদয় হাউজিংসহ অন্যান্য এলাকা রীতিমতো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় শনিবার মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনার আলটিমেটাম দিয়েছে ছাত্র-জনতা। ওইদিন বিকালে মোহাম্মদপুর থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই আলটিমেটাম দেন তারা। চুরি- ছিনতাই ডাকাতির ঘটনার প্রতিবাদেই মোহাম্মদপুর থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। এরপর তারা লিখিত দাবি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা পুলিশের কাছে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, গত কয়েকদিনে মোহাম্মদপুরে বেশ কিছু অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। আমরা টহল জোরদার করে প্রতিরোধমূলক সব ব্যবস্থা নিচ্ছি।
রোববার থেকে মোহাম্মদপুরে প্রতি হাউজিংয়ে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।