মোহাম্মদ জাকির হোসেন, রংপুর প্রতিনিধি: রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনে ছয় জন প্রার্থী থাকলেও মাঠে সরব উপস্থিতি রয়েছে কেবল তিন জনের। তারা হলেন, প্রয়াত এরশাদের পুত্র জাপা প্রার্থী রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ, ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এবং বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মাঠ ঘুরে জানা গেছে, সাদ এরশাদ রাজনীতিতে নবাগত হওয়ায় প্রথম দিকে তাকে মেনে নিতে কুণ্ঠা বোধ করতেন খোদ জাপার নেতাকর্মীরা। কিন্তু সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সাদ এরশাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে চলছে। বিশেষ করে রংপুর শহরের বাইরের গ্রাম এলাকাগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন সাদ এরশাদ। তার প্রচারণাও দিনে দিনে জোরালো হচ্ছে এবং গণসংযোগ ব্যাপক সারা ফেলেছে ভোটারদের মাঝে। জাপার যেসব সিনিয়র নেতা এতদিন দূরে ছিলেন তারাও ধীরে ধীরে সাদ এরশাদ এর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। বাকিরাও সাদের পক্ষ নিবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
জেলা জাপা সহ-সভাপতি আজমল হোসেন লেবু বলেন, মান অভিমান ভুলে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে সাদ এরশাদের পক্ষে থাকবে। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহারিয়ার এরশাদের ভাতিজা হলেও তিনি দলের কেউ নন। আসিফের পক্ষে যে দুই-চারজন আছেন তারাও দলের কেউ না। দলের মূল নেতৃবৃন্দ সাদের পক্ষেই কাজ করছে।
অপরদিকে, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গলের পক্ষেই আমরা থাকব। শুক্রবার বর্ধিত সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তারপরই নির্বাচনের মাঠে প্রচারণায় নামবে আওয়ামী লীগ।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ধনজয় কুমার তাপস বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে এ আসনটি জাপাকে ছাড় দেয়া হয়েছে। সেই কারণে লাঙ্গলের প্রার্থীই মহাজোটের প্রার্থী। মহাজোটের প্রার্থীর বাইরে কাউকে ভোট দেয়ার সুযোগ আমাদের নেই।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনি বলেন, সাদ এরশাদ যেহেতু মহাজোটের প্রার্থী, আমরা তার পক্ষেই কাজ করতে চাই। আমরা শুধু কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। কেন্দ্রের নির্দেশনা এলে আমরা মাঠে নামব।
টানা তিন দিন মুষুল ধারায় বৃষ্টির কারণে প্রচার কার্যক্রম ব্যাহত হলেও বৃহস্পতিবার নগরীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গণসংযোগ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। এর মধ্যে সাদ এরশাদ শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানির মোড়, সিটি বাজারে প্রচারণা চালান। এ সময় তিনি প্রেসক্লাবের সামনে মর্ধসভা মন্দির এবং পায়রা চত্বরে কালীমন্দিরে দূর্গা পূজার প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু-বৗদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন।
সাদ এরশাদের প্রচারণায় দলের পক্ষে ছিলেন, জাপার যুগ্ম সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাফিউল ইসলাম সাফি, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুল বারী মুন্সি, যুব নেতা শাহিন হোসেন জাকির প্রমুখ।
গণসংযোগকালে সাদ এরশাদ বলেন, আমার প্রয়াত পিতা জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে এখানকার মানুষ ভালোবাসা দিয়েছেন বলেই তিনি এখানে বারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আমি আমার বাবার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আমাকে যদি বিজয়ী করা হয় তা হলে বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করে নতুন কিছু করার চেষ্টা করব।
তিনি দলমত নির্বিশেষে সকলকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনও বিভক্তি নেই। দল আগের চেয়ে শক্তিশালী। দলের সবাই লাঙ্গলের বিজয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর সেনপাড়াস্থ তার পৈত্রিক নিবাস স্কাই ভিউএ সাংবাদিকদের কাছে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। সেখানে তিনি বলেন, আমার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী রিটা রহমান। নির্বাচনী মাঠে লাঙলের কথা কেউ বলেন না। আগের মতো লাঙলের পক্ষে ভোটের কথা শোনা যায় না। যেখানেই প্রচারণায় যাচ্ছি সেখানেই মোটর গাড়ির পরেই ধানের শীষের কথা শুনছি। রংপুরের জনগণ আমাকেই এরশাদের বৈধ উত্তরসূরী মনে করছেন। পারিবারিকভাবে আমি এরশাদ পরিবারের প্রার্থী। আমাদের পরিবার রাজনৈতিক পরিবার। আমি ছোট বেলা থেকে আমার পরিবারকে জনগণের সেবা করতে দেখেছি। তাই আমার বিশ্বাস আমি নির্বাচনে জয়লাভ করবো।
আসিফ তার ইশতেহারে ঘোষণা করেছেন, নির্বাচিত হলে রংপুরের অবকাঠামো, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, শিশু-কিশোরদের সুস্থ পরিবেশ, ধর্মীয় সহমর্মিতা, রাজনৈতিক সম্প্রতি, অসহায়, বৃদ্ধ, বিধবা, এতিমদের নিরাপত্তা, মাদকমুক্ত সমাজ, কৃষক এবং খামারের উন্নয়ন, শ্রমিক সমাজের উন্নয়ন, সামাজিক সম্প্রতি, সামাজিক আন্দোলন জোরদার, নারী সমাজের উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সমস্যা সামাধান, পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ উল্লেখিত বিষয়গুলোর ওপর কাজ করবেন।
এ সময় রংপুর জেলা শ্রমিক পার্টির সাবেক সভাপতি সামসুল হকসহ জাতীয় পার্টি ও মোটর গাড়ীর কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেন। জনসংযোগকালে তিনি বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।