বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী। বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ। ১৯৪৩ সালে হাতে আঁকা দুর্ভিক্ষ চিত্রমালার মাধ্যমে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের কাছে হয়েছেন বিখ্যাত। তাঁর ছবি যেন কথা বলে। কিছু দিন তার ‘সাঁওতাল দম্পতি’ নিলামে বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি টাকার বেশি দামে। বাংলাদেশের কোনো শিল্পীর শিল্পকর্মের জন্য এটাই সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড। তিনি বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রশিল্পের জনক জয়নুল আবেদিন। তাঁর নামেই বুধ গ্রহের একটা গর্তের নামকরণ করা হয়েছে।
কিন্তু কীভাবে জয়নুল আবেদিনের নাম দেশ–বিদেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেল বুধ গ্রহের বুকে? ২০০৪ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বুধ গ্রহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য মেসেঞ্জার নামে একটি মহাকাশযান পাঠায়। ২০০৮ সালে মহাকাশযানটি বুধ গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যায়।
এই উড়ে যাওয়াকে বলে ফ্লাইবাই। বুধ গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার আগে নভোযানটি পৃথিবীকে একবার, শুক্রকে দুবার এবং বুধ গ্রহকে ঘিরে তিনবার ফ্লাইবাই সম্পন্ন করে। বুধকে ঘিরে প্রথম দুটি ফ্লাইবাইয়ের সময় যানটি গ্রহের উত্তরমেরুর পৃষ্ঠে অনেক গর্ত ও আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ আবিষ্কার করে। আবিষ্কৃত গর্ত ও জ্বালামুখের মধ্যে অন্যতম বড় একটি জ্বালামুখের নাম রাখা হয় ‘আবেদিন ক্র্যাটার বা আবেদিন জ্বালামুখ’।
কিন্তু বুধ গ্রহে গর্তের নামকরণে নাসা কেন জয়নুল আবেদিনকে বেঁছে নিল? আসলে চল্লিশের দশকে সায়েন্স ফিকশন লেখকদের প্রবল প্রভাব জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মহাকাশ গবেষণায় ব্যাপক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এরই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ১৯১৯ সাল থেকে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহের গর্ত ও জ্বালামুখের নাম সায়েন্স ফিকশন লেখকদের নামে করার একটি রীতি প্রচলন করে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়ন (আইএইউ)।
সে কারণে জুলভার্ন, এইচ জি ওয়েলস, আলেক্সান্দার বেলায়েভসহ অনেক লেখকের নামেই চাঁদ ও মঙ্গলের জ্বালামুখের নাম রাখা হয়েছে। পরে আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন এই ধারাকে আরও বিস্তৃত করে। শুধু সায়েন্স ফিকশন লেখক আর বিজ্ঞানীদের নামে নয়, যাঁরা মানবসভ্যতার মানবিক বোধ ও উপলব্ধিকে গভীরতর করেছেন, সেসব শিল্পী-সাহিত্যিকের নামেও নামকরণ করার একটি উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ অনুভব করে মানুষ। তাই আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বুধ গ্রহের গর্তগুলোর নাম করবেন বিখ্যাত শিল্পী ও সাহিত্যিকদের নামানুসারে।
আইএইউর নিয়ম অনুসারে, বুধ গ্রহের নতুন আবিষ্কৃত প্রতিটি গ্রহের গর্ত ও জ্বালামুখের নাম এমন কোনো শিল্পীর নামে হতে হবে, যিনি ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বিখ্যাত ছিলেন এবং গর্ত ও জ্বালামুখ আবিষ্কারের অন্তত ৩ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালের ৯ জুলাই আবেদিন ক্র্যাটারের নামকরণ করা হয়।
আবেদিন জ্বালামুখটির ব্যাস ১১৬ কিলোমিটার। এর ভিত্তি বেশ মসৃণ। বুধে অন্য শিল্পী ও সাহিত্যিকদের নামেও অনেক জ্বালামুখ রয়েছে। রুশ সাহিত্যিক লিও তলস্তয়ের নামে ৫১০ কিলোমিটার ব্যাসের ‘তলস্তয় বেসিন’, জার্মান সংগীতজ্ঞ বিটোভেনের নামানুসারে ৬২৫ কিলোমিটার ব্যাসের ‘বিটোভেন বেসিন’।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।