মো. রাকিবুল ইসলাম, জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পর নোবেলজয়ী ড ইউনূসের নেতৃত্বাধীন গঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দেশ পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এ সময় তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে তাদেরও (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মাকিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-বাংলাদেশ অন্তবতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ যেন- এলেন, কথা বললেন, জয় করলেন!
অন্তবর্তী সরকারের প্রধানের প্রেস উইংয়ের বরাতে জানানো হয়, বৈঠকে ড. ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা জো বাইডেনকে তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, দেশ পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেকোনো সাহায্যে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লব চলাকালীন ও এরপরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি-সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’শীর্ষক আর্টবুক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপহার দেন।
নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনায় দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। কিন্তু নিউ ইয়র্কে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের ঘটনা এটাই প্রথম, যা ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
জাস্টিন ট্রুডোকে আর্ট অফ ট্রায়াম্ফ’উপহার দিলেন ড. ইউনূস
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক ছাড়াও, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাঝধানী ঢাকার দেয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা বর্ণিল ও বৈচিত্রময় গ্রাফিতি চিত্রের একটি সংকলন ‘দ্য আর্ট অফ ট্রায়াম্ফ’ উপহার প্রদান করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, ড. মুহামম্দ ইউনূস নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্ট বইটি হস্তান্তর করেন।
বইটিতে জুলাই-অগাস্ট মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে চলাকালে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহর ও নগরের দেয়ালে তরুণ শিক্ষার্থীদের আঁকা সেরা কিছু শিল্পকর্মের ছবি স্থান পেয়েছে। ইউনূস অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি সংশ্লিষ্টদের এই আর্টবুক প্রকাশের নির্দেশ দেন।
তরুণ চিত্রশিল্পীদের আঁকা-লেখায় ঢাকা সারা দুনিয়ার গ্রাফিতি রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পায়। দেয়ালগুলো পরিণত হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভের বিশাল ক্যানভাসে। সরকারকে নানা শক্তিশালী বার্তা দিতে তারা বিভিন্ন সৃজনশীল ও হৃদয়গ্রাহী শ্লোগান ও কবিতা লিখেছে। এসব বার্তা যেন বিপ্লবের চেতনা ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার শিল্পিত প্রতিফলন। ছাত্ররা দেশবাসীর সমর্থন আদায়ে শিল্পকর্মের মাধ্যমে মুক্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল।
ছাত্রদের মনের মাধুরী মিশিয়ে দেয়ালে-দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা স্বপ্ন-বাসনার এসব নান্দনিক ও নজর-কাড়া চারুকলা গোটা ঢাকা শহরের চেহারা পাল্টে দেয়। এর মধ্যে অনেক গ্রাফিতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। প্রশংসা কুড়ায় সর্বস্তরের মানুষের।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সংবর্ধনায় ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৮টায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়, যেখানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগদানকারী বিশ্ব নেতাদের স্বাগত জানান সংস্থাটির মহাসচিব।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউনুস ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বিরাজ সিং রূপন এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাই কমিশনার ভলকার টুর্কসহ অন্যান্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে অধ্যাপক ইউনূস গতকাল সোমবার নিউইয়র্ক পৌঁছান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।