স্পোর্টস ডেস্ক : কেউ বলছিলেন গ্যানডালফের কথা, কেউবা ডাম্বলডর। লর্ড অব দ্য রিংস বা হ্যারি পটার সিরিজে যারা মত্ত না, তারা তুলছিলেন সাতোশি নাকামোতোর (বিটকয়েনের অজ্ঞাত প্রতিষ্ঠাতা) নামও। তবে দিন শেষে দেখা গেল, তিনি আসলে সান্তা ক্লজ। জাদুর ভেলকিতে সবাইকে শুধু মুগ্ধ করেননি, হতবাক করে আবার হারিয়ে গেছেন তিনি।
৬৯ বছর বয়সী ভ্লাদিমির করজিনিন গত নভেম্বরে এমনই চমক জাগিয়েছেন যে পোকার জগত এখনো সেটা সামলে উঠতে পারছে না। ট্রাইটন সিরিজ অব সুপার হাই রোলারে অংশ নিতে এসে এই এস্তোনিয়ান নিজের পরিচয় দিয়েছেন আবিষ্কারক হিসেবে। এবং কয়েক দিনের মধ্যে ৮০ লাখ ডলার (৯৫ কোটি টাকারও বেশি) জিতে আবার আড়ালে চলে গেছেন।
কয়েক মাস আগেও পোকার জগতে অপরিচিত এক নাম ছিলেন করজিনিন। হাই স্টেক পোকারে তরুণদেরই দাপট, এবং মধ্যবয়সী যারা আছেন, তাঁরাও তারুণ্যেই প্রবেশ করেছেন এই জগতে। সেখানে সত্তর ছুঁইছুঁই বয়সে একজন অপেশাদারের ট্রাইটন সিরিজের মতো বড় টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া এবং সব বিশেষজ্ঞের চোখ কপালে তুলে এভাবে জিতে যাওয়া অবিশ্বাস ছড়াচ্ছে।
এ বছর পোকার খেলতে শুরু করেছেন, গত নভেম্বরের এই টুর্নামেন্টের আগে খুব কমই বড় টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। নিজ দেশ এস্তোনিয়ায় কিছু ছোট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন বলে শোনা গেছে। অবশেষে সাইপ্রাস ও বার্সেলোনায় হাই স্টেক টুর্নামেন্টে নাম লিখিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করেছেন। ৫০ হাজার ও এক লাখ ডলার দিয়ে অংশ নেওয়া সে টুর্নামেন্টগুলোতে কিছুই করতে পারেননি। শুধু ১০ হাজার ডলার মিস্ট্রি বাউন্টিতে তৃতীয় হয়ে ৪৫ হাজার ৮০০ ডলার পেয়েছিলেন।
সে টুর্নামেন্টই নতুন কিছুর শুরু। করজিনিন নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি আসলে পোকারের কিছু বোঝেন না, আনন্দের জন্য খেলছেন। ওই টুর্নামেন্টে মিস্ট্রি বাউন্টিতে দ্বিতীয় হয়েছিলেন পেশাদার পোকার খেলোয়াড় আলেকসেই পোনাকভস। ট্রাইটনে পোকারে করজিনিন নিজে অ্যামেচার বিভাগে অংশ নিয়ে নিমন্ত্রণ পাঠালেন লাটভিয়ান পোনাকভসকেও।
পোনাকভস আমন্ত্রণ রক্ষা করেছেন, কিন্তু গল্পে তার অংশ এখানেই শেষ। বাকিটা শুধু করজিনিন অথবা সান্তা ক্লজের।
২ লাখ ডলারের অংশগ্রহণ ফি দিয়ে অংশ নেওয়া টুর্নামেন্টে প্রথম দিনে পেশাদাররা শুধু পেশাদারদের বিপক্ষে খেলে, অ্যামেচাররা খেলেন অ্যামেচারদের টেবিলে। এবং সবার আগে নিজের টেবিল থেকে বাদ পড়ে যান করজিনিন!
আবার নতুন করে ২ লাখ ডলার দিয়ে টুর্নামেন্টে ঢোকেন এবং অনলাইনে স্ট্রিম হওয়া এই টুর্নামেন্টে দর্শকদের সব আকর্ষণ নিজের দিকে টেনে নেন। হাসিখুশি বৃদ্ধ, সাদা দাড়িতে সত্যি সত্যি ডাম্বলডর বা গ্যানডালফের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন। আর সঙ্গের প্রতিযোগীদের সঙ্গে আচরণে মনে করিয়েছেন সান্তা ক্লজের কথা।
হাসি ঠাট্টা করেছেন, অন্যদের পোশাকের প্রশংসা করেছেন। নিজের চাল দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন মজার ছলে।
প্রথমদিন তাই টুর্নামেন্টের দুই ধারাভাষ্যকার তাঁর সঙ্গে গ্যানডালফ নাকি ডাম্বলডরের সঙ্গে বেশি মিল এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দিন শেষে তাঁর নাম দাঁড়িয়েছে গ্যাম্বলডর!
প্রথম দিন ৩১ হাজার ডলার পুরস্কার পাওয়া করজিনিন জাদুকরের মতোই খেলেছেন এরপর। তাঁর প্রথাবিরোধী চাল ও আচরণের কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছিলেন না কেউ। বিশেষজ্ঞ প্যানেলে থাকা অনেক পেশাদার পোকার খেলোয়াড়ও ব্যাখ্যা দিতে পারছিলেন না তাঁর ‘অল ইন’, ‘কল’ আর ‘ফোল্ডিং’য়ের। ২ লাখ ডলারের টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় হয়ে জিতেছেন ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। কিন্তু সেখানেই থামেননি।
ট্রাইটন সিরিজের একদম শেষ নো লিমিট ইভেন্টের অংশগ্রহণ ফি ছিল দেড় লাখ ডলার। মন্টে কার্লোর এবারের টুর্নামেন্টে এবার ফাইনাল স্টেজটা ছিল এমনিতেই চমক জাগানো। একদিকে ভ্লাদিমির করজিনিন। অন্যদিকে ফিনল্যান্ডের ওসি কেতোলা।
২৬ বছর বয়সী কেতোলাও একদিক থেকে করজিনিনের মতো। এক মাস আগেও কখনো কোনো পোকার টুর্নামেন্টে দেখা যায়নি এই ধনকুবেরকে। অথচ পোকারে সবচেয়ে বেশি আয় করা ১৫ জন খেলোয়াড়ের চারজন ছিলেন এই ইভেন্টে। বিশ্বসেরা সব পোকার খেলোয়াড়দের টপকে দুই অপেশাদারই টিকে ছিলেন।
কিন্তু সাদা ফারের টুপি পরা কেতোলা পোকারের স্বাভাবিক নিয়ম মেনে খেলতে গিয়েই ধরা পড়লেন। নিজের ইচ্ছেমত খেলা করজিনিনের কাছে হেরে গেলেন। তাতে ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারের প্রথম পুরস্কার গেল এস্তোনিয়ানের কাছে। আর কেতোলা দ্বিতীয় হয়ে পেয়েছেন ২৯ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
সবাইকে অবাক করে টুর্নামেন্ট জিতেও বিস্ময়ের ভাণ্ডার শেষ হয়নি ভ্লাদিমিরের। মাত্র জেতা ট্রফিটা কেতোলার হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমার ঘরে জায়গা নেই এটা রাখার!’
পুরো সপ্তাহ চেষ্টা করেও ভ্লাদিমিরের কোনো সাক্ষাৎকার নেওয়া যায়নি। শুধু জানা গেছে তিনি এস্তোনিয়ায় থাকেন এবং তিনি একজন গণিতবিদ। যদিও পোকার খেলায় কোনোরকম হিসেব নিকেশ না করে মনের আনন্দে খেলতে দেখা গেছে তাঁকে।
একটু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে স্টক ট্রেডিংয়ের ওপর গবেষণায় তিনটি প্যাটেন্ট আছে তাঁর। এবং টুর্নামেন্ট শেষ হতেই আড়ালে চলে গেছেন। তবে যাওয়ার আগে নিজের পরিচয়টা জানিয়ে গেছেন।
টুর্নামেন্টের ভেন্যুর হোটেলের নোটপ্যাডের তিনটি পাতায় একটা বার্তা দিয়ে গেছেন। তাতে পোকারে জেতার কৌশল লিখে গেছেন ভ্লাদিমির,
‘পোকারে সাফল্য পাওয়ার রহস্য।
তুমি যদি জিততে না চাও এবং অন্য সবার চেয়ে ভালো হওয়ার চেষ্টা না কর, তাহলে তুমি হারবে না।
সান্তা জয়টা জাদুকরী ওসিকে (কেতোলা) দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিল সান্তা, কিন্তু জীবন ঠিকই একটা রসিকতা করে বার্তা দিল, সবাইকে সমান চোখে দেখে সে।
(ইতি) ভ্লাদিমির সেজে আসা সান্তা!’
হারলেও ওসি কেতোলা আজীবন গল্প করতে পারবেন, তাঁকে হারাতে স্বয়ং ‘সান্তা ক্লজ’ এসেছিলেন!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।