জুমবাংলা ডেস্ক : ‘জাতীয় পার্টি এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়’—মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস বলেছেন, ‘এই দল বিক্রি হয়ে গেছে। দলের কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। গরু-ছাগলের মতো জাপা একটি খামারে পরিণত হয়েছে।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে জাপার ভেতরে। জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) এমন মন্তব্য করেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া পরাজিত সব প্রার্থীকে আগামীকাল রবিবার ঢাকায় ডেকেছেন জাতীয় পার্টির বিক্ষুব্ধ নেতারা। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মনোনয়ন বাণিজ্য, প্রার্থীদের খোঁজখবর না নেওয়া, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা না দেওয়াসহ বিতর্কিত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে গত বুধবার থেকে বিক্ষোভে নেমেছে জাপার একটি অংশ। একাংশের চলমান বিদ্রোহে দলে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে দলটি। গতকাল শুক্রবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের আহ্বান ছাড়া কেউ যেন ঢাকায় কোনো বৈঠকে অংশ না নেন।
অন্যদিকে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে জাপা। গতকাল পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জাপার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
অব্যাহতির প্রতিক্রিয়ায় সুনীল শুভ রায় বলেন, “মিডিয়া সূত্রে জানতে পারলাম, কাদের-চুন্নু পরিচালিত ‘জাতীয় পার্টি’ নামের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমার কাছে এই অব্যাহতিপত্র কচুপাতার চেয়েও মূল্যহীন।”
জানা গেছে, বহিষ্কারের তালিকায় রয়েছে আরও অন্তত ১০ কেন্দ্রীয় নেতার নাম। সব মিলিয়ে আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি। বর্তমানে জাপায় চারটি ধারা রয়েছে। এর মধ্যে একটি জি এম কাদেরের নেতৃত্বে। অন্যটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। আরেক পক্ষে আছেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আরেকটি পক্ষ তৈরি হলো।
নির্বাচন কেন্দ্র করে শীর্ষ নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়া নেতারা বলছেন, তারা ইতোমধ্যে সারা দেশের জাপার প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনে যারা হেরেছেন, তারাও এই বৈঠকে যোগ দেবেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে জাপা গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তারা আরও জানান, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাইরে কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা বৈঠকে অংশ নেবেন। পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও শফিকুল ইসলাম সেন্টু।
নির্বাচনের পর জাপা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে গত বুধবার দলের বনানী কার্যালয় ঘেরাও করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। পুলিশি বাধায় তারা ভেতরে ঢুকতে না পেরে বাইরে সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যে সরে না দাঁড়ালে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন নেতাকর্মীরা। যার ধারাবাহিকতায় আগামীকাল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
জানতে চাইলে জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব সহিদুর রহমান টেপা বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে নানাভাবে প্রতারণার শিকার হওয়া নেতাদের রবিবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ডাকা হয়েছে। সবার কথা শোনা হবে। বিক্ষোভ করায় অনেককেই অব্যাহতি দেওয়া শুরু হয়েছে। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। কারণ দল তো কারও বাপ-দাদার সম্পত্তি না! তাই ভয় দেখানো ঠিক হবে না।’
জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘আমি বহিষ্কারের ভয় পাই না। সবাইকে ডেকেছি। কথা শুনব। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’
এদিকে দলের ভাঙন ঠেকাতে জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জাপা। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আহ্বান ছাড়া অন্য কারও আহ্বানে কেউ কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ না করতে কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে দলটি। গতকাল দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পার্টির সব স্তরের নেতাদের কোনো কুচক্রী মহলের অবৈধ ও অসাংগঠনিক প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করা হলো।
একটি সূত্রে জানা গেছে, জি এম কাদেরের সঙ্গে থাকা দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন রওশনপন্থিরাও। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রওশনপন্থিদের কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। নিজের অনুসারী ৬০ জনকে মনোনয়ন দিতে জিএম কাদেরের কাছে তালিকা পাঠিয়েছিলেন রওশন এরশাদ। সেই তালিকায় তিনজনের বাইরে আর কারও ব্যাপারে সম্মতি দেননি জি এম কাদের। এ কারণে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান রওশন। তার অনুসারীদের মধ্যে তিনজন স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করলেও বিজয়ী হতে পারেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।