জুমবাংলা ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। রোববার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ নূরুল আলমের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে জানানো হয়, ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিতসহ ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত এবং বহিষ্কারও করা হয়েছে।
শনিবার (৩ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন এলাকায় বহিরাগত ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলে মামলা হয়। এ প্রেক্ষিতে প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানকে আজ বিকেল থেকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এবং তার সনদ স্থগিত করা হয়েছে।
তাকে সহযোগিতাকারী একই বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মুরাদ হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার ও সনদ স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
অভিযুক্তকে পালাতে সহায়তা করার নির্দেশদাতা একই বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ পরান এবং পালাতে সহায়তাকারী উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের মোঃ সাব্বির হাসান সাগর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এ এস এম মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী ও মোঃ হাসানুজ্জামানের সনদ স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া পালাতে সহায়তাকারী সাগর, মনোয়ার ও হাসানুজ্জামানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের তিনজনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ছাড়া সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে সিন্ডিকেট আরও কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেগুলো হলো-
১. ইতোমধ্যে যাদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে তাদের এবং অবৈধভাবে হলে অবস্থানরত অন্যান্য শিক্ষার্থী ও পোষ্যদের আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে হল ত্যাগ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে বলা হয়েছে। হল ত্যাগ না করলে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
২. ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৩. ভাসমান দোকান সরিয়ে দিতে নিরাপত্তা ও এস্টেট শাখাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৪. ক্যাম্পাসে অনুমোদনহীন অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিরাপত্তা শাখা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগমের আদালত তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান। অপরদিকে আসামি পক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করা হয়। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডে পাঠানোর আবেদন আমলে নেওয়া হয়।
রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, ৪৬তম ব্যাচের মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী সাগর সিদ্দিকী, ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর ও ৪৫তম ব্যাচের হাসানুজ্জামান।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ভুক্তভোগীর স্বামী রাতেই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মারধর ও আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এখনও পলাতক রয়েছেন অপর দুই আসামি। তারা হলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মুরাদ ও ভুক্তভোগীর স্বামীর পূর্বপরিচিত মামুনুর রশিদ। মামুনুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। পরে সেখানে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনুর রশীদ মামুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।