নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এসে বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা আট দলের আসন সমঝোতা। দফায় দফায় বৈঠক হলেও একক প্রার্থী নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট লিয়াজোঁ কমিটি। বরং শেষ মুহূর্তে এসে জটিলতা আরও ঘনীভূত হয়েছে।
শেষ মুহূর্তে এসে আসন সমঝোতা নিয়ে জটিলতায় পড়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ আট দল। সংশ্লিষ্ট লিয়াজোঁ কমিটি একাধিকবার বৈঠক করলেও একক প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সমাধানে আসতে পারেনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আসন চাহিদা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হওয়ায় এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী আসন না পেলে এই দুই দল সমঝোতা প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে গিয়ে আলাদা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গঠনের ইঙ্গিতও দিয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, এ ধরনের কঠোর অবস্থানের পেছনে কোনো বিশেষ মহলের আশ্বাস থাকতে পারে। ফলে সমঝোতার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে।
এদিকে, আট দলের এই জটিলতার মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিতে এনসিপির পক্ষ থেকেও অন্তত অর্ধশত আসনের প্রত্যাশার কথা জানানো হয়েছে। সমঝোতা হলে অন্য দলগুলোকেও আরও ছাড় দিতে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া আরও কয়েকটি দল আসন সমঝোতার জন্য যোগাযোগ করছে বলেও জানা গেছে। সব মিলিয়ে জামায়াত সংশ্লিষ্ট এই নির্বাচনি সমঝোতা প্রক্রিয়া ঘিরে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে, যা আসন্ন নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্রমতে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা ও বাংলাদেশ ডেভলেপমেন্ট পার্টি। ইসলামী দলগুলোর ভোট একবক্সে নিয়ে সরকার গঠনেরও টার্গেটে এগোতে চায় তারা। তবে শেষ মুহূর্তে এসে আসন সমঝোতা নিয়ে জটিলতায় সেই উদ্যোগ প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের চাহিদা মতো আসন সমঝোতা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। অন্যদের চাহিদা পূরণ করলে জামায়াতের আসন অনেক কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পেলে এই প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে বিকল্প সিদ্ধান্ত এবং আলাদা প্লাটফর্ম করারও চিন্তা রয়েছে কয়েকটি দলের।
জামায়াতকে হাতে রেখে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় এনসিপিজামায়াতকে হাতে রেখে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় এনসিপি
তবে জামায়াতসহ সব দলই এখনো চায় সমঝোতার ভিত্তিতেই নির্বাচন হোক। এক্ষেত্রে জামায়াতকেই বেশি ছাড় দেওয়ার কথা বলছেন অন্যরা। আগামীকাল শনিবারের মধ্যে এ বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে সমাধানের আশা করছেন কেউ কেউ। আর এদিন সমাধান না হলে মনোনয়ন ফরম প্রত্যাহার পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তবে আট দলের আসন সমঝোতার বিষয়টি ভালোভাবে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আট দলের সমন্বয়ক ড. হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, জামায়াতের কাছে কোনো আসন নেই, আসন সবার। আট দলের সবাই ছাড় দিবে, সবাই মিলেই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাব।
তিনি আরো বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এনসিপির সঙ্গেও আলোচনা-যোগাযোগ হচ্ছে। আরো ডজন খানেক দল যোগাযোগ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন শতাধিক আসন দাবি করছে। আর মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের চাওয়া কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ আসন। খেলাফত মজলিসের অপরাংশও বেশ সংখ্যক আসন চাইছে। এসব দলের চাহিদা পূরণ করে জামায়াতের আসন সংখ্যা অনেক কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াত অন্তত দুইশ আসনে নির্বাচন করতে চায়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে বেশ জটিলতা বিরাজ করছে।
সূত্রমতে, একটি বিশেষ মহল থেকে ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে আলাদা জোট করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এতে তাদের নির্ধারিত আসনে অতীতের পাতানো নির্বাচনের মতো জয়ের আশ্বাসও দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। যে কারণে এসব দল জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারে।
এনসিপির সঙ্গে জোট নিয়ে যা বললেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলএনসিপির সঙ্গে জোট নিয়ে যা বললেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
এমনই আভাস দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের একজন সহকারী মহাসচিব জানান, তারা ১২০টি আসনে সমঝোতা করতে চেয়েছেন। এরমধ্যে শতাধিক আসন লাগবেই। তবে এনসিপি যুক্ত হলে জুলাই যোদ্ধাদের দল হিসেবে কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসকে ২০টি, খেলাফত মজলিসকে ১৫টি, খেলাফত আন্দোলনকে ৪ থেকে ৫টি, নেজামে ইসলাম পার্টি ২ থেকে ৩টি, জাগপা একটি এবং বিডিপিকে দুটি আসন দিলেই হয়। সেক্ষেত্রে জামায়াত দেড়শ আসন নিলে সমস্যা হবে না। আর তারা যদি ১৮০ থেকে ১৯০ আসনে অনড় থাকে তাহলে হিসাব ভিন্ন দিকে যেতে পারে।
তবে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, আসন সমঝোতার বিষয় নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। এনসিপিকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আরো কিছু দল আসতে চাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য একটু সময় লাগছে।
আপনাদের দল কাঙ্খিত আসন পাচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু কোন জোট হয়নি, এখানে পাওয়া না পাওয়ার কোন কিছু নেই। কারো কাছে চাওয়ারও কিছু নেই। কাকে কোথায় দিলে ভাল হয়-সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সবকিছু সমঝোতার ভিত্তিতেই হচ্ছে, এখনো কোন জটিলতা হয়নি। অন্য কোন চিন্তাও স্পষ্ট হয়নি। আমরা সব দিক খেয়াল রেখেই এগোচ্ছি।
বিএনপি বা অন্য কোন মহল থেকে কোন প্রস্তাব বা চাপ আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির থেকে কয়েকদিন আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বলেছে, আপনাদের জন্য আমাদের দুয়ার খোলা আছে, আসলে আসতে পারেন। তবে যেহেতু আমরা একটা ঘোষণা দিয়েছি, সেটা বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমাদের জিম্মাদারি আছে। আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সমঝোতা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এক শীর্ষ নেতা বলেন-আমরা আট দলের আসন সমঝোতা ও ঐক্য অটুট রাখতে চাই, তবে তা অবশ্যই আমাদের দলের সম্মান-মর্যাদা বজায় রেখে। এজন্য জামায়াতকেই বেশি ছাড় দিতে হবে। সম্মানজনক আসন না পেলে বিকল্প চিন্তা করা হবে।
সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত দলটির কাঙ্খিত আসনের ৬০ ভাগের মত পূরণ বা সমাধান হয়েছে। অন্তত ৮০ ভাগ পূরণ হলে সম্মানজনক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, প্রত্যেকটা দলের আসন সংখ্যার চাওয়া-পাওয়ার সমাধান করা নিয়ে দেরি হচ্ছে। আমরা চাই সুষ্ঠু ও সম্মানজনক একটা সমাধান হোক। দুইএকদিনের মধ্যে এ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হবে।
তবে শেষ পর্যন্ত আসন সমঝোতা নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, আসন সমঝোতা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি, আলোচনা চলছে। ২৭ তারিখ পর্যন্ত সময় আছে, আলোচনার। কিছু আসনে সমঝোতা হয়েছে, বাকিগুলো মনোনয়ন জমার পরও হতে পারে। তবে সবাই তাদের কাঙ্খিত আসন চায়, আবার ঐক্যটাও ধরে রাখতে চায়। তাই এই ঐক্য ভাঙার কোন আশঙ্কা আছে বলে মনে হয় না। কিছু জটিলতা থাকলেও ঐক্য অটুট এমনকি আরো বড় পরিসরে হতে পারে।
বিএনপি বা অন্য কোন মহলের প্রস্তাব বা চাপ আছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে দেওয়া হয়েছিল, এখন কোন প্রস্তাব পাইনি। অন্য কোন দলও এই ঐক্য থেকে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে বলে মনে হয় না। তবে এ নিয়ে কিছু গুজব আবার কিছু উস্কানি দেওয়া হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



