নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার কৃষক মোঃ লিয়াকত আলী। প্রতি বছর বরবটি চাষ করলেও তেমন একটা লাভ করতে পারেননি। এবার বরবটির ফলন দেখেই তার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি।
ফলন ভালো হলে যে কোনও সবজি চাষে লাভ করা যায়-এমনটাই মনে করেন টেকনাফের বড় হাবীবপাড়ার এই কৃষক।
লিয়াকত আলী জানান, এবার তিনি ইস্পাহানি জিনজিয়াং-১৮২০ জাতের বরবটি চাষ করেছেন। প্রচুর ফলন হয়েছে। প্রতিটি বরবটি দুই হাতেরও বেশি লম্বা। যেমন লম্বা তেমন ফলন। এর আগে বরবটির এমন ফলন হয়নি।
‘আমার মতে যত বরবটির জাত আছে নিঃসন্দেহে সেরাদের সেরা জাত হবে ইস্পাহানি জিনজিয়াং-১৮২০। কারণ এটির ফলন সব থেকে বেশি। কৃষকরা এই জাতের বরবটি চাষে লাভ করতে পারবেন। আমি এটি আগস্টের শুরুতে রোপন করেছিলাম,’ যোগ করেন তিনি।
বরবটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। সারা বছরই এই সবজি চাষ করা যায়। বরবটির ভালো ফলন পেতে হলে সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক জাত চাষ করতে হয়।
আসুন জেনে নিই যেভাবে বরবটি চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যাবে-
মাটি: দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি বরবটি চাষের জন্য উপযোগী।
জাত নির্বাচন: কেগরনাটকীই অনেকদিন পর্যন্ত বরবটি একটি উন্নত জাত হিসেবে চাষ হয়ে আসছে। এখন অবশ্য বেশ কয়েকটি জাত চলে এসেছে। লাল বেণী, তকি, ১০৭০, বনলতা, ঘৃতসুন্দরী, গ্রীন লং, গ্রীন ফলস এফ১, সামুরাই এফ১ ইত্যাদি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত। তবে কৃষকদের মতে ইস্পাহানি জিনজিয়াং-১৮২০ বর্তমানে একটি ভালো জাত।
কেগরনাটকী জাতটি পৌষ-মাঘ মাস ছাড়া সারা বছরই চাষ করা যায়। মধ্য মাঘ থেকে মধ্য আশ্বিনে চাষ করা যায় ঘৃতসুন্দরী, গ্রীন লং। মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য আশ্বিন পর্যন্ত চাষ করা যায় ১০৭০ জাতটি। উল্লেখিত জাতগুলোর মধ্যে কেগরনাটকী ও লাল বেণী জাতটিরও ফলন ভালো হয়। তবে খেতে ভালো ঘৃতসুন্দরী।
সময়: বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সাধারণত বীজবপন করা হয়। তাছাড়া আশ্বিন-অগ্রাহায়ণ মাসেও বীপবপন কর হয়। অন্যান্য সময়ও বোনা যেতে পারে।
বীজের পরিমাণ: প্রতি শতকে ১০০-১২৫ গ্রাম, হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি।
জমি তৈরি: ৪ – ৫ টি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে জমি তৈরি করতে হয়।
সারের পরিমাণ: প্রতি শতকে প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া ১০০ গ্রাম ২৫০ কেজি, টি এস পি ৯০ গ্রাম ২২৫ কেজি, এমওপি ৭৫ গ্রাম ১৮৫ কেজি, গোবর ২০ কেজি ৫ টন ।
সার প্রয়োগ: গোবর, টিএসপি সম্পূর্ণ পরিমাণ ও অর্ধেক এমওপি সার শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। পরে বীজ বোনার ২০ দিন পর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার জমিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপন: ২ মিটার দূরত্বে সারি করে ২৫-৩০ সেমি. দূরে দূরে বীজ বুনতে হয়। জাত হিসেবে সারির দূরত্ব ১ মিটার বাড়ানো বা কমানো যায়।
যত্ন: চারা বড় হলে মাচা বা বাউনি দিতে হবে। জমিতে পানির যাতে অভাব না হয় সে জন্য প্রয়োজন অনুসারে সবসময় সেচ দিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। পোকামাকড় ও রোগ ব্যবস্থাপনা শিমের মতই। জাব পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকা ও মোজেইক রোগ বরবটি চাষের বড় সমস্যা।
ফসল সংগ্রহ : বীজ বোনার ৫০ – ৬০ দিন পর থেকেই বরবটি সংগ্রহ করা যায়। শতক প্রতি ফলন ৩০ – ৬০ কেজি, হেক্টর প্রতি১০ – ১২ টন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।