জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর অপসারণ ও তার মরণোত্তর বিচারসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে ‘মায়ের কান্না’।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
এ সময় তৎকালীন বিমানবাহিনীর কর্পোরাল লরেন্স রোজিও জেমস বলেন, বিনাবিচারে শত শত বিমানবাহিনী সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। প্রথমে ফাঁসি দিয়েছে, পরে রায় প্রকাশ করেছে। আইনকে তোয়াক্কা করা হয়নি। জিয়াউর রহমান জঘন্যতম কাজ করেছেন। স্বাধীন দেশেও বিচারবহির্ভূত হত্যার পর লাশ পরিবারকে দেওয়া হয়নি। দেড়-দুই হাজার লোক গুম করা হয়েছে। ৭৭ বছরেও আমরা এর সুবিচার পাইলাম না। তিনি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি করেন।
১৯৭৭ সালের এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কর্পোরাল নূরুল ইসলাম বলেন, আমরা কয়েকজন বেঁচে আছি। বাকিদের ফাঁসি হয়ে গেছে। আমাকে অমানসিক নির্যাতন করেছে। চোখ হাত-পা বাঁধা ছিল। চার বছর সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনিও জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন। এ ছাড়া যারা মারা গেছেন ও বেঁচে আছেন তাদের সবার জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান।
কর্পোরাল গোলাম মাওলা হিরু বলেন, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর জিয়ার ষড়যন্ত্রের শিকার হই। দীর্ঘ সময় আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমাকে ২০ বছর কারাদণ্ড দিয়ে জেলে রাখা হয়েছে। আমি অন্যায়ের বিচার দাবি করি।
তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেওয়ার আগে আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা আইনজীবী নিয়োগের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ এই মানুষগুলোকে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে দীর্ঘদিন পরিবারগুলোর কাছে এই তথ্য অজানা ছিল। জানা ছিল না কোথায় তাদের কবর।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হওয়া ১২১ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। কুমিল্লা কারাগারে ৭২ জনের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। বগুড়া কারাগারে ১৬ জন, রংপুরে সাত জনের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। কিন্তু বিমানবাহিনী সদর দপ্তরের হিসাবে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর পরবর্তী সময়ে ৫৬১ জন সৈনিক নিখোঁজ হয়েছেন। যাদের কখনোই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলমের সঞ্চালনায় মায়ের কান্নার সভাপতি মো. কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত সদস্য এবং ফাঁসি দেওয়া সদস্যদের পরিবারবর্গ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেছে মায়ের কান্না। দাবিগুলো হলো-
১. ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর তথাকথিত সামরিক বিদ্রোহ দমনের নামে যাদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তাদের কোথায় সমাহিত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই স্থান চিহ্নিত করে দিতে হবে।
২. জিয়া কর্তৃক যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তাদের নামের তালিকা প্রকাশ এবং শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
৩. অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেওয়া, কারাদণ্ড এবং চাকরিচ্যুত সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের, স্ব-স্ব পদে সর্বোচ্চ র্যাংকে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা, পেনশনসহ পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন ও সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. জিয়ার মরণোত্তর বিচার করতে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
৫. জিয়ার কবর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় মায়ের কান্না সংগঠনের সদস্যরা কবর অপসারণের প্রাথমিক কাজ শুরু করবেন।
রওশনপন্থিদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হলেন কাজী ফিরোজ রশীদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।