বিপুল পরিমান টাকা ও অবৈধ অস্ত্রসহ আটক হয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর নিকেতনে তার ব্যবসায়িক কার্যালয় জি কে বিল্ডার্স থেকে শামীমকে আটক করা হয়।
এ সময় তার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে নগদ ১০ কোটি টাকা, বিপুল পরিমানে এফডিআর ও ডলার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) জব্দ করে র্যাব।
দেশের অনলাইন ভার্সনে এ খবর প্রকাশের পর প্রশ্ন উঠেছে কে এই শামীম? রাজনীতিতে তার প্রভাব কতটুকু? কীভাবে তার উত্থান?
জানা গেছে, রাজধানীর প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবেই পরিচিত এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় তিনি একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার।
তবে তিনি এখন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক।
তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আফসার উদ্দিন মাস্টার।
নিম্ম মধ্যবিত্ত ঘর থেকে উঠে এসে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক তিনি। বনানীর ডিওএইচএসে বিলাশবহুল বাড়িতে থাকেন শামীম।
আর গুলশান নিকেতনে ৫ নম্বর সড়কের ১৪৪ নম্বর ভবনটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন শামীম।
জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি।
সাধারণ জনগণের কাছে অতেটা পরিচিতি না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিচিতি পান শামীম।
সেই নির্বাচনে শামীম আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে প্রচারণাও চালিয়েছিলেন।
তবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলছেন ভিন্ন কথা। যুবলীগের নন, জি কে শামীম যুবদলের সাবেক সহ-সম্পাদক বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, যুবলীগে শামীমের কোনো পদ নেই। তিনি নিজেই নিজেকে সমবায়বিষয়ক সম্পাদক বলে বেড়ান। এ নিয়ে যুবলীগে কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে। তাকে কয়েকবার এমন মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে বলাও হয়েছে।
বাবলু আরও দাবি করেন, জিকে শামীম এক সময় যুবদলের সাবেক সহসম্পাদক ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বলে শুনেছি।
বাসাবো ও এজিবি কলোনির কয়েকজন বাসিন্দা গণমাধ্যমকে জানান, বর্তমানে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ওয়ার্ড যুবদলের মাধ্যমেই রাজনীতি শুরু করেন শামীম। পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। এ সময় ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদকের পদ হাতিয়ে নেন।
সে সময় বিএনপির বড় বড় নেতাদের ছবিসহ সবুজবাগ-বাসাবো এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীমের ব্যানার-পোস্টার শোভা পেত বলে জানান এজিবি কলোনির বাসিন্দারা।
বিএনপির নেতাতাদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। বিএনপি আমলে গণপূর্ত ভবন তার দখলে ছিল।
এ সময় শামীম রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হয়ে ওঠেন।
কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলে শামীম যুবলীগে ভিড়েন। টাকা ও প্রভাব খাটিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন। বর্তমান তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা।
এখন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবিসহ শামীমের পোস্টার-ব্যানার ঝুলছে।
ক্ষমতায় পরিবর্তন এলেও শামীমের ভাগ্যে সুপ্রসন্নই থেকে গেছে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে যেভাবে দাপটের সঙ্গে গণপূর্তে ঠিকাদারি ব্যবসায় একক আধিপত্য ছিল তার, আওয়ামী সরকারের আমলেও একইভাবে রাজত্ব করে যাচ্ছেন এই যুবলীগ নেতা। ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী সবসময় ঘিরে থাকত শামীমকে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তার বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন অনেকে।
আজ শুক্রবার তাকে আটক করেছে র্যাব। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর নিকেতনে তার ব্যবসায়িক কার্যালয় জিকে বিল্ডার্স থেকে শামীমকে আটক করা হয়।
এর আগে বেলা ১২টা থেকে তার কার্যালয়টি ঘিরে রাখেন র্যাব সদস্যরা। এর পর ভেতরে অভিযান চালান তারা।
অভিযানের পর অবৈধ অস্ত্রসহ শামীমকে আটক করে র্যাব। এ সময় জিকে বিল্ডার্স থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা ও মাদক জব্দ করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাবের দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
র্যাবের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অভিযানে শামীমের কার্যালয় থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নগদ ১০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণে এফডিআর ও ডলার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) জব্দ করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে শামীমের ৬ দেহরক্ষীকে নিজেদের হেফাজতে নেয় র্যাব।
জিকে বিল্ডার্সের কর্মচারী দিদারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর নিকেতনে শামীমের ব্যবসায়িক কার্যালয় জিকে বিল্ডার্সে র্যাবের একটি দল এসে তার ৬ বডিগার্ডকে তুলে নিয়ে যায়।
ভোরবেলা সিটি কর্পোরেশনের লোক বলে র্যাব শামীমের কার্যালয়ে ঢোকে বলে জানার দিদারুল ইসলাম। পরে র্যাব পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
র্যাব-১ সূত্রে জানা গেছে, শামীমের দেহরক্ষীদের থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র লাইসেন্সকৃত কিনা তা যাচাই করা হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং) এএসপি মিজানুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে গণমাধ্যমকে কিছুই জানাতে পারছি না। পরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।