একে একে মঞ্চে উঠে আসছে প্রতিযোগীরা। মন-প্রাণ উজাড় করে গাইছে। গান গাওয়া শেষ করে তাকিয়ে থাকছে বিচারকদের দিকে; গায়কি নিয়ে কী বলেন তারা? কেমন হলো নিজের গাওয়া গানটি? সব কিছু ঠিকঠাক ছিল তো? এমন কিছু প্রশ্ন মনে দোলা দিচ্ছে তাদের। একটু ভয়, কিছুটা সংশয় আর প্রতিযোগিতার পরবর্তী পর্বে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে কিনা–তা নিয়ে কতই না কৌতূহল তাদের চোখেমুখে। এই দৃশ্য সানিয়া সুলতানা লিজার নিত্যদিনের; যেদিন থেকে তিনি রিয়েলিটি শো ‘আরটিভি লিটল স্টার-আগামীর কণ্ঠস্বর’-এর বিচারকের আসনে বসছেন।

সংগীত প্রতিভা অন্বেষণে খুদে প্রতিযোগীদের গায়কি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হচ্ছে। সেই ক্ষণে হয়তো মনে পড়ে যাচ্ছে, ১৭ বছর আগের দিনগুলোর কথা। যখন লিজা নিজেও ছিলেন রিয়েলিটি শো ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’-এর প্রতিযোগী। নিজের সেরা গায়কি তুলে ধরার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হয়েছিল একেকটি ধাপ। চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছে জয় করে নিয়েছিলেন সেরা প্রতিযোগীর মুকুট। আসলেই কি সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে, যখন তিনি নিজেই একটি রিয়েলিটি শোর বিচারক?
এ প্রশ্ন করতেই লিজা হেসে বলেন, সেই সময় আর ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার কথা কী ভুলে থাকা সম্ভব? মনে হয় না। সেই সময় আর সাফল্যের হাত ধরেই তো আমি আজকের লিজা। শিল্পী জীবনের সেই অধ্যায় কখনও ভুলে থাকা সম্ভব নয়। সত্যি বলতে কী, শুরু থেকেই ‘আরটিভি লিটল স্টার-আগামীর কণ্ঠস্বর’-এর প্রতিযোগীদের মাঝে নিজের ছায়া দেখতে পাচ্ছি। সে জন্যে ঘরে আরও একবার দিনলিপির এপিঠ-ওপিঠ উল্টে দেখি। প্রতিদিন ডুবে যাই স্মৃতি রোমন্থনে। লিজার এ কথা থেকে বোঝা যায়, পেছনের দিনগুলো এখনও সুখস্মৃতি হয়ে আছে তাঁর মনে। হয়তো সেই অতীত সাফল্য পুঁজি করেই পথচলা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিনিয়ত নতুন সব আয়োজন তুলে ধরছেন শ্রোতার কাছে।
মাতৃত্বের স্বাদ নিতে সংগীতে ছোট্ট একটি বিরতি নিয়েছিলেন লিজা। সেই সময় কেউ কেউ ভেবেছিলেন, হয়তো গানের ভুবনে আর দেখা মিলবে না ‘পাইলি সুরাইয়া’খ্যাত মঞ্চ মাতানো এই শিল্পীর। শ্রোতার সেই ভুল ভাঙতে দেরি হয়নি, যখন চোখে পড়েছে, আর নতুন সব আয়োজন নিয়ে ফিরে এসেছেন লিজা। শুধু তাই নয়, বিরতি শেষে আরও জোর কদমে পথচলা শুরু করেছেন এই তারকা শিল্পী। ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে যাচ্ছেন নানা স্বাদের গান। এই যেমন ক’দিন আগে প্রকাশ করেছেন, আরেকটি শ্রুতিমধুর গান, যা অল্প সময়ে শ্রোতার মনোযোগ কেড়েছে। তাঁর গাওয়া ‘নেই অধিকার’ শুনে অনেকের মত, এই গানে তারা লিজাকে আরও নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন। এই গানের আগেও লিজা শ্রোতার ভালোবাসা কুড়িয়েছেন দুই ক্লোজআপ ওয়ান তারকা কিশোর দাস ও মুহিনের সঙ্গে গাওয়া দুটি দ্বৈত গানে কণ্ঠ দিয়ে।
কিশোর দাসের সঙ্গে গাওয়া ‘ও প্রিয় ভালোবাসা নিও’ এবং মুহিন ও তাঁর দ্বৈত ‘তোমার নামে’ দুটি গানই মেলোডি সুরের নিখাদ রোমান্টিক গান। আবার সমসের সঙ্গে গাওয়া ‘তিতা কথা’ ছিল পুরোপুরি হিপজগ ঘরানার।
অন্যদিকে অপুর সঙ্গে গাওয়া ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’ গানে উঠে এসেছে স্বদেশপ্রেমের অনুভূতি। সব মিলিয়ে লিজা প্রমাণ করেছেন তিনিও সময়ের ভার্সেটাইল শিল্পীদের অন্যতম একজন। যে কারণে সিনেমা, নাটকের প্লেব্যাক থেকে শুরু করে অডিও গান এবং মঞ্চ ও টিভি আয়োজনে ভেসে বেড়াচ্ছে তাঁর কণ্ঠস্বর।
লিজার কথায়, এখন যে গানগুলো গাইছেন, তার সবই সমকালীন শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণের কথা মাথায় রেখে গাওয়া। এ ছাড়া চেষ্টা করে যাচ্ছেন, গায়কিতে প্রতিনিয়ত নিজেকে ভেঙে আরও নতুনভাবে তুলে ধরার। লিজার এই কথার সঙ্গে যে শ্রোতারাও একমত হবেন, তা বলাই বাহুল্য।
এক প্রতিযোগিতার আসর থেকে নিজ প্রতিভা তুলে ধরে কীভাবে সময়কে জয় করা যায়, ১৭ বছরের পথপরিক্রমায় তার অন্যতম উদাহরণ হয়ে উঠেছেন সানিয়া সুলতানা লিজা। যে কারণে ‘ভালোবাসি বলা হয়ে যাক’, ‘আসমানি’, ‘প্রাণ জুড়ে’, ‘এক যমুনা’, ‘পাগলী সুরাইয়া’, ‘এক বৃষ্টিতে’, ‘তোমার স্মৃতিটুকু’, ‘পাখি’, ‘চাই তোমায়’, ‘ফেরেনা হারানো দিনগুলো’, ‘ভালোবাসা নয় সেকি’, ‘যতনে’, ‘পূর্ণিমা চাঁদ’, ‘বাবা তুমি আমার’ শুরু করে এই শিল্পীর অন্য গানগুলো এখনও মুখে মুখে ফেরে শ্রোতার। তবে এ নিয়ে অহংবোধ নেই লিজার। বরং বিষয়টিকে শিল্পীজীবনের অন্যতম প্রাপ্তি বলেই মনে করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



