ঢাকার গলিতে গলিতে সন্ধ্যা নামে। এক যুবক, রিফাত, তার ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে শহরের নিষ্প্রভ আলোকে দেখছে। ক্যারিয়ারে উন্নতি, টাকার পাহাড়, সামাজিক স্বীকৃতি – সবই আছে। তবুও হৃদয়ে এক গভীর শূন্যতা, এক অস্থির অন্ধকার। হঠাৎ তার দৃষ্টি পড়ে স্টাডি রুমের বইয়ের তাকে ধুলো জমে থাকা কুরআন শরীফের কপিটির দিকে। স্মৃতিতে ভেসে ওঠে শৈশবে দাদুর কণ্ঠে তিলাওয়াতের মধুর ধ্বনি। সেই সুরে কি এই শূন্যতার জবাব লুকিয়ে আছে? হাত বাড়ালো সে। পাতা উল্টাতে উল্টাতে চোখ আটকে যায় সূরা আর-রাদের ২৮ নং আয়াতে: “যারা ঈমান আনে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে শান্তি লাভ করে। জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।” সেই মুহূর্ত ছিল জীবন পরিবর্তনে পবিত্র কুরআনের উপদেশ-এর সন্ধান পাওয়ার এক নিবিড় সূচনা। রিফাতের মতো অসংখ্য মানুষ, যাদের জীবন যান্ত্রিকতার কঠিন খাঁচায় বন্দী, তাদের মুক্তির পথ দেখায় এই ঐশী গ্রন্থের আলোকচ্ছটা।
জীবন পরিবর্তনে পবিত্র কুরআনের উপদেশ: একটি গভীর দার্শনিক অনুসন্ধান
জীবন পরিবর্তনে পবিত্র কুরআনের উপদেশ কেবল কিছু বিচ্ছিন্ন নির্দেশনার সমষ্টি নয়; এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, একটি গতিশীল রূপান্তরের দর্শন। কুরআন আমাদের শেখায় যে প্রকৃত পরিবর্তন শুরু হয় অন্তর থেকে (ক্বলব), তারপর তা প্রকাশ পায় আচরণ, কথাবার্তা এবং সামাজিক সম্পর্কে। সূরা আল-আনফালের ২ নং আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে: “মুমিন তো তারাই, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তখন তাদের অন্তর ভীত হয় এবং যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে।” এখানেই নিহিত রয়েছে রূপান্তরের প্রথম সূত্র: আল্লাহর স্মরণে অন্তরের প্রশান্তি ও আত্মিক শক্তির উন্মেষ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে দ্রুত নগরায়ণ, অর্থনৈতিক চাপ এবং সামাজিক অস্থিরতা মানুষের মানসিক শান্তিকে ব্যাহত করছে, সেখানে কুরআনের এই উপদেশ এক অমূল্য জীবনরক্ষাকারী বর্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদন উল্লেখ করে যে, যারা নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত ও অর্থ নিয়ে চিন্তা করেন, তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এটি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয় নয়; এটা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত মানসিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণের কৌশল।
কুরআনিক দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন পরিবর্তন একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া:
- ব্যক্তিগত রূপান্তর (তাযকিয়া): সূরা আশ-শামসের ৯-১০ নং আয়াত: “নিশ্চয়ই সফলকাম হয়েছে সে, যে নিজেকে পবিত্র করেছে। এবং ব্যর্থ হয়েছে সে, যে তাকে কলুষিত করেছে।” এখানে ‘পবিত্রতা’ বলতে শিরক, কুপ্রবৃত্তি (নাফসের নেতিবাচক দিক), হিংসা, অহংকার পরিহার করে তাওহীদের আলোকে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা বোঝায়।
- পারিবারিক ও সামাজিক রূপান্তর: সূরা আন-নিসার ১ নং আয়াতে বলা হয়েছে: “হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি (আদম) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সঙ্গীনিকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দু’জন থেকে বহু পুরুষ ও নারী বিস্তার করেছেন…” এ আয়াত পারিবারিক বন্ধন, সমতার ভিত্তিতে সুস্থ সামাজিক কাঠামো গড়ার উপদেশ দেয়। বাংলাদেশে পারিবারিক কলহ, দাম্পত্য অশান্তি, যৌতুকের বলি হওয়া নারীর করুণ পরিণতি – এসব সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি এই ঐক্য ও সম্মানের শিক্ষায় নিহিত।
- আর্থিক ও নৈতিক রূপান্তর: সূরা আল-বাকারার ১৮৮ নং আয়াত সতর্ক করে: “তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভক্ষণ করো না।” এটি সুদ, ঘুষ, জালিয়াতি, মুনাফাখোরি বন্ধ করে ন্যায়ভিত্তিক ও দায়িত্বশীল অর্থনৈতিক আচরণের নির্দেশনা দেয়। বাংলাদেশে আর্থিক অসততা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কুরআনের এই নৈতিক ভিত্তি অপরিহার্য।
বাস্তব জীবনে কুরআনের আলো: বাংলাদেশের মানুষের সফল রূপান্তরের গল্প
জীবন পরিবর্তনে পবিত্র কুরআনের উপদেশ শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা নয়; বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের জীবনেই এর প্রাণবন্ত উপস্থিতি লক্ষণীয়। চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী, জাহিদ হোসেন, যার জীবন কাটছিল কেবল মুনাফার পেছনে ছুটে। এক পর্যায়ে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েন জালিয়াতি ও সুদের সাথে। মানসিক অশান্তি তাকে গ্রাস করে। একদিন স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছ থেকে শুনলেন সূরা আল-বাকারার ২৭৫ নং আয়াত: “আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” এই আয়াত তার অন্তরে প্রবল আঘাত হানে। তিনি সুদভিত্তিক লেনদেন ছেড়ে দিয়ে, সততার সাথে হালাল ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। প্রথমদিকে আর্থিক ক্ষতি হলেও আজ তার ব্যবসা সুনাম ও বরকতের সাথে চলছে, যা তার কাছে জীবন পরিবর্তনে পবিত্র কুরআনের উপদেশ-এর এক জীবন্ত প্রমাণ।
সিলেটের এক তরুণী, তাহসিনা আক্তার। উচ্চশিক্ষিতা হওয়া সত্ত্বেও প্রচণ্ড হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব তাকে পিছু ছাড়ছিল না। কুরআনের সূরা আল-ইনশিরাহর বার্তা – “নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে” (আয়াত ৫-৬) – তাকে নতুন করে বাঁচার সাহস যুগিয়েছে। সে নিয়মিত কুরআন অধ্যয়ন শুরু করে, এর তাফসীর পড়ে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রেখে নিজের দক্ষতা বিকাশে মনোযোগ দেয়। আজ সে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার এবং স্থানীয় মেয়েদের জন্য মেন্টর।
বাংলাদেশে কুরআনভিত্তিক জীবনদর্শনের প্রভাব পরিমাপের কিছু চিত্র:
- মানসিক স্বাস্থ্য: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সহায়তায় পরিচালিত “কুরআন ও মানসিক সুস্থতা” শীর্ষক গবেষণায় (২০২২) দেখা গেছে, কুরআন তিলাওয়াত ও ধ্যান (তাফাক্কুর) নিয়মিত অনুশীলনকারী ৭২% অংশগ্রহণকারী তাদের উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন।
- সামাজিক সংহতি: কুমিল্লা ও রাজশাহীতে কুরআনের শিক্ষা ভিত্তিক কমিউনিটি সেন্টারগুলো পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সূরা আল-হুজুরাতের ১০ নং আয়াত: “মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই” – এই নীতির উপর ভিত্তি করে স্থানীয় পর্যায়ে ঐক্য গড়ে উঠছে।
- যুব সমাজের পুনর্বাসন: ঢাকা, খুলনা ও রংপুরে বেশ কিছু সংগঠন কুরআনের নৈতিক শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে মাদকাসক্ত যুবকদের পুনর্বাসনে সফলতা পেয়েছে। সূরা আল-মায়িদার ৯০-৯১ নং আয়াতে মাদককে ‘শয়তানের কাজ’ বলা হয়েছে – এই স্পষ্ট বার্তা অনেককে ধ্বংসের পথ থেকে ফিরিয়েছে।
প্রতিদিনের জীবনে কুরআনের উপদেশ বাস্তবায়নের কৌশল: একটি ব্যবহারিক গাইড
জীবন পরিবর্তনে পবিত্র কুরআনের উপদেশ শুধু জ্ঞানের বিষয় নয়; এটা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগের বিষয়। এখানে কিছু বাস্তবসম্মত কৌশল:
- অর্থসহ নিয়মিত তিলাওয়াত ও প্রতিফলন (তাদাব্বুর): প্রতিদিন অল্প কিছু আয়াত (এক পৃষ্ঠা বা একটি রুকু) পড়ুন, বাংলা তাফসীর (অর্থ ও ব্যাখ্যা) সহ। শুধু তিলাওয়াত নয়, ভাবুন এই আয়াত আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা পেশাগত জীবনে কী বার্তা দেয়? উদাহরণ: সূরা আল-আসরের শিক্ষা – সময়ের সদ্ব্যবহার, সৎকর্ম, সত্যের উপদেশ ও ধৈর্যের শিক্ষা প্রতিদিনের কাজে কীভাবে প্রয়োগ করা যায়?
- নির্দিষ্ট আয়াতকে ‘লাইফ মন্ত্র’ বানানো: নিজের চ্যালেঞ্জের সাথে মিল রেখে নির্দিষ্ট আয়াত বেছে নিন। যেমন:
- দুশ্চিন্তা বা ভয় পেলে: সূরা আত-তালাকের ৩ নং আয়াত: “আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেন।”
- ধৈর্য হারালে: সূরা আল-বাকারার ১৫৩ নং আয়াত: “হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।”
- সিদ্ধান্তহীনতায়: সূরা আল-ইমরানের ১৫৯ নং আয়াত: “আর তাদের সাথে পরামর্শ কর কাজকর্মের ব্যাপারে…”
এই আয়াতগুলো বারবার পড়ুন, মুখস্থ করুন এবং প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতিতে স্মরণ করুন।
- নেক আমলকে অভ্যাসে পরিণত করা: কুরআন যা করতে বলে (সত্য বলা, আমানতদারিতা, দান করা, সালাত কায়েম করা, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার) এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলে (মিথ্যা, গীবত, ঘুষ, অপচয়) – তা ধাপে ধাপে নিজের অভ্যাসে পরিণত করুন। ছোট্ট লক্ষ্য দিয়ে শুরু করুন।
- জ্ঞানার্জন ও সম্প্রদায়ের সাথে সংযুক্ত থাকা: নির্ভরযোগ্য উলামা ও মুফাসসিরদের তাফসীর (যেমন: ড. মুহাম্মদ মুস্তাফা আল-মাদানী, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান) পড়ুন বা শুনুন। স্থানীয় মসজিদ বা বিশ্বস্ত আলেমদের হালকা (জ্ঞানচর্চা পরিষদ) বা দারসে অংশ নিন। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার বা ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রোগ্রামগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
- দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা (ইসতিগফার): কুরআনে অসংখ্য দোয়া শেখানো হয়েছে। সূরা আল-বাকারার ২০১ নং আয়াতের দোয়া: “হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।” নিয়মিত দোয়া ও ইসতিগফার অন্তরের কঠোরতা দূর করে এবং রিজিক ও সমাধানের দরজা খুলে দেয়।
জেনে রাখুন : জীবন পরিবর্তনে কুরআনের ভূমিকা সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্ন
জীবন পরিবর্তনে পবিত্র কুরআনের উপদেশ বিষয়ে মানুষের মনে কিছু সাধারণ প্রশ্ন জাগে। এখানে তারই কিছু উত্তর:
- প্রশ্ন: কুরআন শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের কথাই বলে, বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান দেয় কি?
উত্তর: একেবারেই দেয়। কুরআন শুধু ইবাদতের কথাই বলেনি, এটি অর্থনীতি (সুদ-ঘুষ নিষেধ, জাকাত), সামাজিক ন্যায়বিচার (সম্পদের সুষম বণ্টন, নারী-পুরুষের মর্যাদা), রাজনীতি (পরামর্শভিত্তিক শাসন), পারিবারিক আইন (বিবাহ, উত্তরাধিকার, দাম্পত্য অধিকার) এবং ব্যক্তিগত নৈতিকতা (সততা, ধৈর্য, ক্ষমা) সম্পর্কে বিস্তারিত ও বাস্তবসম্মত নির্দেশনা প্রদান করে। ব্যক্তিগত সংকট থেকে সামাজিক সমস্যা – সবকিছুর সমাধানের সূত্র রয়েছে কুরআনের মৌলিক নীতিমালায়। - প্রশ্ন: কুরআন বুঝতে হলে কি আরবি শেখা বাধ্যতামূলক? বাংলা অনুবাদ বা তাফসীর দিয়ে কি উপকৃত হওয়া সম্ভব?
উত্তর: আরবি ভাষায় কুরআনের পূর্ণাঙ্গ মাধুর্য ও সূক্ষ্মতা উপভোগ করা যায়, তবে এর শিক্ষা ও হিদায়াত লাভের জন্য বাংলা অনুবাদ ও বিশুদ্ধ তাফসীরই যথেষ্ট। আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজেও বিভিন্ন গোত্রের কাছে তাদের ভাষায় কুরআনের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ মুস্তাফা আল-মাদানী, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া প্রমুখের বাংলা তাফসীরগুলো অত্যন্ত সহজবোধ্য ও প্রাজ্ঞ। নিয়মিত বাংলা তাফসীর অধ্যয়ন করেই কুরআনের গভীর জ্ঞান ও জীবন পরিবর্তনের উপদেশ অর্জন করা যায়। - প্রশ্ন: কুরআনের উপদেশ শুনি, কিন্তু জীবনে বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেক বাধা আসে। কী করব?
উত্তর: এটাই স্বাভাবিক। শয়তান ও নফসের কুমন্ত্রণা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, পুরনো অভ্যাস – এগুলো বাধা সৃষ্টি করবেই। এজন্য:- ধৈর্য ধরুন (সবর): পরিবর্তন রাতারাতি হয় না। (সূরা আল-আসর)
- ক্ষুদ্র লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: একসাথে সবকিছু পাল্টানোর চেষ্টা না করে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন।
- নিয়মিত দোয়া ও ইস্তিগফার করুন: আল্লাহর সাহায্য চান এবং ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। (সূরা আল-বাকারা: ২৮৬)
- সৎ সঙ্গ লাভ করুন: যারা কুরআনের পথে চলতে চায়, তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ুন। (সূরা আল-কাহফ: ২৮)
- নিজের উপর খুব কঠোর হবেন না: ভুল হবে, কিন্তু হতাশ না হয়ে পুনরায় চেষ্টা চালিয়ে যান। আল্লাহ ক্ষমাশীল।
- প্রশ্ন: কুরআন কি জীবনের প্রতিটি ছোটখাটো সিদ্ধান্তের জবাব দিতে পারে?
উত্তর: কুরআন একটি বিস্তৃত নীতিনির্ধারক গ্রন্থ। এটি প্রতিটি সুনির্দিষ্ট, আধুনিক প্রযুক্তিগত বা জটিল বিশেষায়িত সমস্যার বিস্তারিত সমাধান হয়তো সরাসরি দেয় না (যেমন: কোন মোবাইল ফোন কিনব, কোন চাকরিটি নেব, কিভাবে একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যার প্রোগ্রাম করব)। কিন্তু এটি সেই নৈতিক, দার্শনিক ও মূল্যবোধের ভিত্তি প্রদান করে, যার উপর ভিত্তি করে মুসলিম ব্যক্তি বা সমাজ যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমন: সততা, আমানতদারিতা, ইনসাফ, অপরের ক্ষতি না করা, হালাল-হারাম বিবেচনা – এই নীতিগুলো যে কোন পেশা বা সিদ্ধান্তে প্রয়োগ করা যায়। বিস্তারিত ফিকহী বিষয়ের জন্য নির্ভরযোগ্য আলেম ও মুফতিদের রায় (ফতোয়া) এবং যুক্তিবাদী ইজতিহাদের প্রয়োজন হয়। - প্রশ্ন: জীবন পরিবর্তনের জন্য কুরআন অধ্যয়নের সর্বোত্তম পদ্ধতি কী?
উত্তর:- সদিচ্ছা (নিয়্যত): একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও হিদায়াত লাভের উদ্দেশ্যে শুরু করুন।
- অর্থসহ ধীরে ধীরে পড়ুন: প্রতিদিন অল্প করে (১/২ পৃষ্ঠা, ১ রুকু) বাংলা অনুবাদ ও সহজ তাফসীর (যেমন: তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন) সহ পড়ুন।
- প্রতিফলন (তাদাব্বুর): পড়ার সময় থামুন, ভাবুন এই আয়াত আমার জীবনে কী প্রভাব ফেলতে পারে?
- আমলে পরিণত করার চেষ্টা: পড়ার সাথে সাথে অন্তত একটি শিক্ষা নিজের জীবনে প্রয়োগের চেষ্টা করুন।
- সহায়ক গ্রন্থ ও আলোচনা: নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ, আলেমদের বক্তব্য শুনুন, জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করুন।
- স্থিতিশীলতা: অল্প হলেও নিয়মিত চর্চা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
জীবন পরিবর্তনে পবিত্র কুরআনের উপদেশ কোনো বিমূর্ত ধারণা নয়; এটি এক গতিশীল, প্রাণবন্ত ও সর্বব্যাপী রূপান্তরের প্রক্রিয়া, যা প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে আমাদের ডাকে। রিফাতের গল্প শুধু একটি উদাহরণ; বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে, শহরের বস্তিতে, গ্রামের মেঠোপথে, অফিসের কক্ষে, ক্লাসরুমে – অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন এই ঐশী আলোর স্পর্শে নিজেদের অন্ধকার দূর করছে, হতাশার জাল কাটছে, ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগাচ্ছে, ন্যায়ের পথে ব্যবসাকে পুনরুজ্জীবিত করছে। কুরআন আমাদের শুধু স্রষ্টার সাথে সম্পর্কই পুনঃস্থাপন করে না, আমাদের নিজেদের সত্তার গভীরতম স্তর, আমাদের পারিপার্শ্বিকের সাথে আমাদের সম্পর্ক এবং আমাদের ভবিষ্যতের দিশাও পুনর্বিন্যাস করে। এটি একটি নিরন্তর যাত্রা, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর সাহায্য ও করুণা আমাদের সাথী। আপনার রূপান্তরের গল্প লেখার সময় এখনই। আজই আপনার হাতের কাছে থাকা সেই মহাগ্রন্থটিকে খুলে বসুন, অন্তরের খোলা মন নিয়ে এর পৃষ্ঠা উল্টান। একটি আয়াত, একটি সূরার শিক্ষাকে নিজের জীবনে ধারণ করার দৃঢ় সংকল্প করুন। কারণ, জীবন পরিবর্তনে পবিত্র কুরআনের উপদেশ কেবল অতীতের কথা নয়, এটি আপনার বর্তমানের মুক্তি ও ভবিষ্যতের সাফল্যেরই সনদ। শুরু করুন, আল্লাহ আপনার সহায় হোন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।