সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২০২৪ সালের ৯ জুলাই (মঙ্গলবার) সারাদেশে পালন করা হয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ‘গণসংযোগ’ কর্মসূচি। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের পক্ষে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালান।
এর আগে দু’দিন ধরে দিবসের নির্দিষ্ট সময় জুড়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালিত হলেও, মঙ্গলবার আন্দোলনের ছন্দ ছিল কিছুটা ভিন্ন। এদিন সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা গণসংযোগ, মিছিল, সড়ক অবরোধ এবং সমাবেশে অংশ নেন। সেইসঙ্গে ঘোষণা আসে, পরদিন বুধবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশে দ্বিতীয় ধাপের সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ পালিত হবে।
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন শহরে চলে ‘গণসংযোগ’। এদিন দুপুরে মানববন্ধন করেন বুয়েটের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকালে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শেষে ৫টি ছাত্রী হলে গণসংযোগ চালান। রাজশাহী কলেজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জসহ আরও বহু এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন।
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়ক আধা ঘণ্টা বন্ধ থাকে। চট্টগ্রামে ষোলশহর রেলস্টেশনে রেললাইন অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, এতে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে যায় প্রায় আধাঘণ্টা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্যারিস রোডে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শেষে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। হবিগঞ্জ শহরের কেন্দ্রস্থলে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল।
বিকেল সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। সেখানে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম পরদিন ১০ জুলাই সারাদেশে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বাত্মক বাংলা ব্লকেড পালনের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শাহবাগ মোড়ে।
নাহিদ বলেন, ‘এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নিজেরা আসেনি, সরকার নিশ্চুপ থাকায় তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছে। কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় আন্দোলন জারি রাখতে হচ্ছে। আমরা কোটা বাতিল চাই না, অনগ্রসর শ্রেণির জন্য ৫-১০ শতাংশ কোটা রেখে বাকি অংশ রদ করতে চাই।’
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলে ২০১৮ সালে সরকার একটি পরিপত্র জারি করে। কিন্তু ২০২৪ সালের জুনে হাইকোর্ট এক রায়ে সেই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করলে ফের চালু হয় ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা। এরপর থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়পাড়া। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন রূপ নেয় সারাদেশব্যাপী কর্মসূচিতে। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটিও ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ৯ জুলাই সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে রিট দায়ের করেন। তবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংবাদ সম্মেলনে জানায়, এই রিটকারীরা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
দিনটিতে কোটা আন্দোলন নিয়ে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এটি এখন সর্বোচ্চ আদালতের বিষয়, রাজপথে আন্দোলন করে এর সমাধান হবে না।’ অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাকর্মীদের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।