বিশ্বের প্রথম ‘জেটা-ক্লাস’ সুপারকম্পিউটার নির্মাণ শুরুর পরিকল্পনা করেছে জাপান। প্রস্তাবিত এই সুপারকম্পিউটার বর্তমান যেকোনো সুপারকম্পিউটারের চেয়ে ১ হাজার গুণ দ্রুত কাজ করবে। এই সুপারকম্পিউটার নির্মাণের কাজ শুরু হবে ২০২৫ সালে।
প্রযুক্তি খাতে সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালনের চেষ্টা করে জাপান। এটা তারই অংশ। এই সুপারচার্জড কম্পিউটার নির্মাণে ব্যয় হতে পারে ৭৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। জাপানের কম্পিউটার প্রকৌশলীদের ধারণা, এই জেটা-ক্লাস সুপার কম্পিউটার জাপানকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এর মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন দেশগুলোর শুরুর দিকে জায়গা করে নিতে চায় দেশটি। ২০৩০ সালের মধ্যে সুপারকম্পিউটারটি কর্মক্ষম ও ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে বলে করছেন প্রকৌশলীরা।
নতুন এই সুপারকম্পিউটার জেটাফ্লপস (zetaFLOPS) গতি অর্জন করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই গতি আগে কখনো কোনো কম্পিউটার অর্জন করতে পারেনি। জেটাফ্লপস কম্পিউটিং ক্ষমতা পরিমাপের একটি একক। একটি কম্পিউটার এক সেকেন্ডে কয়টি গাণিতিক কাজ (অপারেশন) করতে পারে, এই একক তা নির্দেশ করে। এখানে ফ্লপস হলো ফ্লোটিং-পয়েন্ট অপারেশনস পার সেকেন্ড। ১ জেটাফ্লপস গতির সুপারকম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে এক সেক্সটিলিয়ন (১০২১) গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারবে।
বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারগুলো এক্সাফ্লপস (exaFLOPS) গতিতে চলে। মানে এসব কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে এক কুইন্টিলিয়ন (১০১৮) গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে পারে। বুঝতেই পারছেন, জেটাফ্লপস সুপারকম্পিউটার কতটা দ্রুত গতিসম্পন্ন হতে চলেছে।
জাপানের কাছে ইতিমধ্যে ‘ফুগাকু রিগ’ নামে একটি অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন সুপারকম্পিউটার রয়েছে। এর গতি ০.৪৪ এক্সাফ্লপস। এক সময় এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ফ্রন্টিয়ার সুপারকম্পিউটার এই রেকর্ড ভেঙে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির সুপারকম্পিউটারের রেকর্ড করে। ওটার গতি ১.২ এক্সাফ্লপস। জাপানের ফুগাকু বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার।
জাপান এখন তাদের জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার নির্মাণের মাধ্যমে আবার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারের মুকুট নিজেদের করতে চায়। ফুগাকুর উত্তরসূরী হিসেবে নতুন নির্মিতব্য কম্পিউটারটির নাম দেওয়া হবে ‘ফুগাকু নেক্সট’। জাপানের বিখ্যাত প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফুজিৎসু এবং রিকেন গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে এটি নির্মিত হবে। এই প্রতিষ্ঠান দুটিই আগের ফুগাকু সুপারকম্পিউটার নির্মাণ করেছিল।
নতুন সুপারকম্পিউটার তৈরির পরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ওটা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা এবং এর ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করা। ২০২৩ সালে ‘এইচপিসিওয়্যার’ নামে একটি প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনকার প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার তৈরি করলে তা চালাতে প্রায় ২১টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমান বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োজন হবে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হলে এবং অন্য কোনো দেশ জাপানের আগে জেটা-ক্লাস সুপারকম্পিউটার তৈরি না করলে তাহলে ফুগাকু নেক্সটই হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দ্রুতগতির কম্পিউটার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।