ধর্ম ডেস্ক: শুক্রবার (২ আগস্ট) বাংলাদেশের আকাশে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামী ১২ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যে যার সাধ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন। সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এই বিধান শীথিল করা হয়েছে। অর্থাৎ, কিছু মানুষের জন্য কোরবানি ওয়াজিব নয়। আসুন জেনে নিই কাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব, কাদের ওপর নয়।
মাসআলা : কোরবানির দিনগুলোতে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি সোনা, সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি রুপা বা ওই পরিমাণ রুপার সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজনাতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্য আসবাবপত্রের মালিক হলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (মাবসূতে সারাখসী ১২/৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৬৫)
মাসআলা : সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজনাতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায় তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। যেমন কারো নিকট কিছু স্বর্ণ ও কিছু টাকা আছে, যা সর্ব মোট সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্যের সমান হয় তাহলে তার ওপরও কোরবানি ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার ৫/২১৯)
উল্লেখ্য যে, কোরবানির নেসাব পূর্ণ হওয়ার জন্য যাকাতের ন্যায় সম্পদের ওপর বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়, শুধু কোরবানির তিন দিন নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়াই যথেষ্ট। এমনকি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণেও নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গলে কুরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬২)
মাসআলা : প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নর-নারী, যে যিলহজ মাসের ১০ তারিখ সুবহে সাদিকের সময় থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনাতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে এবং ওই ব্যক্তি উক্ত তিন দিন সময়ে মুসাফিরও না হয়, তবে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৩)
মাসআলা : নাবালেগ শিশু-কিশোর ও অসুস্থ মস্তিষ্ক ব্যক্তি নেসাবের মালিক হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। হ্যাঁ, তাদের অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষ থেকে নফল কোরবানি করতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬)
মাসআলা : শিশু-কিশোরদের সম্পদ থেকে কোরবানি করা হলে তা থেকে কেবল সে-ই খেতে পারবে, অন্য কেউ তা খেতে পারবে না। (আদ্দুরুল মুখতার মাআর রাদ্দিল মুহতার ৬/৩১৭)
মাসআলা : কোরবানির দিনগুলোতে মুসাফির থাকলে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়্যাতে যে ব্যক্তি নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয় না। ১২ যিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বমুহূর্তে মুকীম হলেও সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে। ( ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৩)
মাসআলা : কোরবানির সময়ের প্রথম দিন মুসাফির থাকলেও পরে তৃতীয় দিন কোরবানির সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতঃপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব থাকবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯)
মাসআলা : হাজি সাহেবানদের মধ্যে যারা কোরবানির দিনগুলোতে মুসাফির থাকবেন, তাঁদের ওপর ঈদুল আযহার কোরবানি ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজি কোরবানির কোনো দিন মুকীম থাকবেন, সামর্থ্যবান হলে তাঁর ওপর ঈদুল আযহার কোরবানি করা ওয়াজিব হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার মাআর রাদ্দিল মুহতার ৬/৩১৫)
মাসআলা : একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের ওপর ভিন্ন ভিন্ন কোরবানি ওয়াজিব হবে। (কিফায়াতুল মুফতী ৮/১৭
মাসআলা : দরিদ্র ব্যক্তি যে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয় তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়; তবে সে কোরবানির নিয়্যাতে পশু খরিদ করলে ওই পশুটি কোরবানি করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬২)
মাসআলা : কোরবানি সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে করতে হবে। হারাম টাকা দ্বারা কোরবানি করা সহীহ নয় এবং এ ক্ষেত্রে অন্য শরীকদের কোরবানিও সহীহ হবে না। (আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫০৩)
মাসআলা : কোরবানির পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে ধনী ব্যক্তির আরেকটি পশু কোরবানি করতে হবে। গরিব (যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়) হলে তার জন্য আরেকটি কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯)
সূত্র: মাসিক আল-আবরার, ফকীহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।